বাংলাদেশের সাংবাদিক মনজুরুল আলম পান্নার গ্রেপ্তারের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সুরক্ষা সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ)। সংস্থাটি বলেছে, শুধুমাত্র এক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেওয়ার কারণে একজন সাংবাদিককে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার করা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত।
মনজুরুল আলম পান্না জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেল মানচিত্রো-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক। তিনি নিয়মিতভাবে সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে ভিডিও রিপোর্ট ও আলোচনার আয়োজন করেন।
গত ২৯শে আগস্ট তিনি ঢাকার ধানমণ্ডিতে অবস্থিত ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)-এর অডিটরিয়ামে এক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেন। সভার আয়োজন করেছিল নাগরিক সমাজভিত্তিক সংগঠন মঞ্চ ৭১, যারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধান বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি নিয়ে কাজ করে।
আলোচনাটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, গণতন্ত্র ও দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে। কিন্তু সভা চলাকালীন ইউনূস সরকারের সমর্থক জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা মব সন্ত্রাসের মাধ্যমে সেখানে ঢুকে বক্তা ও অংশগ্রহণকারীদের ওপর শারীরিক হামলা চালিয়ে তাদেরকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুসারী এবং ফ্যাসিস্টের দোসর আখ্যা দিয়ে মারধর করে।
পান্না নিজেই তখন পুলিশকে ফোন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে হামলাকারীদের না ধরে উল্টো গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেওয়া ১৬ জনকে আটক করে, যার মধ্যে ছিলেন সাংবাদিক মনজুরুল আলম পান্না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
পরে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এর আওতায় “অন্তর্বর্তী সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকা”র অভিযোগ আনা হয়। মানবাধিকার সংস্থা ও সাংবাদিক সংগঠনগুলো এই অভিযোগকে “রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত” ও “অযৌক্তিক” বলে নিন্দা জানিয়েছে।
আরএসএফের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “সাংবাদিক পান্নার গ্রেপ্তার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক প্রবণতা বাড়ছে বলে ইঙ্গিত দেয়। শুধু ইতিহাস ও সংবিধান নিয়ে আলোচনায় অংশ নেওয়ার কারণে একজন সাংবাদিককে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অভিযুক্ত করা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী।”
আরএসএফের দক্ষিণ এশিয়া ডেস্কের প্রধান সেলিয়া মার্সিয়ে বলেন, “পান্নার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তাকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে এবং সাংবাদিকদের ভয় দেখাতে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।”
সংস্থাটি আরও জানায়, এই ঘটনা বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের প্রতি অসহিষ্ণু মনোভাবের স্পষ্ট প্রমাণ।
সংস্থাটি অভিযোগ করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
