ঢাকা, ২ ডিসেম্বর ২০২৫ঃ ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকিকে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে পরিবারের সদস্যদের জন্য প্লট বরাদ্দে ‘প্রভাব খাটানোর’ অভিযোগে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ঢাকার একটি বিশেষ আদালত। অভিযোগে বলা হয়েছে, টিউলিপ তার ‘ব্রিটিশ এমপি পদের প্রভাব’ ব্যবহার করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার একান্ত সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিনের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছেন।
কিন্তু আদালতে এই ‘প্রভাবের’ কোনো লিখিত প্রমাণ, হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের স্ক্রিনশট, অডিও-ভিডিও রেকর্ড বা শেখ হাসিনা-সালাহ উদ্দিনের সাক্ষ্য—কিছুই হাজির করা হয়নি।
রায়ের ভিত্তি মাত্র দুজন সাক্ষীর মৌখিক বক্তব্য। তাদের মধ্যে প্রধান সাক্ষী অবসরপ্রাপ্ত সচিব ওসমান গণি—যিনি শেখ হাসিনার আমলেই চাকরি হারিয়েছিলেন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে বিশেষ বিবেচনায় আবার স্বরাষ্ট্র সচিব পদে নিযুক্ত হন। ওসমান গণির বিরুদ্ধে হিযবুত তাহরীরসহ বিভিন্ন উগ্র সংগঠনের সঙ্গে সংযোগের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। অপর সাক্ষীও সরকারি কর্মকর্তা।
দুজনেরই বক্তব্যে দাবি করা হয়, টিউলিপ হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন অ্যাপে শেখ হাসিনা ও সালাহ উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ‘প্রভাব খাটিয়েছেন’।কিন্তু এই বার্তাগুলো তারা কীভাবে দেখেছেন বা জেনেছেন, তার কোনো ব্যাখ্যা আদালতে দেননি।
রায় ঘোষণার পর দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের জানান, “হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য ইন্টারনেট অ্যাপে যোগাযোগের মাধ্যমে প্রভাব খাটানো হয়েছে।” কিন্তু একজন বিদেশি সাংবাদিকের প্রশ্নে তিনি বিপাকে পড়েন। প্রশ্ন ছিল:
হোয়াটসঅ্যাপের কোনো মেসেজ বা স্ক্রিনশট আদালতে দাখিল করা হয়েছে কি?
কবে, কখন এই চ্যাট হয়েছে?
টিউলিপ কি শেখ হাসিনা বা সালাহ উদ্দিনের সঙ্গে সামনাসামনি বৈঠক করেছেন?
এসব প্রশ্নের সন্তোষজনক কোনো উত্তর দিতে পারেননি দুদক আইনজীবী।
আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এই রায় বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করল। যার মা খালা ছিলেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতায়, সেখানে কেনই বা একজন সচিবকে টিউলিপ সিদ্দিকিকের প্রভাব বিস্তার করতে হবে? এটা কোন যুক্তিতেই আসে না।
“কোনো ডিজিটাল ফরেনসিক প্রমাণ, কোনো টেলিযোগাযোগ রেকর্ড, এমনকি অভিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী বা তার সচিবের বক্তব্যও ছাড়া শুধুমাত্র দুজন সাক্ষীর মুখের কথায় একজন বিদেশি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে সাজা দেওয়া হলো—এটা স্পষ্টতই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত,”
বলছেন সুপ্রিম কোর্টের একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী।
আইনজীবীদের দাবি, এই মামলার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে টিউলিপ সিদ্দিকির সুনাম ক্ষুণ্ণ করা এবং শেখ হাসিনা পরিবারকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করা।এই রায়কে অনেকে ‘ইউনুস প্রশাসনের ক্যাঙারু আদালতের’ আরেকটি উদাহরণ হিসেবে দেখছেন—যেখানে প্রমাণের চেয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাই বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে।
