বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে রাজধানী ঢাকার রাজপথ, মেট্রোরেল স্টেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও বিভিন্ন পাবলিক স্পেসে হঠাৎ করেই ছেয়ে গেছে পাকিস্থানের পতাকার রঙের পোস্টারে। পোস্টারে বড় বড় অক্ষরে লেখা— “No compromise with Rajakar”।
এই পোস্টারগুলো শুধু দেওয়ালে বা বোর্ডে নয়, ইচ্ছাকৃতভাবে মেঝে-ফ্লোরে আটকে দেওয়া হচ্ছে, যাতে যাতায়াতকারী মানুষের পায়ের তলায় পিষ্ট হয়।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী তরুণ প্রজন্মের একাংশ এই পোস্টার ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। তাদের দাবি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের আত্মত্যাগের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসের মতো যুদ্ধাপরাধী বাহিনীর সঙ্গে আপস করা যায় না—এই বার্তাই তারা পোস্টারের মাধ্যমে দিতে চাইছে।
একইসাথে জামায়াতে ইসলামীর মতো যুদ্ধাপরাধী দলের রাজনৈতিক আষ্ফালন, বিভিন্ন টক-শো ও সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে এটা তরুন প্রজন্মের জবাব হিসাবে দেখছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
পোস্টারগুলো পায়ের নিচে ফেলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে তারা প্রতীকীভাবে যুদ্ধাপরাধী ও পাকিস্তানের প্রতি তীব্র ঘৃণা ও অভিব্যক্তি করছে। গত কয়েকদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল, বিজয় ৭১ হল, সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, শাহবাগ মেট্রো স্টেশন, কাওরান বাজার মেট্রো, মিরপুর-১০, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকায় এই পোস্টার দেখা গেছে।
সামাজিক মাধ্যমেও #NoCompromiseWithRajakar হ্যাশট্যাগে ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে। অনেকে একে ‘প্রতিবাদের নতুন ভাষা’ বলছেন, আবার কেউ কেউ বলছেন এটা ‘অসম্মানজনক আচরণ’।
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ছাত্র-তরুণদের একাংশের মতে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি, তার ওপর পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা তাদের আঘাত করছে। তাই তারা এভাবে রাস্তায় নেমেছে। বিজয় দিবসের মাসে এই পোস্টার-যুদ্ধ রাজনৈতিক মাঠকে আবারও উত্তপ্ত করে তুলেছে। আগামী দিনগুলোতে এই প্রতিবাদ আরও জোরালো হবে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
