বিশেষ রির্পোট:
লন্ডন: আবৃত্তি সংগঠন ছান্দসিক মুক্তিযুদ্ধের অগ্নিভাষ্য ‘বীরাঙ্গনা’ পাঠ উপস্থাপন করে গত ২২ ডিসেম্বর।বীরাঙ্গনাদের নির্যাতনের বর্ণনামূলক কথা পাঠ ছাড়াও গান, স্বরচিত কবিতাপাঠ, আবৃত্তি ও মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বকথনের প্রতিবাদী অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল অন্যতম ব্যতিক্রমী আয়োজন।
পূর্ব লন্ডনের কবি নজরুল সেন্টারে এদিন সন্ধ্যায় আয়েজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লন্ডনের বিপুল সংখ্যক সংস্কৃতি ও সুধীজন। ড. নীলিমা ইব্রাহিমের মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের নিয়ে গবেষণাগ্রন্থ ‘বীরাঙ্গনা কথা’, গবেষক অপূর্ব শর্মার লিখিত অনুসন্ধানী ইতিহাস ‘বীরাঙ্গনা কথা’ গ্রন্থের পাঠ এবং বীরাঙ্গনা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষাণীর সাক্ষাতকার থেকে তুলে আনা লোমহর্ষক নির্যাতনের তথ্যকথা পাঠ করেন আবৃত্তিশিল্পী মুনিরা পারভীন, সঙ্গে দেশাত্ববোধাক গান সংযোজন করেন কণ্ঠশিল্পী বিনায়ক দেব জয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় উজ্জীবিত করা সংগ্রামী গান ও বীরাঙ্গনা কথন পাঠে মেলবন্ধনকরা উপস্থাপন ছিল সত্যিকারের অগ্নিভাষ্য। দর্শকশ্রোতা একাগ্রচিত্তে শ্রবণ করেন ঐতিহাসিক কথন।
মুনিরা পারভীনের একক পাঠ বেদনাকাতর সময়কে ধারণকরা এমনই ছিল, হলের উপস্থিত সুধীজনদের নিয়ে যায় দগদগে ক্ষতবিক্ষত একাত্তরের স্মৃতি দৃশ্যে।নির্যাতিতের বেদনা সংক্রামিত হয়ে পড়ে হলময় সকলের হৃদয়ে হৃদয়ে। যন্ত্রশিল্পী অমিত দের সুর সংযোজন আরো অনবদ্য করে তুলে পুরো পরিবেশনা।
গ্রন্থিত মূল অনুষ্ঠান শেষে প্রতিবাদী স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কবি হামিদ মোহাম্মদ। মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক কবিতা আবৃত্তি করেন শাহাব আহমদ বাচ্চু ও আবৃত্তিকার নজরুল ইসলাম অকিব। মানবিকতাকে বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়ার বার্তবাহী লালনগীতি পরিবেশন করেন হুমায়ূন কবির।তার কণ্ঠে ধ্বনিত হয় জাতপাতহীন সমাজের আকাঙ্খা।
এরপর মুক্তিযুদ্ধের সময়কার রণাঙ্গনের কথা বলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান গৌস সুলতান।সুগ্রন্থিত এ অনুষ্ঠান মনে করিয়ে দেয় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিভীষিকাময় নির্যাতন, হত্যা ও বিপন্ন হওয়া মানুষের কাহিনি। তারা বলেন, বাঙালির জীবনের সবচেয়ে ত্যাগ ও বীরত্বের ইতিহাস মহান মুক্তযুদ্ধ আমাদের শ্রেষ্ঠ গৌরব-এ কথাটি নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা বার বার দরকার। তারা সংগঠনের কর্নধার মুনিরা পারভীনের প্রশংসা করে বলেন, বিলাতের মাটিতে ছান্দসিকের এমন উপস্থাপনা জানান দিলো আরেকবার।
এদিকে, রাত ৯টায় অনুষ্ঠান শেষ হলেও শেষ হয়নি মতবিনিময়। উপস্থিত সুধীজন শিল্পে ঋদ্ধ এবং প্রাণের প্রগাঢ় স্পর্শে বন্দিত একটি অনুষ্ঠানে নিজেকে সম্পৃক্ত করার তৃপ্তি ভাগাভাগি করেন একে অন্যের সাথে।রাত সাড়ে ৯টা বেজে গেলেও হল ছাড়ছেন না কেউ। বাংলাদেশের বথৃমান সংকট নিয়ে কথা বলতে বলতে মুক্তিযুদ্ধের মর্যাদা রক্ষার অঙ্গীকার বুকে ধারণ করে বাড়ি ফিরেন সকলে।
উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানের শুরুতে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন ও সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।