।।‘জয় বাংলা’ প্রতিবেদন।।
টিউলিপ সিদ্দিক বাঙালি কন্যা ব্রিটিশ এমপি।চারবারের পার্লামেন্ট সদস্য। তাঁর নির্বাচনী এলাকা শ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত। কিন্তু বার বার এমপি নির্বাচনে জয়লাভ করে বর্তমানে ব্রিটিশ সরকারের সিটি ফাইনান্স মিনিস্টার। শুধু প্রবাসী বাঙালি নয়, সমগ্র বাঙালির গৌরব ও মর্যাদার বিষয়। তাকে নিয়ে ব্রিটেনের সর্বমহলে কৌতুহল রয়েছে। তাকে ভালোবাসেন সকল সম্প্রদায় ও জাতিগোষ্ঠী ব্রিটেনবাসী।
সম্প্রতি বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন হওয়ায় এক শ্রেণীর দেশী-বিদেশী কুচক্রীমহল তাঁর পেছনে নানা কুতসা রটনাসহ অপপ্রচারে উঠেপড়ে নেমেছে। তাঁর দোষ, টিউলিপ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি, শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার কন্য। আর যায় কই?
তাই, একটি চিহ্নিত মহল বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাকে কলংক লিপ্ত করার নাটক সাজাতে গিয়ে টিউলিপের প্রতি দৃষ্টি দিয়েছে। কেন এই কুদৃষ্টি? তাদের বাসনা—যদি কোনো রকম ব্রিটিশ মিডিয়ার মাধ্যমে তাকে অপপ্রচারে বিদ্ধ করে হেনস্থা করা যায়, তবে মজা লোটা যাবে।
কিন্তু, এই মহলের জানা নেই, ব্রিটিশ রাজনীতি এতো ঠুনকো নয়। ব্রিটেনের লেবার পার্টির সদস্য এবং এই দলের নির্বাচিত এমপি টিউলিপ বহু ভালো কাজ করার মাধ্যমে একটি গৌরবজনক অবস্থানে অধিষ্ঠিত। তাকে সহজে নড়াতে বা কলংকিত করতে পারার নাম যে বুমেরাং হতে পারে, সেটা এই কুচক্রী মহলের জানা নেই।
ব্রিটেনের কয়েকটি প্রিন্ট মিডিয়া এদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এই হলুদ সাংবাদিকতায় জড়িয়ে পড়েছে। দেখা গেছে, টিউলিপ ও তাঁর মা-বাবাকে উপহার দেয়া বাড়ি পরবর্তীতে টিউলিপ সন্তান হিসেবে নিজে ব্যবহার করাকে নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। আরও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে—টিউলিপ নাকি রাশিয়া কর্তৃক বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় মধ্যস্থতায় টাকা নিয়েছেন।
আমরা জানি, ‘গোয়েবলসীয়’ অপপ্রচার নামে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান, জাপানী ও ইটালীয় ত্রিপক্ষের একটি অপপ্রচার মাধ্যম যুদ্ধে গুজব রটাতে পারা ঘৃণিত মাধ্যম ইতিহাস হয়ে আছে। অথচ মিথ্যা প্রচারণা যে ধোপে টিকে না, সেটা গুজব চলাকালে অনেকেই বুঝে উঠতে পারে না।
এই ‘গোয়েবলসীয় তত্ত্ব’ এখনো বিশ্বে বিরাজমান্। আর তার মঞ্চায়ন হচ্ছে টিউলিপকে নিয়ে ব্রিটেনে। তাও আবার বাংলাদেশের অপরাজনীতির লম্বা হাত এখানে ক্রিয়াশীল।
বাঙালিরা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি শোষণ ও অপশাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ করে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও স্বাধীন দেশ হিসাবে বিশ্বের বুকে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। তখনও বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে একটি মহল সক্রিয় ছিল। পাক হানাদার বাহিনির পক্ষ নিয়ে সহযোগী হয়ে বুদ্ধিজীবী নিধন, গণহত্যা, ধর্ষণ,লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এরাই লন্ডনে ‘পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি’ গঠন করে ষড়যন্ত্রে মেতেছিল। তখন ব্যর্থ হয়। কিন্তু ৫৩ বছর পর রাজনৈতিক উত্থানপতনের এক পর্যায়ে তাদেরই পেতাত্মা বাংলাদেশের আকাশে বিরাজ করছে। তাদের দোষর পাকিস্তান এখন এদের সাথে হাত মিলিয়ে বলছে ‘বাংলাদেশ নাকি তাদের হারিয়ে যাওয়া ভাই’ ফিরে পেয়েছে। এখন বুঝতে হবে কারা টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে। আবার ‘লন্ডন ষড়যন্ত্র’।
কিন্তু ব্রিটিশ সরকার ও লেবার দলীয় প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার টিউলিপের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,‘টিউলিপের প্রতি আমার বিশ্বাস আছে, আমি জানি-তাঁর খালা শেখ হাসিনার সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য এসব করা হচ্ছে।’ তিনি এও বলেছেন,‘ টিউলিপ নিজে চিঠি দিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের বিষয়ে তদন্তকারী উপদেষ্টাকে তদন্ত করার জন্য অনুরোধ করেছেন, যা অত্যন্ত প্রশংসার যোগ্য।’
টিউলিপ সিদ্দিক সাচ্চা ও সাহসী ব্যক্তিত্ব।তিনি ব্রিটিশ সংশ্লিষ্ট তদন্ত টিম বা প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহবান জানিয়েছেন তদন্ত করার জন্য। টিউলিপ তা মোকাবিলা করবেন। আর এর আগে অপপ্রচারে লিপ্ত ব্রিটিশ গণমাধ্যমটির বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেয়ারও হুমকি দিয়েছিলেন টিউলিপ।এতে কিছুদিন ঘাবড়ে গিয়েছিল তারা, থেমে যায়। আবার নতুন করে মাথাচাড়া দিলে টিউলিপ তদন্তের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন।
অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, টিউলিপ নিজের সততা প্রমাণের জন্য তদন্ত করার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন, এ খবরটা আমাদের কোনো মিডিয়া সাধুবাদ দিয়ে প্রচার করলো না।কেননা, বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে লেখা যাবে, অনুমতি লাগবে না, কিন্তু তাদের সুকর্মের কথা লেখা যাবে না, অনুমতি লাগবে।
ব্রিটিশ অর্থ বিষয়ক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের এই পদক্ষেপে ঐসব কুচক্রীদের গালে প্রথম থাপ্পড়। এরপর তদন্ত রিপোর্ট বের হলে মানুষ ঐ গুজববাজদের মুখে নিশ্চিতভাবে থুথু ফেলবে।