মাহবুব জামান
আজ ২২ জানুয়ারি আজ আমার ৭৫ তম জন্মদিন।। হীরক জয়ন্তী! দেখতে দেখতে ৭৫ বছর চলে গেল! কত আনন্দ-বেদনা,সুখ-দূ:খ,হাসি-কান্না, আন্দোলন-সংগ্রাম, জয়-পরাজয়,সাফল্য-ব্যর্থতা জড়িয়ে আছে এ জীবনে।এটাই জীবন! জন্মের দেড় বছর পর বাবাকে হারিয়েছি,আম্মাকে হারিয়েছি ২০০৭-এ। সাত ভাই বোনের মধ্যে জীবিত আছি আমরা দুজন। একজন স্কটল্যান্ডে আর আমি।শৈশব-কৈশোর কেটেছে ষাটের দশকে। দারুন এক সময়! দশক শুরুর আগ মুহুর্তে আমেরিকার নাকের ডগায় ঘটে গেল কিউবার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব। দশক শেষের আগ মুহূর্তে মানুষ চাঁদে পা রাখলো।
এর মাঝামাঝি পুরো দশক জুড়ে উজ্জীবনের সব গল্প।এশিয়া-আফ্রিকা-ল্যাটিন আমেরিকার দেশে দেশে জাতীয় মুক্তি আন্দোলন। একের পর এক স্বাধীন হচ্ছে দেশ!
দেশের অভ্যন্তরে রবীন্দ্র শত বার্ষিকীতে নিষিদ্ধ করা হোল রবীন্দ্র চর্চা।চারিদিকে প্রতিবাদ।গড়ে উঠলো ছায়ানট। পরবর্তীতে এদের উদ্যোগে রমনা বটমূলে নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠান এবং আজকের মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঘোষিত হোল ছয় দফা-স্বায়ত্বশাসনের আন্দোলন।শেষ হোল উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে।এরই যৌক্তিকতায় মহান মুক্তিযুদ্ধ! দেশ ও বিশ্বের এই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমাদের বানিয়ে দিল যোদ্ধা- মুক্তিযোদ্ধা!
আমরা শোষনহীন সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন দেখলাম। বিপ্লব আমাদের চোখে-মুখে-হৃদয়ে।আমার জীবনের পাঠশালা ছাত্র ইউনিয়ন।আমার প্রথম এবং শেষ রাজনৈতিক দল কমিউনিস্ট পার্টি।
একানব্বই পর্যন্ত রাজনীতিতেই ছিলাম।এরপর থেকে কোন রাজনৈতিক দল করি না। কিন্তু,রাজনীতির বাইরে তো নই! কেউ-ই আসলে রাজনীতির বাইরে নয়।দলের বাইরে থাকতে পারে।
কখনও ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ করি নি।কিন্তু,বঙ্গবন্ধু আমার জীবনের অন্যতম আদর্শ প্রতিষ্ঠান।উনি স্বাধীনতার স্থপতি ,জাতির জনক।
ওনাকে কতবার, কতভাবে যে দেখেছি হিসাব দিতে পারবো না।শেষ দেখাও অর্থাৎ ১৪ আগস্ট সন্ধ্যায়ও আমাদের সাথে। ডাকসুর সুবাদে বন্যা-দূর্ভিক্ষ-শিক্ষা জীবন, রাজনীতি নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর সাথে।এ এক অন্যরকম পাওয়া।এত কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য অনেকেরই হয়নি।
১৯৭৩ সালের পহেলা জানুয়ারি আমাদের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী মিছিলে গুলি করে মতিউল-কাদের হত্যার প্রতিবাদে আমরা বঙ্গবন্ধুর ডাকসুর আজীবন সদস্যপদ বাতিল করেছিলাম।অথচ, পরবর্তীকালে উনি একবারও এ কথা উল্লেখ করেন নি। আমাদের জন্য ওনার সাথে সাক্ষাৎ ছিল অবারিত। উনি আমাদের ডেকে পাঠাতেন।
এ কারনেই সম্ভবতঃ বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম প্রতিবাদ গড়ে তুলেছিলাম আমরা।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটেই একমাত্র বঙ্গবন্ধুর জন্য শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।
একানব্বইয়ের পর আমার নতুন জীবন শুরু হয়।দেশের জন্যই কাজ করবো তবে অন্যভাবে।প্রযুক্তি বিশেষত তথ্যপ্রযুক্তি ও অন্যান্য নানা উদ্ভাবনী উদ্যোগ দিয়ে দেশের তরুন প্রজন্মের অবদান নিশ্চিত করতে হবে।প্রযুক্তির ব্যবহারে জনগনের জীবনে উপকার আনতে হবে।
এজন্যেই কার্ডফোন দিয়ে শুরু।এরপর কাস্টমস হাউজ অটোমেশন ,চট্টগ্রাম বন্দর অটোমেশন, পাটের জন্ম রহস্য উদঘাটন,ক্ষুদ্র ঋণের অপারেশন অটোমেশন ,বন্যার পূর্বাভাসে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ইত্যাদি প্রকল্পের কাজ করেছি।
এখনও বায়ু দূষণ, শব্দদূষণ রোধ, মাছ চাষ ও কৃষি কাজে-সেচে তথ্য প্রযুক্তি ও সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।
আরেকটা কাজ করছি- ‘আমরা একাত্তর’। এটা শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠন নয়, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠন।আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিশালত্ব,ব্যাপকতা, আত্মত্যাগ,সাহস ও বীরত্বের কাহিনী প্রজন্ম-প্রজন্মান্তরে যেন জানা থাকে,সেজন্য গড়ে তুলছি মুক্তিযুদ্ধ বই জাদুঘর ও গবেষণা কেন্দ্র।
আমরা একটা বর্ণাঢ্য জীবন যাপন করলাম।একটি পূর্নাঙ্গ জীবন। কোন খেদ নেই,কোন আক্ষেপ নেই।
পাওয়া-না পাওয়ার কোন হিসাব নেই। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যাতে কাজ করে যেতে পারি-আপনারা সবাই সেই দোয়া করবেন। আপনাদের সকলের জন্য শুভকামনা।