মাহবুবুর রহমান
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলে ক্ষতি কার?-বাংলাদেশের। অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তির?খুশী কার? -সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তি ও তার বিদেশী প্রভুর।
প্রথমে ভাবি, এ সব পাগলের প্রলাপ! পরে দেখি, সরকারের একাধিক হুজুরের কন্ঠে এই খায়েশ! আদালতে দোষী হলে (আওয়ামী লীগ) নিষিদ্ধ হবে!
তাদের ঔদ্ধত্যে যারপর নাই আমরা ক্ষুব্ধ। যারা দেশটা স্বাধীন করলো, তাদের রাজনীতি বন্ধের দুঃসাহস কে দেখায়?
হুজুররা আমাদের বোকা ভাবেন। আমরা কিছু বুঝি না? নিষিদ্ধ দল, যারা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে তারা বুক ফুলিয়ে সারা দেশ চষে রাজনীতি করে। আর প্রত্যন্ত এক স্কুলে বিজয় দিবসের মঞ্চে বঙ্গবন্ধুর ছবি থাকায় কারণ দর্শাও নোটিশ জারি হয়। আওয়ামী লীগার হলেই গ্রেফতার। কেন এসব, কারণ জানি।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, ইয়ার মোহাম্মদ খান ও শামসুল হকের নেতৃত্বে ঢাকায় জন্ম আওয়ামী লীগের। পরে পূর্ণতা পায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে। বাঙালির স্বপ্ন স্বাধীনতার সূচনা হয় ৬ দফার মাধ্যমে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয় অর্জিত হয় ষোলো ডিসেম্বর। ‘৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনীরা ভেবেছিল এই দলের সমাপ্তি এখানেই। মিথ্যা হয় খুনীদের স্বপ্ন-আশার। আওয়ামী লীগ ফিরে আসে জনগণের ভালোবাসায় এবং ২১ বছর দেশ শাসন করে । এবারো আওয়ামী লীগকে অন্যায়ভাবে ক্ষমতাচ্যুত করে যারা হুঙ্কার ছাড়ছেন আর ফিরতে দেয়া হবে না, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। কখনো তাদের স্বপ্ন পূরণ হবে না।
যে জামাত একাত্তরে আমাদের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, যাদের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি হয়েছে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে এবং যে দলটি ছিল নিষিদ্ধ, তাদের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবীতে তাদের লোকদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। কারো কারো মতে, ক্ষমতার কেন্দ্রে আছে জামাত। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের নেপথ্যের কারিগরদের সিংহ ভাগই ছিল শিবিরের। সাকসেসফুল মিশনের পর প্রকাশ পায় তাদের পরিচয়। দেশে নিষিদ্ধ হয় ছাত্রলীগ, যে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ‘৬৯ এ সফল গণ-অভ্যুত্থানের পর স্বাধীনতার পতাকা তুলে দেয়া হয় বঙ্গবন্ধুর হাতে।
এখন গণতন্ত্র ও মানবিকতার নসিহত করে জামাত, নতুন করে ইতিহাস লিখে। তাদের আজ্ঞাবহ অন্তর্বর্তী সরকারও একই ঢং দেখায়, কথা বলে একই সুরে। আওয়ামী লীগকে নাকি অপরাধ স্বীকার ও মাফ চাইতে হবে। কি দুঃসাহস! এ যেন চোর কর্তৃক পুলিশ পাকড়াও অথবা আসামির দরবারে হাকিমের সাজা!
ব্যক্তির দায় দল কেন নিবে?
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র, নির্বাচনী মেনিফেস্টো, কাউন্সিল সভার প্রস্তাবনা–কোথাও কি গুম-খুন, দুর্নীতি, অর্থ পাচার, লুটপাটের বৈধতার কথা লেখা আছে? নেই। ব্যক্তির নৈতিক স্খলন বা অপরাধের বিচার হতে পারে, এর মাঝে দলকে নিয়ে কেন টানাটানি? উদ্দেশ্য, অসৎ কিছু।
আওয়ামী লীগ রক্ষীবাহিনীর মতো কোন বাহিনী নয়, অবলুপ্ত করে দিলাম। এটি রাজনৈতিক দল, যার আছে আদর্শ, তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত শিকড়। একে কি উপড়ানো যায়? সরকারের হুজুরদের এ পাগলামি বুদ্ধি কে দিয়েছে?
আদর্শ সহজে মরে না। বেঁচে থাকে। বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ ও মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুড, যদিও দল দু’টি একই চরিত্রের নয় তবুও উদাহরণ টানা যায় আদর্শের প্রশ্নে। বারাক ওবামার আরব বসন্তে মিশরের নির্বাচনে ৭৫ বছর নিষেধাজ্ঞায় থাকা মুসলিম ব্রাদারহুড বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। পরে সামরিক জান্তা তাদের বিজয় ছিনিয়ে নেয়। বাংলাদেশেও ‘কামব্যাকে’র দৃষ্টান্ত আছে। আওয়ামী লীগ অতীতে একাধিকবার ফিরেছে, সন্দেহ নেই আগামীতেও ফিরবে।
ব্যক্তির দায়ে দলকে নিষেধাজ্ঞা শুধু বাংলাদেশেই কল্পনা করা হয়। গাজা গণহত্যায় সহায়তার অভিযোগ আছে বাইডেন-কমলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে। মার্কিনীরা নির্বাচনে তাদের প্রত্যাখ্যান করে উচিত জবাব দিয়েছে। কেউ দাবী করেনি ডেমোক্রেটিক পার্টি নিষিদ্ধ হোক। বাংলাদেশের জনগণ প্রয়োজনে আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে না। কিন্তু নিষিদ্ধ? নো!
যারা বাংলাদেশকে আবার ‘পূর্ব পাকিস্তান’ বানাতে চায়, প্রকৃতপক্ষে এটা তাদের ষড়যন্ত্র। জুলাই-আগস্টের সফলতার পর অবিরাম চেষ্টায় আছে বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ, জয় বাংলা মুছে দিতে। সফল হলে সম্ভব হবে একটি সাম্প্রদায়িক জঙ্গি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা জানে না, এটা তাদের দিবাস্বপ্ন মাত্র। ইতিহাস বলে, আওয়ামী লীগকে পরাস্ত করা সম্ভব নয়। তারা ফিরবেই। দেশের অর্ধেক মানুষকে কি করে আপনি ঘুম পাড়িয়ে রাখবেন?
-লেখক নিউইয়র্ক প্রবাসী সাংবাদিক।