দ্য সান ২৪ প্রতিবেদন
শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে পরিচয় স্কুল গণ্ডী পেরোনোর আগেই। পরবর্তীতে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ছিলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা সম্পাদক। পরে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন দীর্ঘদিন। ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের পর কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত সম্মেলনেও আবার দায়িত্ব পান সাংগঠনিক সম্পাদকের। বিএনপি জামায়াত জোট সরকার ও ওয়ান ইলেভেনের সময় কারাভোগ করেছেন। এবারও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রায় অর্ধ শতাধিক মামলার আসামি তিনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
. . . . . . . . . . .
২৫ জানুয়ারি
দ্য সান ২৪: আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে প্রায় ছয় মাস হতে চললো, কেমন আছেন? কোথায় আছেন?
শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল: আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে বিষয়টা সরলীকরণ করলে অবিচার করা হবে। কীভাবে আন্দোলনের নামে পরিকল্পিতভাবে মানুষ হত্যা করে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করা হয়েছিল তা কিন্তু এখন জনগণের কাছে পরিষ্কার। দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্রে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে জোরপূর্বক দেশছাড়া করা হয়েছে। বিষয়টি কিন্তু এখন আর্ন্তজাতিক মহলের কাছেও স্পষ্ট। দেখুন, যেখানে দেশের বেশিরভাগ মানুষ ভালো নেই, আতঙ্কিত অবস্থায় দিনানিপাত করছে, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, ওএমএস, টিসিবির খাদ্য সামগ্রী বিতরণ বন্ধ করা হয়েছে। শিক্ষক, সাংবাদিক বিভিন্ন পেশার মানুষকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ যেখানে আয়-রোজগারের উপায় হারিয়ে দিশেহারা, সেখানে আমরা ভালো থাকি কীভাবে, বলুন? এতটুকু বলছি রাজনৈতিক বাস্তবতায় দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছি। পরিবার পরিজন ছাড়া দেশের বাইরে আছি।
দ্য সান ২৪: কলকাতায় গত কয়েকদিন ধরে আওয়ামী লীগ নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করছেন বলে জানতে পেরেছি। পরবর্তী করণীয় নিয়ে আপনাদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। আপনাদের দলের সভানেত্রীও সেসব বৈঠকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হঠাৎ করে দলের অবস্থা কেন এত নড়বড়ে হয়ে গেল সেসব নিয়ে কি দলীয় বৈঠকগুলোতে আলোচনা হয়েছে?
শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল: এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে আমাকে একটু বিস্তৃতভাবেই বলতে হবে। আপনাদের নিশ্চয় মনে থাকার কথা আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো আন্দোলন সেটি ছিল না। কোটা সংস্কার নিয়ে কিছু শিক্ষার্থী বিক্ষোভ দেখায়। কিন্তু পুরো বিষয়টি ছিল খুবই পরিকল্পিত, তাদেরকে সমর্থন জুগিয়েছে জামায়াত-শিবির, হিজবুত তাহরিরসহ বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠী। শুরুতে মানুষ এসব বুঝতে না পারলেও এখন কিন্তু বিষয়গুলো অনেকটা পরিষ্কার।
নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থনে তারা যেটা শুরু করলো এরকম ঘটনা বাংলাদেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসে ঘটেনি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের প্রায় সবাইকে পঁচাত্তরে হত্যার পরও এরকম অবস্থা বাংলাদেশের মানুষ দেখেনি, যেটি ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশর মানুষ দেখলো। মূলত বিএনপি-জামায়াতের সমর্থনে তারা প্রথমত সারাদেশে আতঙ্ক ছড়ালো। এরপর শুরু করল ‘মব কিলিং’। পুরো বিষয়টি তাদের পরিকল্পনায় ছিল। ব্যাপকভাবে আক্রমণ করা হলো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর, যেন তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারে। শত শত নেতাকর্মীকে হত্যা করলো, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দিলো। ওই অবস্থায় প্রতিরোধ করতে গেলে জীবনক্ষয় আরও হতো। যেটি আমরা চাইনি। আমাদের দল তৃণমূলের দল; বঙ্গবন্ধুর আদর্শের দল; চাইলেই কেউ রাতারাতি নির্মূল করে ফেলতে পারবে না। আদর্শের মৃত্যু হয় না।
দ্য সান ২৪: তাহলে কী আমি বলতে পারি দলীয় নেতাকর্মীদের কথা ভেবেই আপনারা সংঘাতের পথে যাননি?
শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল: অবশ্যই। আপনি ঠিকই ধরেছেন। আমরা চেয়েছি একটা ‘ব্রিদিং টাইম’ নিতে। যে সময়ের মধ্যে সাধারণ মানুষের সঙ্গে ধাপ্পাবাজি করা হয়েছে তা তারা নিজেরাই আবিষ্কার করতে পারবে; অনুভব করতে পারবে কীভাবে তাদের ভুল বোঝানো হয়েছিল! তাছাড়া দলীয় কর্মীরা আমাদের প্রাণ। তাদের জানমালের নিরাপত্তার কথাও আমাদের ভাবতে হয়। কোনো প্রাণক্ষয় হোক তা আমরা চাইনি।
এজন্য আমর সময় নিচ্ছি। নেতাকর্মীদের সুরক্ষা করা এখন আমাদের প্রধান কর্তব্য।
দ্য সান ২৪: আপনি বলছেন ‘ব্রিদিং টাইম’ নিতে চেয়েছেন আপনারা। সেই সময়টা কি পার হয়েছে বলা যায়। বা আমরা কি লিখতে পারি যে আপনারা মাঠে নামার জন্য প্রস্তুত?
শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল: সত্যি বলতে আমরা সবসময়ই প্রস্তুত। আমাদের দেশের ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক, জনতা- হৃদয়ে বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করে চলেন। তারা অকুতভয়। কঠিন সময়েও তারা বিচলিত হওয়ার পাত্র নন। ওরা যেভাবে পরিকল্পিতভাবে হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছিল তাতে এতদিনে আমাদের থাকার কথা না, কিন্তু আমরা আছি। ইনশাআল্লাহ আমরা থাকবো।
সময়টা নিয়েছি, মানুষেরও মোহমুক্তি ঘটেছে। তারা এখন বুঝতে পারছে এই অপশক্তি, দুর্বৃত্তরা তাদের ভুল পথে পরিচালিত করেছে; তারা বুঝতে পেরেছে তাদের হাতে দেশের অখণ্ডতাও হুমকিতে। সাধারণ মানুষ এখন কথা বলতে শুরু করেছেন; সমালোচনা করছেন। আমরাও সাধারণ মানুষের কথা শুনতে চেয়েছি, আমাদের দোষগুণ জানতে চেয়েছি। সো, একটু টাইম তো লাগবেই।
দ্য সান ২৪: তাহলে কী আপনারা ভাবছেন এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছ থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে?
শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল: দেখুন, প্রথমত এটা কোনো সরকার না। অবৈধভাবে কিছু লোক ক্ষমতা দখল করেছে। তারাই শুধু ক্ষমতাবান হয়েছে, বাকি পুরো দেশ মূলত প্রতারিত হয়েছে।
দ্য সান ২৪: তার মানে এই অন্তর্বর্তী সরকারের সময় শেষ?
শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল: যাদের ন্যূনতম জনসম্পৃক্ততা নেই, যাদের কাছ থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তাদের আবার সময় কীসের?
দ্য সান ২৪: আপনারা বলছেন, ফেব্রুয়ারিতে আপনারা সম্পূর্ণ শক্তি নিয়ে মাঠে নামবেন। কিন্তু আপনারাই তো দেশের বাইরে। কারা মাঠে নামবে?
শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল: জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরাই মাঠে নামবো। বিদেশে তো স্থায়ীভাবে থাকছি না। খুব শিগগির আমরা ফিরে যাব। আপনি দেখবেন, এই অবৈধরা পদ্ধতিগত নানা জটিলতা তৈরি করেছে। শুধু বাইরে নয়, ভেতরেও। যে বিএনপির সঙ্গে তাদের এতটা সখ্য, তাদের সঙ্গেও তারা বিরোধে জড়াচ্ছে। কারণ, সময় খুব বেশি নেই! খুব কম।
দ্য সান ২৪: কতদিন?
শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল: দিনক্ষণ তো নির্দিষ্ট করে বলতে পারবো না, তবে খুব বেশি দিন নয়। ওদের বিদায়ের সময় খুব নিকটে। সর্বোচ্চ দুই মাস।
দ্য সান ২৪: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, আপনি সময় দিয়েছেন, কথা বলেছেন। আমরা তো আওয়ামী লীগের মুখপাত্র হিসেবে কাউকে দেখছি না!
শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল: আপনাকেও ধন্যবাদ। আশা করছি শিগগির এই সমস্যা কেটে যাবে।
দ্য সান ২৪: ভালো থাকবেন।
শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল: আপনারাও ভালো থাকবেন। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। দেশের জন্য দোয়া করবেন।
দ্য সান ২৪-এর পক্ষ থেকে শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন এহেছান লেনিন।