মাসুদা ভাট্টি
আপনাদের নিশ্চয়ই মনে থাকবে যে, বাংলাদেশে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম শুরু করেছিলেন ঘাতক-দালাল নির্মূল আন্দোলন এবং সেখানেই মু্ক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদু্ল্লাহ কায়সার ও যুদ্ধপরবর্তীকালে নিখোঁজ হওয়া জহির রায়হানের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় শাহরিয়ার করির দ্বিতীয় প্রধান ব্যাক্তি হয়ে ওঠেন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষশক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলনে। সেখানেই অর্থাৎ জাহানারা ইমামের কাছেই ঘাতক-দালাল নির্মূল আন্দোলনে আরেক ঘনিষ্ঠ ব্যাক্তি আসিফ নজরুল আকা নজরুল ইসলাম। বিচিত্রায় কাজ করার সুবাদে তিনি শাহরিয়ার কবিরেরও ঘনিষ্ঠ ছিলেন। সে সময় বিচিত্রাকেন্দ্রিক সাংবাদিকতায় শাহাদত চৌধুরীর আত্মীয়কূল বাংলাদেশের মিডিয়ায় একচ্ছত্র রাজ করেছে। শাহরিয়ার কবির থেকে শুরু করে আজকের বড় সম্পাদকদের অনেকের মিডিয়ায় জায়গা করে নেওয়া সেই আত্মীয়তাক সুবাদেই। খোঁজ নিলেই জানা যাবে যে কে কার আত্মীয় এবং কে কোন কোটায় মিডিয়ায় প্রতিষ্ঠিত।
যাহোক কথা হলো, একানব্বইয়ের বিএনপি সরকার গোলাম আজমের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়া বিষয়ে যে কর্মকান্ড শুরু করে এবং তার বিপরীতে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গণআদালত গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশে বিশেষ করে শাহরিয়ার কবির ও আসিফ নজরুলেরও রাজনৈতিক বিচ্ছেদ ঘটে। জাহানারা ইমামকে অনেকেই আম্মা বলে ডাকতেন, নিশ্চয়ই আসিফ নজরুল এবং শাহরিয়ার কবিরও ডাকতেন, সে হিসেবে জাহানারা ইমামের দুই পুত্র দুই ধারার রাজনীতিতে চলে যান। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই দুই ধারা মূলতঃ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ আর বিপক্ষ, এক পক্ষ মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে ক্ষমতায় যেতে চেয়েছে এবং গিয়েওছে। আরেক পক্ষ মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে সক্রিয় রাজনীতি করে শুধু যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিনষ্ট করেছে তা নয় এই আসিফ নজরুল ও তার পক্ষের রাজনীতির হাত ধরেই এদেশে যুদ্ধাপরাধীরা বাংলাদেশে বিশ্বাস না করেও বাংলাদেশের মন্ত্রী হয়ে জাতীয় পতাকার তওহীন করেছে। আর আজকেতো মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী একটি মূর্তিমান সরকার ক্ষমতায় এবং আসিফ নজরুল তার মন্ত্রী, আর শাহরিয়ার কবির মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে রাজনীতি করায় তিনি এখন কারগারে। কেবলমাত্র মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ সমর্থন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করায় ভূমিকা রাখা ছাড়া শাহরিয়ার কবির আর কোনো “অন্যায়” করেছেন বলে প্রমাণ না থাকলেও তাকে অন্যায্যভাবে আটক রেখে জাহানারা ইমামের আরেক সন্তান আসিফ নজরুল কী করে ক্ষমতা ভোগ করেন তা হয়তো সুস্থ বিবেকের কাছে প্রশ্নের উদ্রেক করতে পারে কিন্তু আমরাতো অসুস্থ হয়ে গেছি সকলেই। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা মাথায় নিয়ে আম্মা জাহানারা ইমাম মারা গিয়েছেন আর তার দুই ছেলে আজও “হাবিল-কাবিলের” মতন লড়ে যাচ্ছে, কখনও স্বল্প সময়ের জন্য শাহরিয়ার কবির জয়ী হন কিন্তু তখন তিনি আসিফ নজরুলকে নিয়ে কারাবন্দী করেন না, কিন্তু আসিফ নজরুলরা যখনই জয়ী হন তখনই শাহরিয়ার কবিরদের অন্যায্য কারাভোগ নিশ্চিত করেন। ভয়ংকর এ যুদ্ধ আসলে যে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধেরই সম্প্রসারণ তা বলে বোঝানোর দরকার নেই, আসিফ নজরুলরা ক্ষমতা নিয়েই যখন পাকিস্তানের সংগে দহরম-মহরম শুরু করেন তখন বোঝাই যায় বাংলাদেশে আসলে কারা কোন্ পক্ষ।
আসিফ নজরুল কখনো কারাগারে জাননি, তিনি সৌভাগ্যবান, আর মুক্তিযুদ্ধ পক্ষের রাজনীতি করে শাহরিয়ার কবির একাধিকবার জেলে গিয়েছেন, এখনো আছেন। জাহানারা ইমামের কথা মনে করেও কি আসিফ নজরুল তাদের “আম্মার” আরেক সন্তান অসুস্থ শাহরিয়ার কবিরকে মুক্তি দিতে পারেন না? কারাগারতো সাফা করে দিয়েছেন সকল জঙ্গী, হত্যাকারী, দাগী আসামীদের মুক্তি দিয়ে, শাহরিয়ার কবির, মোজাম্মেল বাবু, শ্যামল দত্ত, ফারজানা রূপা, শাকিল আহমেদকে আটক রেখে কারাগার ভর্তি রাখার এই নোংরা রাজনীতিটা না করলে হয় না? আসিফ নজরুলের বিদেশি শিক্ষার একটা ছাপতো রাখতে পারেন চাইলে এদের মুক্ত করে দিয়ে, পারেন না?