ইসলামী ব্যাংক থেকে বেনামি প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আহসানুল আলমসহ ৫২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আহসানুল এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলমের (এস আলম) ছেলে। মঙ্গলবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ মামলাটি দায়ের করা হয়। একই দিন অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ভোলা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে সংস্থাটি।
দুপুরে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন কমিশনের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন।
তিনি জানান, ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখা থেকে ৮২৭ কোটি ৪২ লাখ ১৫ হাজার ৪২৫ টাকা, যা মুনাফাসহ ৯১৮ কোটি ৫৭ লাখ ৫৪ হাজার ৭১৮ টাকা আত্মসাত ও অর্থের প্রকৃত উৎস্য গোপন ও স্থানান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয় মামলায়। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৭৮/৪৭১/৪৭৭ক/১০৯ ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং মানি লন্ডারিং আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পারস্পরিক যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার, অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ অপরাধমূলক অসদাচরণ, জাল-জালিয়াতি, প্রতারণার মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে ৮২৭ কোটি ৪২ লাখ ১৫ হাজার ৪২৫ টাকা মুনাফাসহ ৯১৮ কোটি ৫৭ লাখ ৫৪ হাজার ৭১৮ টাকা আত্মসাতসহ বিনিয়োগকৃত অর্থের প্রকৃত উৎস ও প্রকৃতি গোপন করার জন্য হস্তান্তর/স্থানান্তর এবং রূপান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং-এর অপরাধ করেছেন। মামলার আসামিরা হলেন- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি’র সাবেক চেয়ারম্যান, কমিটি এবং পরিচালক আহসানুল আলম, সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরিফুল ইসলাম চৌধুরী, সদস্য মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান, ব্যাংকটির সাবেক পরিচালক ও চেয়ারম্যান, ইসি কমিটি: ড. মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সাবেক নমিনী পরিচালক সৈয়দ আবু আসাদ, সাবেক সদস্য, ইসি কমিটি: ও ভাইস চেয়ারম্যান, ডা. তানভীর আহমদ, সাবেক সদস্য, ইসি কমিটি: ও পরিচালক মো. কামরুল হাসান, সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক ও সদস্য, ইসি কমিটি: ড. মোহাম্মাদ সালেহ জহুর, সাবেক পরিচালক ও সদস্য, ইসি কমিটি: প্রফেসর মো. নাজমুল হাসান, সাবেক পরিচালক ও সদস্য, ইসি কমিটি: ড. মো. ফসিউল আলম, সাবেক সদস্য, ইসি কমিটি: আবু সাইদ মোহাম্মদ কাশেম, সাবেক পরিচালক ও সদস্য, ইসি কমিটি: জামাল মোস্তফা চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এবং সদস্য (পদাধিকার বলে): মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা,
এ ছাড়া ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সদস্য, ইসি কমিটি: মো. মাহবুব উল আলম, সাবেক ডিএমডি, আই অ্যান্ড সিটিডব্লিউ, সদস্য ইনভেস্টমেন্ট কমিটি: তাহের আহমেদ চৌধুরী, ডিএমডি, আইবিডব্লিউ এবং সদস্য ইনভেস্টমেন্ট কমিটি হাসনে আলম, ডিএমডি, আরআইডব্লিউ এবং সদস্য ইনভেস্টমেন্ট কমিটি মো. আব্দুল জব্বার, এসইভিপি, আইএডি এবং সদস্য ইনভেস্টমেন্ট কমিটি: মো. সিদ্দিকুর রহমান, এসইভিপি, এএমডি এবং সদস্য ইনভেস্টমেন্ট কমিটি: এ.এ.এম হাবিবুর রহমান, এসইভিপি, এএমডি এবং সদস্য ইনভেস্টমেন্ট কমিটি মোহাম্মদ সাঈদ উল্লাহ, এএমডি, আইবিডব্লিউ এবং সদস্য ইনভেস্টমেন্ট কমিটি: ওমর ফারুক খানসহ ৫২ জনকে দুদকের মামলার আসামি করা হয়েছে।
এদিকে ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেন ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ভোলা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে দুদক।
দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন জানান, নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ৫১ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা মূল্যের অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণ পাওয়া গেছে। একইসঙ্গে তার নামে থাকা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ২০৮ কোটি ৭০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
অন্যদিকে, নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের স্ত্রী ফারজানা চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২ কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আরেকটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, মানি লন্ডারিং আইন ৪(২) ও ৪(৩) এবং তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।