সুব্রত বিশ্বাস
বর্তমান অন্তবর্তী সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ ফেব্রুয়ারীর ১ তারিখ থেকে প্রতিবাদ প্রতিরোধের ডাক দিয়েছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ একটি ফ্যাসিস্ট সরকার। জার্মানিতে ফ্যাসিস্ট নাতসিদের নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, আওয়ামী লীগও একইভাবে একটি ফ্যাসিস্ট দল হিসেবে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের কোনও রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার অধিকার নেই। তাদের যেকোনও চোরাগুপ্তা উদ্যোগকে প্রতিহত করা হবে’।
দিন কয়েক আগে নির্বাচন উপদেষ্টা বদিউল আলম মজুমদার কমিশনের রিপোর্ট জমা দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনার নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার অধিকার নেই। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরবিহীন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছে, আওয়ামী লীগকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। একইভাবে কথিত নাগরিক কমিটিও একই কথা বলেছে। বস্তুত, অন্তবর্তী সরকারের সব শিয়ালের একই রা।
প্রশ্ন হলো, আওয়ামী লীগ তো কোনও নিষিদ্ধ ঘোষিত দল নয়। কিন্তু তাদের রাজনৈতিক অধিকার বাতিল কিংবা নিষিদ্ধ হয়নি। অন্যদিকে বর্তমান সরকার একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার, সে সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের অধিকার নেই প্রতিহত করার হুমকি দেখানোর। অথবা প্রতিহত করার শক্তি প্রদর্শনের। দ্বিতীয়ত অন্তবর্তী সরকারকেও কিন্তু জনগণ হাতে পায়ে ধরে এনে বসায়নি। অবস্থার প্রেক্ষিতে একটি চক্রান্তকারী গ্রুপের চক্রান্তে অন্তবর্তী সরকারের হয়ে মাথায় বসে গেছেন। তবে যেভাবেই বসে যান না কেন, তাদের দায়িত্ব একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে সরে পড়া। কিন্তু তাদের আচার আচরণ ও কথাবার্তায় মনে হচ্ছে তারা দেশের সরকারের সব দায়িত্ব পেয়ে বসে গেছেন। নিজেদের অনেক কিছু মনে করছেন, দীর্ঘস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকার ফন্দিফিকির করছেন। এমতাবস্থায় আওয়ামী লীগের প্রতিবাদের ডাকে শঙ্কিত হয়ে সব শেয়ালে মিলে প্রলাপ বকছেন।
হ্যাঁ শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ অন্যায় অবিচার করেছে। তাই বলে পুরো আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর উপর দায় বর্তায় না। ইতিমধ্যে এসব ব্যাপার নিয়ে আওয়ামী লীগের অনেককেই সমালোচনামূলক বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দ্বিতীয়তঃ আওয়ামী লীগকে নির্বাচন কিংবা মাঠের রাজনীতি থেকে বঞ্চিত কিংবা নিষিদ্ধ করে রাখা হয়, তাহলে সর্বপ্রথম বিএনপি-জামায়াত-হেফাজতসহ দলগুলোকে আগে নিষিদ্ধ করতে হয়।
সুতরাং অন্তবর্তী সরকারের প্রধান কাজ হবে যত তাড়াতাড়ি একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। গণতান্ত্রিক নিয়মনীতি মাথায় রেখে নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। সেই নির্বাচনে যে দলই আসুক, সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকেই যদি জনগণ ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসাতে চায় সেটাই হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার প্রাথমিক কর্তব্য। এর ব্যত্যয় ঘটলে, নির্বাচন দীর্ঘস্থায়ী করে ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতার স্বপ্ন লালন করতে থাকেন এর পরিণতি দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না।
লেখক: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী, রাজনৈতিক বিশ্লেষক।