শুক্রবার ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হলো বাঙালির প্রাণের অমর একুশে বইমেলা। এবছর আর বাড়ছে না অমর একুশে বইমেলার সময়। পর্দা নামলো বাঙালির প্রাণের উৎসব বইমেলার।কিন্তু লোকসমাগম হলেও বই বিক্রি কম হয়েছে। প্রকাশকরা হতাশা প্রকাশ করেছেন। কারণ হিসাবে উঠেছে নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনা। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বইয়ের সমাবেশ ঘটানোর অলিখিত নিষেধাজ্ঞা, মবাতঙ্কসহ নানা বিধিনিষেধ মেলায় প্রভাব পড়ে। এতে গতবারের চেয়ে বই বিক্রির হার অভাবনীয়ভাবে কমে গেছে। অনেক প্রকাশক তাদের খরচ তুলতেও পারেননি বলে হতাশ হয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে এবারের বইমেলা নিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে এক কর্মকর্তা বলেন, এবারের বইমেলার আয়োজনসহ সব ব্যবস্থাপনাতেই ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে সবকিছুকে পাশ কাটিয়ে আমরা বইমেলা করতে সক্ষম হয়েছি। এটাই হচ্ছে বড় সাফল্য।
এ কর্মকর্তা আরও বলেন, বইমেলা এখন মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। বইমেলা কিন্তু শুধুমাত্র বই বিক্রির হাট নয়। এটি একটি মানুষের সঙ্গে পারস্পরিক মেলবন্ধনের জায়গা। লেখক-পাঠকের সম্পর্ক তৈরি হওয়ার জায়গা। সবকিছু মিলিয়ে বইমেলা হচ্ছে একটি সাংস্কৃতিক ইভেন্ট। সেজন্য, বইমেলাকে শুধু বইমেলা নামেই আমরা ডাকি না। আমরা বলি মিলনমেলা। সে বিবেচনায় বলতে পারি বইমেলা সফল হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সেকালের বর্ধমান হাউস আজকের বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের বটতলায় এক টুকরা চটের ওপর চিত্তরঞ্জন সাহা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ থেকে প্রকাশিত আজকের মুক্তধারা প্রকাশনী কলকাতা থেকে আনা মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ভারতে অবস্থানকারী বাংলাদেশী শরণার্থী লেখকদের লেখা মাত্র ৩২টি বই নিয়ে যে একুশে বইমেলার শুভযাত্রা শুরু হয়েছিল, তা আজ অনেক বিস্তৃত। ১৯৭৩ সালে বাংলা একাডেমি ১৫ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি এক সপ্তাহের জন্য হ্রাসকৃত মূল্যে বই বিক্রি করে একুশের বইমেলার ধারা অব্যাহত রাখে এবং ১৯৭৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি একাডেমি জাতীয় সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করে, যা উদ্বোধন করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রকাশকদের জন্য স্থান নির্দিষ্ট করে একুশের বইমেলার আয়োজন করা হয় এবং ১৯৯৭ সালের সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। সময়ের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় মহান একুশের বইমেলা আজকের স্বকীয়তা নিয়ে দেশব্যাপী বিস্তৃতি লাভ করে। এবার একুশে গ্রন্থমেলা বাংলা একাডেমি চত্বর ছাড়িয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রসারিত হওয়ায় এর ব্যাপকতা সব বাংলা সাহিত্যপ্রেমীর মনে আশার সঞ্চার করেছে। শুরু হওয়ার পর থেকে অমর একুশে বইমেলা আপামর বাঙালীর কাছে প্রাণ জোয়ার সৃষ্টিকারী এক মেলায় পরিণত হয়েছে। বাঙালী লেখক, প্রকাশক এবং পাঠকদের কাছে বইমেলা এক মিলন মেলা। বইমেলায় জড়ো হতে থাকে দূর-দূরান্তের চেনা মুখগুলো। ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারি পার হলে ভাঙে এ মিলন মেলা। বইমেলা আমাদের অন্তরে যে বন্ধন তৈরি করে তা ভাঙে না কখনই। দেশের প্রতি ভালবাসা সৃষ্টি করে। অনুপ্রেরণা যোগায়। বাঙালী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে অমর একুশে বইমেলা আবার কবে ফিরে আসবে এই অপেক্ষায়।
সাবস্ক্রাইব
সর্বশেষ খবরের সাথে আপডেট থাকুন।
অমর একুশে বইমেলা শেষ: লোকসমাগম হলেও বই বিক্রি কম
Previous Articleনতুন দল গঠন: জনমনে নতুন সন্দেহ