“অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে দেশে মবক্রেসি বা মবতন্ত্র চলছে,” বলেন জি এম কাদের। ঢাকার বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন জি এম কাদের।
সারা দেশে রাজনীতির নামে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজে জড়িতরা অন্তর্বর্তী সরকারের ঘনিষ্ঠ মহলের ‘ভাবাদর্শের জনতা’ বলে অভিযোগ করেছেন বিগত সরকারের সময় বিরোধী দলে থাকা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
দেশের নানা ক্ষেত্রে পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, “অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে দেশে মবক্রেসি বা মবতন্ত্র চলছে।”
রোববার দুপুরে ঢাকার বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয় মিলনায়তনে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখছিলেন তিনি।
১৯৯০ সালে গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের হাতে গড়া জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান তার ছোট ভাই গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের।
বিগত সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অন্যতম শরিক দলটি সেবার সরকারেও ছিল। আওয়ামী লীগ পরের টানা তিন সরকারে জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের ভূমিকায় ছিল।
অন্তর্বতী সরকারের সমালোচনা করে দলটির চেয়ারম্যান বলেন, “দেশের আইনশৃঙখলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। প্রতিদিন এই অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে। সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নেই। কাজের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। বাড়ছে বেকারত্ব।
“এরই মধ্যে প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে আকাশচুম্বী হচ্ছে। এ কারণেই, দেশে অভুক্ত ও অর্ধভুক্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।”
জি এম কাদের অভিযোগ করে বলেন, “রাজনীতির নামে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজের জন্য উচ্ছৃঙ্খল জনতার অভাব হয় না। সরকার ঘনিষ্ঠ মহলের ভাবাদর্শের এ সকল জনতাকে আইনশৃংখলা রক্ষা বাহিনী বাধা দিচ্ছে না, অনেক ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে সহায়তা করছে বা করতে বাধ্য হচ্ছে।
“এই সুযোগে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী বাহিনী যে কাউকে আওয়ামী লীগ বা আওয়ামী লীগের দোসর ট্যাগ দিয়ে তার সহায় সম্পদ লুটপাট করতে পারছে। বিনা বাধায় মানুষকে অত্যাচার, নির্যাতন ও হেনস্তা করার যেন লাইসেন্স পেয়ে গেছে উচ্ছৃঙ্খল জনতা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে দেশে মবক্রেসি বা মবতন্ত্র চলছে।”
গুলশানের একটি বাসায় লুটপাটের ঘটনায় বাকী লোক কী কারণে ‘দায়মুক্তি’ পেয়েছে, সে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “সম্প্রতি গুলশানের একটি বাসায় লুটপাটের ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে, অথচ লুটের ঘটনায় ৮০/৯০ জন মানুষ উপস্থিত ছিল বলে সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়। বাকী মানুষ কী কারণে দায়মুক্তি পেল, বোঝা গেল না।”
নির্বিচারে আওয়ামী লীগ বা বিগত সরকারের দোসর বলার সমালোচনা করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, “ঢালাওভাবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিগত সরকারের দোসর হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এতে করে তাদের মনোবল দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে।
“তারা দায়িত্ব পালনকে অনেক ক্ষেত্রেই ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে, সে কারণে দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে। তাদের জন্য সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে বলেও মনে হচ্ছে না। এভাবে বেশি দিন চলতে থাকলে দেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে বলে আশঙ্কা হয়।”