সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক নতুন রূপ পেয়েছে কম্পিউটার। বিভিন্ন ধরনের কাজ দ্রুত ও কার্যকারীভাবে করতে পারে এই ডিভাইস। অনেকে তাই মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে কম্পিউটারের তুলনা করছেন। এবার মানুষের মস্তিষ্কের জীবিত কোষ দিয়েই কম্পিউটার তৈরি করল অস্ট্রেলিয়ার স্টার্টআপ কর্টিকাল ল্যাবস। একে ‘বিশ্বের প্রথম কোড ডিপ্লয়েবল বায়োলজিক্যাল কম্পিউটার’ হিসেবে ঘোষণা করেছে কোম্পানিটি। এটি মানব মস্তিষ্কের কোষ এবং সিলিকন হার্ডওয়্যার একত্রিত করে তরল নিউরাল নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে, যা এআই প্রযুক্তির একটি নতুন যুগের সূচনা করছে। কোম্পানিটি একটি নতুন ধরনের কম্পিউটিং বুদ্ধিমত্তা উপস্থাপন করছে–যা বর্তমান এআইয়ের চেয়ে আরও গতিশীল, টেকসই এবং শক্তি সাশ্রয়ী।
এই নতুন কম্পিউটারটির নাম সিএল ১, যা একটি সাধারণ কম্পিউটার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এটি মানুষের মস্তিষ্কের কোষ ব্যবহার করে তরল নিউরাল নেটওয়ার্ক চালানোর কাজ করে। এই কম্পিউটার আকার একটি জুতার বাক্সের মতো।
২০২২ সালে কর্টিকাল ল্যাবস বিশাল সাড়া ফেলেছিল। কারণ, সে সময় যখন তারা পেট্রি ডিশে (গবেষণায় ব্যবহৃত বৃত্তাকার কাচের পাত্র) মানব মস্তিষ্কের কোষকে ‘পং’ নামক ভিডিও গেম খেলা শিখিয়েছিল। তবে, সিএল ১ একটি ভিন্ন ধারণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। এই ডিভাইসে কয়েক লাখ ছোট ছোট নিউরন ব্যবহার করা হয়, যা প্রতি একটি প্রায় একটি পিঁপড়ার মস্তিষ্কের সমান আকারের। এসব নিউরন গবেষণাগারে কালচার করা হয় এবং এগুলো সিলিকন চিপের ওপরে ছড়িয়ে পড়ে।
কর্টিকাল ল্যাবস দাবি করেছে, ‘কঠিন সিলিকন এবং নরম টিস্যুর একটি সংমিশ্রণ’ ব্যবহার করে ব্যবহারকারীরা ‘জীবিত নিউরনগুলোতে কোড সরাসরি ইনস্টল’ করে এবং ‘আজকের যুগের সবচেয়ে কঠিন সমস্যাগুলো সমাধান’ করতে পারবে।
কর্টিকাল ল্যাবসের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ব্রেট কাগান বলেন, একে ‘একটি বাক্সের মধ্যে থাকা শরীর’-এর সঙ্গে তুলনা করেন। তবে এর মধ্যে তরঙ্গের পরিস্রাবণ এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রয়েছে। সেই সঙ্গে মিডিয়া সংরক্ষণের জায়গা, পাম্পিং সিস্টেম, বিভিন্ন গ্যাসের মিশ্রণও আছে।
বিজ্ঞানী কাগান বলেন, যে একমাত্র জিনিসে ‘সাধারণ বুদ্ধিমত্তা’ রয়েছে তা হলো জৈবিক মস্তিষ্কে। তিনি আরও বলেন, যে কাজগুলো মানুষ, ইঁদুর, বিড়াল ও পাখিরা করতে পারে (যা এআই করতে পারে না) তা হলো—খুব কম তথ্য থেকে ধারণা তৈরি করা এবং তারপর জটিল সিদ্ধান্ত নেওয়া।
এটি এখনো কীভাবে কার্যকর হবে, তা বলা কঠিন। তবে বিজ্ঞানী কাগান বলেন, এটি ‘রোগ মডেলিং’ বা ‘ওষুধ পরীক্ষার’ জন্য ব্যবহার হতে পারে।
উল্লেখ্য, রোগ মডেলিং হলো—একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, যেখানে বিভিন্ন রোগের প্রভাব, তাদের বিস্তার এবং চিকিৎসা পদ্ধতির কার্যকারিতা বোঝার জন্য গাণিতিক বা সিমুলেশন মডেল তৈরি করা হয়।
কাগান আরও জানান, স্নায়ুবিজ্ঞানের এবং মানসিক রোগের জন্য বেশির ভাগ ওষুধ যখন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে যায়, তখন সেগুলো ব্যর্থ হয়। কারণ, মস্তিষ্কে অনেক বেশি সূক্ষ্ম বিষয় থাকে। তবে টুলগুলোর মাধ্যমে সেই সূক্ষ্মতা দেখা যাবে।
তবে সিএল ১ বিশ্বব্যাপী এআই খাতে তাৎক্ষণিক বিপ্লব ঘটাবে না বলে কাগান স্পষ্ট করেছেন।
এ ছাড়া কর্টিকাল ল্যাবস তাদের তৈরি কম্পিউটারগুলোর ব্যবহারিক কম্পিউটেশন সেবা ক্লাউডের মাধ্যমে প্রদান করার পরিকল্পনা করছে।
কোম্পানিটি বলেছে, ‘গতানুগতিক বুদ্ধিমত্তার বাইরে গিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ের লার্নিং মেশিন তৈরির জন্য প্রচলিত কম্পিউটিংয়ের সঙ্গে জীববিজ্ঞানকে একসঙ্গে করেছে আমাদের এই প্রযুক্তি। আমাদের নিউরাল কম্পিউটার সিস্টেমের এসব জটিল কাজ আয়ত্ত করার জন্য ন্যূনতম বিদ্যুৎ ও প্রশিক্ষণ ডেটার প্রয়োজন।’
কর্টিকাল ল্যাবসের কাছে অনেক কাজ বাকি রয়েছে। বিশেষ করে নিউরনগুলোকে এআইয়ের মতো কাজ শেখানোর ক্ষেত্রে।
তবে, এই পদ্ধতির কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ—এই নিউরনগুলো খুব অল্প পরিমাণে বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করে। যেখানে প্রচলিত শক্তিশালী এআই চিপগুলো অনেক বেশি শক্তির প্রয়োজন, যা সাধারণত অনেক গুণ বেশি।
বর্তমানে একটি ‘বায়োলজিক্যাল এআই’ প্রশিক্ষণ ডিভাইস হিসেবে সিএল ১ বিক্রি করছে কর্টিকাল ল্যাবস। অর্থাৎ সিলিকন চিপের মাধ্যমে নিউরনগুলোকে ‘শিক্ষিত’ করা যেতে পারে। এ বছরের জুনে বাজারে আসবে এই ডিভাইস। প্রতিটি ইউনিটের দাম হবে প্রায় ৩৫ হাজার ডলার।
তথ্যসূত্র: ফিউচারিজম ও নিউঅ্যাটলাস
সাবস্ক্রাইব
সর্বশেষ খবরের সাথে আপডেট থাকুন।
এআইয়ের বিকল্প কৃত্রিম মানবমস্তিষ্ক, যুগান্তকারী কম্পিউটার বানালেন বিজ্ঞানীরা
Previous Articleধর্ষণবিরোধী আন্দোলন মঞ্চস্থ
Next Article এয়ারপডে ক্যামেরা ও এআই যুক্ত করবে অ্যাপল