।। লাকী আক্তার ।।
বেশ কিছুদিন ধরেই ধর্ষণ বিরোধী লড়াই চলছে সারাদেশে। গত কয়েকমাসে মানুষ তার জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। যে নারীরা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিল, সে নারীরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত।
ফলশ্রুতিতে শত শত সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই আন্দোলনের সাথে যুক্ত আছে। যার রাজনৈতিক দর্শন যার সাথে মিলে তার সাথেই মানুষ সংগঠিত আছে, সামনেও থাকবে। এখানে নানান জনের নানান দাবি। এমনকি বিভিন্ন প্লাটফর্মের দাবি নিয়েও বহু ভিন্নতা আছে। যার যতটুকু সামর্থ্য, যে যার সাথে সংগঠিত হতে চায়, সে অনুযায়ী সে মাঠে থাকে আগামীতেও থাকবে।
সভা, সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা এটা কোন গণতান্ত্রিক আচরণ নয়। যে প্লাটফরম এ শিক্ষার্থীরা স্মারকলিপি দিতে গেছে, সেখানে তো খুব সহজেই একটা প্রতিনিধি দলের সাথে কথা বলতে পারতো সরকার। সেখানে হামলা আবার তাদের নামেই মামলা এটা কি কোন ভাবে গ্রহনযোগ্য? আবার আরেকটা গ্রুপের সাথে আপনারা বৈঠক করেছেন। তাহলে এদের সাথে বৈঠক করা বা স্মারকলিপি কেন গ্রহন করতে পারলেন না? উপরোন্তু সভা সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দিলেন। এটা গণতান্ত্রিক নমুনা হইলো?
আমি মিছিল করেছি। এরকম মিছিল আমি ২০০৯ সাল থেকে নিয়মিতই করি। একেক সময়ে একেক পেসে সেই আন্দোলন করেছি। ক্যাম্পাসে থাকতে একরকম, ছাত্র ইউনিয়ন থাকতে একরকম, গণজাগরণে একরকম, কৃষক সমিতি কিংবা কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে একেক রকম। অসং্খ্য নাগরিক উদ্যোগের সাথেও আমি আমার রাজনীতি করে গেছি।
নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কয়েকদিন আগে আমি শাহবাগে ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়নের প্রোগামে ছিলাম। পার্টির বিভিন্ন উদ্যোগের সাথে ছিলাম নারী কিংবা পার্টির বাইরেও বিভিন্ন লোকাল প্রোগ্রামেও ছিলাম। মশাল মিছিলের উদ্যোগের সাথেও আমি ছিলাম, সেখানে অনেক সংগঠন যুক্ত ছিলো। আমি রাজনীতি করি, রাজনৈতিক উদ্যোগ আমার থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক। কোথাও পরিচয় লুকায়ে আমাকে রাজনীতি করতে হয় নাই। আশাকরি সামনেও করতে হবে না। কারোও কাছে কেন আমার লড়াই এর খতিয়ান তুলে ধরবো, কেন ধরবো?
যার সাথে আমার রাজনৈতিক দর্শন মিলবে, কিংবা আমি যেই পার্টি করি সেটা অনুযায়ী আমি আমার গতিপথ ঠিক করি, আগামীতেও করবো।
প্রতিটা লড়াই একটার চাইতে অন্যটা ভিন্ন। যেই পরিস্থিতি, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে না পারলে, সামনে নির্বাচনের জন্যও বহু মানুষ রাস্তায় নামবে। গণতন্ত্রের জন্যও মানুষ তার লড়াই করবেই। কৃষক-শ্রমিকদের সংগঠিত করতে পারলে তারাও তাদের লড়াই অগ্রসর করবে।
নারীদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম একটা দীর্ঘমেয়াদি লড়াই। এটা সরকার বদলালেই সমাধান হবে আমি তা মনে করিনা।
কিন্তু সরকারকে কঠোর ভাবে নির্যাতিতের পক্ষে অবস্থান রাখতে হবে। একজন নারী ভিক্টিম হওয়ার পরে, তার আইনী প্রক্রিয়ায় যেতে যেই ভয়ানক লড়াই করতে হয়, সেখানে সরকারের জিরো টলারেন্স প্রয়োজন। সেটা কথায় না কাজে প্রমাণ দিতে হবে। কারণ বেশিরভাগ ঘটনারই বিচার হয় না।
দু’একটা ভাইরাল ঘটনা নয়, সরকারকে আন্তরিকভাবে প্রতিটা ঘটনায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। নারী বিদ্বেষী ততপরতা বন্ধ করতে হবে। নারীর বিরুদ্ধে স্লান্ডারিং বন্ধ করতে হবে। নাহলে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হবে এটাই স্বাভাবিক।
আজকে আছিয়া মরে গেছে, তার জন্য দায়ী তার ধর্ষক। কিন্তু যে সিস্টেমে ধর্ষকামী মানুষ তৈরী হয়, যে সিস্টেমে নারী নির্যাতিত হয় সে সিস্টেমের বিরুদ্ধে লড়াই আমাদের লড়তে হবে। সে লড়াই একদিনের নয়, কেননা প্রতিটি ভাইরাল ঘটনায় মানুষ সোচ্চার হয় ঠিকই। কিন্তু প্রতিদিনের পত্রিকার পাতায় অসং্খ্য ঘটনা থাকে যেগুলো মানুষ এড়িয়ে যায়.. সে লড়াই লড়তে সচেতন মানুষ রাস্তায় নামবেই। আমি সেখানে একজন মিছিলের মানুষ হিসেবেই থাকবো। লড়াই চলবে..