।। ইমতিয়াজ মাহমুদ ।।
মেয়েটাকে ওরা আর বাঁচাতে পারলো না। আজ মেয়েটা মরে গেছে। সকল কষ্ট যন্ত্রণা গ্লানির ঊর্ধ্বে চলে গেছে আসিয়া। আমার বুকের ভেতর আরেকটা শিশুর এইরকম আহত লাঞ্ছিত ছিন্নভিন্ন শিশু বাস করে। ওর নাম পূর্ণা ত্রিপুরা। পূর্ণার সাথে এখন আসিয়া যোগ দিয়েছে। প্রায় একই বয়স দুইজনের। ওদের ছোট দেহটার সাথে ওরা কি করেছে সেকথা আমি বারবার বলতে পারব না। আপনারা জানেন, আপনারা মনে রাখবেন।
আমার কেবল জানতে ইচ্ছে করে এই আট নয় বছর নারীজীবন কাটিয়েছে এই পৃথিবীতে, কেমন ছিল ওদের জীবন? কেমন ছিল আসিয়ার জীবন? আসিয়া কি স্কুলে যেতো? কোন ক্লাসের পড়তো মেয়েটা? দুষ্ট ছিল খুব? নিজের নাম সে কিভাবে লিখত? আসিয়া? নাকি আছিয়া? ওর কি কোন প্রিয় পুতুল ছিল? প্রিয় খাবার? কিরকম পোশাক পড়তে চাইতো? ও কি লিপস্টিক পরতে চাইতো?
বয়স হয়েছে। এখন মাঝে মাঝে নিজেকে প্রশ্ন করি- ওরে, সেই যে বলেছিলি, ‘… যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ/ প্রাণপণে পৃথিবীর সরাবো জঞ্জাল,এ বিশ্বকে এ-শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো আমি/ নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার’ সেই অঙ্গীকারের কি হলো! চলে যাওয়ার তো সময় চিলে আসছে, কতদূর কি করলি? নিজেকে নিজে জবাব দিতে পারি না। তবে কি এই গ্লানি নিয়েই চলে যেতে হবে!
এখন তো প্রতিবাদ করতেও ভয় পাই। একদল মাস্তান গজিয়েছে, ওরা বলে আমরা নাকি আমাদের মেয়েদের হয়ে প্রতিবাদও করতে পারবো না। ময়মনসিংহে ওরা আমাদের মিছিলে হামলা করেছে। ধর্ষণের প্রতিবাদ করেছে বলে ওরা লাকি আক্তারকে হুমকি দিচ্ছে। লাকি তো সবসময়ই প্রতিবাদ করে- প্রীতিলতা ব্রিগেড করেছিল লাকিরা। আমরা নাকি প্রতিবাদও করতে পারবো না!
আমি আসিয়া ও পূর্ণার কাছে লজ্জিত হই। না, ছেড়ে দিব না- এই পৃথিবীকে আমরা বদলে দিব, বলে দিলাম স্পষ্ট করে। এই পচা সমাজ আমরা রাখবো না। ভেঙে ফেলবো। যে সমাজে পূর্ণা ও আসিয়া বাঁচতে পারেনি আনন্দের সাথে এটা কেমন সমাজ! লাথি মারি তোদের এই সমাজে। এই সমাজ আমরা রাখবো না। দেখিস, আমাদের মেয়েরাই বদলে দিবে এই সমাজ।
শোক নয়, ক্রন্দন নয়- সমাজ বদলের শপথ গ্রহণ করুন।