।। জয় বাংলা রিপোর্ট ।।
খুন, হত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়নের বিচার এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণসহ সাত দফা দাবিতে গণমিছিলের ঘোষণা দিয়েছিল আটটি বাম রাজনৈতিক দল, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন। তবে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় তারা গণমিছিল স্থগিত করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেছে। শনিবার (১৫ মার্চ) সকাল পৌনে ১২টায় সমাবেশ শুরু হয়। পরে সমাবেশ থেকে সাত দফা দাবি ঘোষণা করা হয়।
আয়োজকেরা দাবি করেছেন, এ সমাবেশে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (একাংশ), উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএল, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, বাংলাদেশ খেতমজুর সমিতি, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি) প্রমুখ রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন অংশ নিয়েছে।
তবে ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ এবং উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর একাংশের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে দিয়ে বলা হয়েছে, এই কর্মসূচির সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এ ছাড়া গণমিছিলে লাকি আক্তারের অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও সমাবেশে তাকে দেখা যায়নি।
লিখিত বক্তব্যে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দিন সাত দফা দাবি পেশ করেন। দাবিগুলোর মধ্য অন্যতম হলো–ধর্ষণের শিকার হয়ে প্রাণ দেওয়া মাগুরার শিশু আছিয়াসহ সব হত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়নের বিচার করা; স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণ এবং জুলাই–আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা বলেন, ‘শুধু গত সাত মাসেরই নই, আমরা আওয়ামী লীগের সময়েরও খুন ধর্ষণ, নিপীড়নের বিচার দাবি করছি। সাগর-রুনি, তনু, মুনিয়া, আফসানা কোনো হত্যাকাণ্ডেরই এখনো বিচার হয়নি। সরকারের কাজ ছিল অভ্যুত্থানের আহতদের সুচিকিৎসা ব্যবস্থা করা। কিন্তু সরকার নতুন দল নিয়ে ব্যস্ত। তারা এখন পর্যন্ত গণহত্যাকারীদের বিচার করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি।’
তিনি বলেন, ‘এ সবের বিরুদ্ধে নামলে একটি স্বার্থান্বেষী মহল আমাদের নানাভাবে ট্যাগ দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আমরা দমে যাব না। দাবি না মানলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব। প্রয়োজন হলে দেশের এবং রাজধানীর প্রত্যেকটা স্থানে আন্দোলন গড়ে তুলব।’
গণমিছিল স্থগিত করার কথা জানিয়ে মাহির শাহরিয়ার বলেন, ‘আমাদের এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে একটি গোষ্ঠী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। গোয়েন্দা সংস্থা থেকে আমাদের বারবার সংক্ষেপে শেষ করার জন্য সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়েছে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পূর্বঘোষিত শহীদ মিনার থেকে টিএসসি গণমিছিল কর্মসূচি স্থগিত করা হলো।’
সিপিবি কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সতর্ক অবস্থা
রাজধানীর পল্টনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কার্যালয়ের সামনে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। শনিবার (১৫ মার্চ) সকালে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ‘মুক্তি ভবন’-এর সামনে গিয়ে দেখা গেছে, অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ সময় সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও লক্ষ্য করা গেছে।
হত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়নের বিচার এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণের দাবিতে গণমিছিলের কর্মসূচি দিয়েছে আটটি সংগঠন।
এর পাল্টায় পল্টনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)-এর কার্যালয়কে ‘ছাত্র-জনতার কার্যালয়’ বানানোর ডাক দিয়েছেন লেখক ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) মধ্যরাতে নিজের ভেরিফায়েড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে এই তথ্য জানান পিনাকী ভট্টাচার্য।
সিপিবির কার্যালয়ে হামলা হতে পারে—এমন আশঙ্কায় সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক ডা. সাজেদুল হক রুবেল বলেন, সারাদেশব্যাপী ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন চলছে।
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, জেলা, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিবাদ হচ্ছে। আমরা কমিউনিস্ট পার্টি শুক্রবারও ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ কমিটির প্রতিবাদ সমাবেশ করেছি। তার অংশ হিসেবে আজকের কর্মসূচির ডাক দিয়েছে দেশের পনেরোটি বাম ও গণতান্ত্রিক ছাত্র ও যুব সংগঠন। যেমন আমরা ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলন, স্বৈরতন্ত্রবিরোধী আন্দোলনে যেভাবে অংশগ্রহণ করেছি, আজকেও সেভাবে অংশ নেব।
তিনি আরও বলেন, আজকের কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, উদীচী শিল্পগোষ্ঠী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, জাসদ (আম্বিয়া অংশ)-এর ছাত্র সংগঠন বিএসএলসহ অন্যান্য সংগঠন।
এই কর্মসূচিকে ঘিরে নানা রকম প্রশ্ন ও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যেই দেখা যাচ্ছে দেশের বাইরে থেকে একজন ইউটিউব ইনফ্লুয়েন্সার সিপিবির অফিস দখল ও ভাঙচুরের ঘোষণা দিয়েছেন।
ডা. সাজেদুল হক রুবেল বলেন, আমরা শেখ হাসিনার আমলে আগস্ট মাসেও এ ধরনের আক্রমণের শিকার হয়েছি। শুধু তাই নয়, আরও বহুবার আমাদের অফিস আক্রমণের শিকার হয়েছে। ২০১৩ সালে হাসিনার আমলে আমাদের পার্টি অফিস পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। তখনও আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। ছাই থেকে ফিনিক্স পাখির মতো উঠে দাঁড়িয়েছি। আমরা কমিউনিস্টরা সব ধরনের স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে ছিলাম, আছি এবং থাকব।
সিপিবির মুক্তি ভবন ভাঙচুরে পিনাকীর ডাকে সাড়া দেয়নি ছাত্র-জনতা’র মব
মাগুয়ায় ধর্ষণের শিকার শিশুটির মৃত্যুতে শোক জানিয়ে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) কালো পতাকা উত্তোলন করলেও পিনাকীর ডাকে সাড়া দেয়নি ছাত্র- জনতার মব।
শনিবার রাজধানীর পুরান পল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় মুক্তিভবনের সামনে সিপিবি’র এ কর্মসূচি পালিত হয়।
কালো পতাকা উত্তোলন ছাড়াও আজ বেলা ৪টায় শোক মিছিলের ডাক দিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স।
বেলা সাড়ে ১০টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “এই সমাজে এবং পুরুষতান্ত্রিক লালসার শিকার মাগুরার শিশুটির যে মর্মান্তিক মৃত্যু, সেজন্য আমরা দেশব্যাপী শোকদিবসের কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। কর্মসূচী অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে কালো পতাকা উত্তোলন কর্মসূচি হবে। এরপর পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বিকেলে আমাদের শোকমিছিল বের করব।”
এর আগে শনিবার হত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়নের বিচার এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণের দাবিতে রোববার গণমিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করে বামপন্থী আটটি সংগঠন। কর্মসূচীর বিপরীতে ফেসবুকে পোস্ট পুরানা পল্টনের সিপিবি কার্যালয়কে ছাত্র-জনতার কার্যালয় বানানোর ডাক দেন লেখক ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য।
তবে পিনাকী ভট্টাচার্যের আহবানে কাউকে সিপিবি কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে দেখা যায়নি।
সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা পৌনে ১২টা পর্যন্ত মুক্তিভবনের সামনে দেখা যায়, সিপিবির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা শোক পতাকা উত্তোলন কর্মসূচিতে অংশ নিতে জড়ো হয়েছেন। মুক্তিভবন দখলের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে দলটির নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা যায়।
সিপিবি অফিসের সামনে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ। এছাড়াও সেনাবাহিনীর টহল দলকেও মুক্তিভবনের কাছাকাছি সতর্ক অবস্থানে দেখা যায়।
সিপিবির সভাপতি মো. শাহ আলম তার বক্তব্যে বলেন, “শিশু ধর্ষণের পর মৃত্যুর এই লজ্জ্বা বাংলাদেশ বুকে ধারণ করতে পারছে না। আমাদের দেশে মূল্যবোধের যে অবক্ষয় হয়েছে, সেটি কল্পনাতীত। তনু হত্যাকাণ্ড নিয়ে আমরাই গোটা দেশে জাগরণ সৃষ্টি করেছিলান, যদিও ওই ঘটনার বিচার এখনও হয়নি। ফেনীতে নুসরাতকে হত্যা করা হয়েছিল, তার জন্যও আমরা পদযাত্রা করে সোনাগাজীতে গিয়েছিলাম।”
তিনি বলেন, “মাগুরায় শিশুটির উপর যে বর্বর নির্যাতন করা হয়েছে, সেটি আমাদের গোটা জাতির উপর কালিমা লেপন করেছে। আজকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এত অবনতি হয়েছে সরকার এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। একটার পর একটা ঘটনা ঘটছে। তাই আমরা মনে করি নারীদের প্রতি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য, প্রোপাগাণ্ডা বিভিন্ন মাধ্যমে, পর্যায়ে দেওয়া হচ্ছে, সেটি আইন করে নিষিদ্ধ করতে হবে।”
গণমিছিলের উদ্যোগ নেওয়া দলগুলো হল—বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএল, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশ উদিচী শিল্পীগোষ্ঠী, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতি এবং বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি)।
ইনকিলাব মঞ্চ ব্যানারে মিছিল
তবে ইনকিলাব মঞ্চ ব্যানারে একদল তরুণ মিছিল বের করে। শাহবাগ থেকে শহীদ মিনারের উদ্দেশে মিছিল নিয়ে রওনা হয়েছিলেন ইনকিলাব মঞ্চের নেতা–কর্মীরা। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছবির হাট এলাকায় মিছিলটি আটকে দেয় পুলিশ। এ সময় তাঁরা সড়কে বসে পড়েন এবং শহীদ মিনারে অবস্থানরত বিভিন্ন বাম রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে শহীদ মিনার ত্যাগের আল্টিমেটাম দেন তাঁরা।
আজ শনিবার বেলা ১১টা থেকে শাহবাগ ও শহীদ মিনারে গণজাগরণ মঞ্চ ও বাম রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর উদ্যোগে গণমিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। অন্যদিকে, ইনকিলাব মঞ্চ এই কর্মসূচির বিরোধিতা করে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে।
শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের কোনো কার্যক্রম দেখা না গেলেও শহীদ মিনারে বাম রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলো গণমিছিল স্থগিত করে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। তাঁদের সেখান থেকে হটানোর দাবিতে ইনকিলাব মঞ্চের নেতা–কর্মীরা শাহবাগ থেকে শহীদ মিনারের দিকে মিছিল নিয়ে এগোতে থাকেন। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছবির হাট এলাকায় পৌঁছালে পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়।