সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইউনূস-সরকারের সমালোচনা- বিশেষ করে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈধ সরকারকে উৎখাত করে ড. ইউনূসের ক্ষমতা দখলের বিস্ফোরক অভিযোগ, মরোক্কোয় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব ছেড়ে ঢাকায় না ফিরে কানাডায় অবস্থান করাসহ কয়েকটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে কূটনীতিক মোহাম্মদ হারুন আল-রশিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার।
সম্প্রতি এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে তিনি ড. ইউনূস ও তার সরকারের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করে বলেন, শেখ হাসিনার নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করেছেন ড. ইউনূস।
আজ ১৪ই মার্চ, শুক্রবার নিজের ফেসবুক পেজ থেকে এই কূটনীতিক ইংরেজিতে যা লিখেছেন, তার বাংলা করলে দাঁড়ায়, “বাংলাদেশ এবং আমার জন্য একটি আবেদন। বিষয়: ড. ইউনূসের অধীনে বাংলাদেশের নৈরাজ্যের দিকে পতন—বিশ্বের নীরবতা বেদনাদায়ক। মানবতার বিবেকের উদ্দেশে: বাংলাদেশ আজ নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছড়িয়ে দেয়া বর্বরতার শিকার। লাখো মানুষ এক ভয়ংকর বাস্তবতার মুখোমুখি—মৃত্যু, নির্বাসন, অথবা উগ্রপন্থার কাছে আত্মসমর্পণ।”
এই রাষ্ট্রদূত ড. ইউনূসের সন্ত্রাসী কায়দায় ক্ষমতা দখলের বিষয়ে লিখেছেন: “২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, দেশটি তার ইতিহাসের এক অন্ধকারতম অধ্যায়ের মুখোমুখি হয়—একটি সুপরিকল্পিত সন্ত্রাসী আক্রমণ, যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈধ সরকারকে উৎখাত করে বাংলাদেশের ভিত্তিকে নড়িয়ে দেয়। যখন দেশ জ্বলছিল এবং শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছিল, মুহাম্মদ ইউনূস তখন আত্মপ্রকাশ করেন দখলদার হিসেবে। এই ঘটনা ইতিহাস কীভাবে মনে রাখবে? হয়তো এটি হবে সবচেয়ে ভয়াবহ এবং সফল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড—যা এক রাতের মধ্যে গোটা দেশকে বদলে দিয়েছে।”
ক্ষমতার পালা বদলকে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে হারুন আল-রশিদ আরো লিখেছেন: “বছরের পর বছর ধরে ডিজিটাল সন্ত্রাসীরা, যেমন পিনাকী ভট্টাচার্য ও ইলিয়াস হোসাইন পশ্চিমা দেশগুলোকে ব্যবহার করে বাংলাদেশে উগ্রপন্থার বিস্তার ঘটিয়েছে। তারা অনলাইনে সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার চালিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। ফ্রান্স থেকে পিনাকী এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইলিয়াস কীভাবে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরকে ধ্বংসের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে—তা দেখলেই তাদের ভয়াবহতা বোঝা যায়।”
উগ্রপন্থা ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে তিনি লিখেছেন: “বাংলাদেশে অবস্থানরত জিহাদিরা—যেমন ফরহাদ মজহার ও জাহেদুর রহমান—শেখ হাসিনার বাকস্বাধীনতার নীতির সুযোগ নিয়ে উগ্রপন্থার প্রচার চালিয়েছে। তারা হিন্দু ও ভারতের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিয়েছে, শুধু এই কারণে যে, শেখ হাসিনার শাসনে বাংলাদেশের হিন্দুরা নিরাপদ ছিল।”
ড. ইউনূস বাংলাদেশের জন্ম-পরিচয় এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলতে চাইছেন উল্লেখ করে এই রাষ্ট্রদূত আরো লিখেছেন: “ইউনূসের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এই জিহাদিরা বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ ও সাংস্কৃতিক পরিচয় ধ্বংস করেছে, ইতিহাস ও ঐতিহ্য মুছে দিয়েছে।
“তারা শুধু জাদুঘর, ম্যুরাল, ভাস্কর্য ও সাংস্কৃতিক প্রতীক ধ্বংস করেনি; শত শত সুফি দরগাহ এবং হিন্দু মন্দিরও গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ইউনূসের শাসনে বাংলাদেশ নারীদের প্রতি সবচেয়ে নির্যাতনমূলক দেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। সংখ্যালঘু ও ধর্মনিরপেক্ষ মানুষরা প্রতিনিয়ত আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে, আর হিজবুত তাহরির, আইএস ও আল-কায়েদা প্রকাশ্যে তাদের লাল-কালো পতাকা উড়িয়ে ইসলামি খিলাফতের দাবি জানাচ্ছে। জুলাই-আগস্ট মাসের সন্ত্রাসীরা এদের মধ্য থেকেই উঠে এসেছে।”
“কিন্তু ড. ইউনূস শুধু তাদের রক্ষা করেননি—তাদের ক্ষমতাও দিয়েছেন। তার সরকারে সন্ত্রাসীরা মন্ত্রী হয়েছে, আর যাদের তিনি মন্ত্রিত্ব দিতে পারেননি, তাদের রাজনৈতিক দল গঠনের সুযোগ করে দিয়েছেন।”
জানা যায়, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবকে নিয়ে বই লেখার ‘অপরাধে’ ড. ইউনূসের আস্থাভাজন ইউটিউবার জুলকারনাইন সায়ের সামির ‘নির্দেশে’ সুদূর মরক্কোর রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্বরত চৌকস সরকারি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হারুন আল-রশিদকে গত বছরের সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব থেকে অপসারণ করে অন্তর্বর্তী সরকার।
একই সাথে, ইউনূস-সমর্থক মবের হুমকি-ধমকি আমলে নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের ‘দোসর’ আখ্যা দিয়ে এই কূটনীতিককে দেশে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, তিনি জুলাই-আগস্টের সরকারবিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। সেই ‘অপরাধে’ তার বিচারের দাবি তোলে ইউনূস-সমর্থক মব। কিন্তু দেশে ফিরলে তার ওপর নিপীড়ন চালানো হতে পারে, সেই শঙ্কা থেকে এই কূটনীতিক দেশে না ফিরে বিদেশে রয়ে যান।
তার ফেসবুক পোস্টের প্রেক্ষিতে জ্বলন্ত অগ্নিতে ঘি ঢালার পরিস্থিতি হয়েছে ঢাকায়। সেজন্য তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউনূস-সরকার।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা, বিগত সরকারের পক্ষ নেওয়াসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে ঢাকায় না ফেরায় মরক্কোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ হারুন আল-রশিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।