হিউম্যানিটিজ বিভাগে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় না। কিন্তু নরওয়ে থেকে প্রতিবছর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন অগ্ৰগণ্য বুদ্ধিজীবীকে এই বিভাগে হোলবার্গ পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়। এই পুরস্কারের অর্থমূল্য ভারতীয় মুদ্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা। এই পুরস্কারকেই হিউম্যানিটিজ বিভাগের নোবেল পুরস্কার বলে গণ্য করা হয়।
এবার এই পুরস্কার পেতে চলেছেন প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তনী গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক। সাবঅলটার্ণ স্টাডিজ, পোস্টস্ট্রাকচারালিজম ও ডিকনস্ট্রাকশন থিয়োরি সহ বৌদ্ধিক ও রাজনৈতিক দর্শনের ক্ষেত্রে গায়ত্রী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন। শুধু তাত্ত্বিক হিসেবে নয়, পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যন্ত গ্ৰামে কিছুটা বিকল্প ধারার শিক্ষা প্রসারের ব্যাপারেও তিনি অগ্ৰগণ্য ভূমিকা গ্ৰহণ করেছেন।
আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে তিনি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। বাঙালি যখন সব জায়গা থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে তখন এই খবর কিছুটা আনন্দের বৈকি।
ড. গায়ত্রী চক্রবর্তী। ৮৩ বছর অতিক্রান্ত। গতোমাসে 24শে ফেব্রুয়ারি ছিল জন্মদিবস। জন্মেছিলেন যে বছর, মহাত্মা গান্ধী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো/ Quit India আন্দালন শুরু করেছিলেন। 1942।
🍁পড়তেন ডায়াসেসন স্কুলে। তারপরে ইংরেজির অনার্স নিয়ে,প্রেসিডেন্সী কলেজ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনি MA। সে তো ভুরি-ভুরি প্রতি বছরেই বের হচ্ছে। গায়ত্রীর মতো কে বিখ্যাত হচ্ছেন? আমেরিকার বিখ্যাত কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনি তুলনামূলক সাহিত্যে Phd করেন। বিয়ে করেছিলেন Talbot Spivak কে। এই ট্যালবটের সঙ্গে বিবাহ বন্ধন ছিল 1964-1977। প্রায় 12-13 বছর।
🍁তারপরে বন্ধুত্ব হয়, ইতিহাসবিদ ডঃ বাসুদেব চ্যাটার্জির সঙ্গে। কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের Phd। দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক ছিলেন। ভালো সেতার বাজাতেন। রবিশঙ্করের ঘরানার ছাত্র ছিলেন।2017য় উনি’ও দেহ রাখেন। গায়ত্রী নিঃসন্তান।
🍁গায়ত্রী’র মূল গবেষণা সাব-অল্টার্ন দের নিয়ে। মানে যাদের আমরা দলিত,আদিবাসী বলে থাকি। সমাজের ব্রাত্য মানুষের কথা। মহাশ্বেতা দেবীর বাংলা গল্প উনি অনুবাদ করলেন ইংরেজিতে। পদ্মভূষন পেলেন 2013 তে। আগের বছর পেয়েছিলেন Kyoto Award। 2025 এ পেলেন Holberg Prize।
🍁জীবনের শিক্ষকতা শুরু করেছিলেন, University of Iowa তে, 1965 সালে, Asst Professor হয়ে। 1966 সালে ফুল প্রফেসর হয়ে যান, এবং ডিরেক্টর, Comparative Literature Program এর। 1978 এ ,শিকাগো এবং টেক্সাস দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর পোষ্ট পেলেন। টেক্সাস এ পড়াতে শুরু করলেন অস্টিনে।এরপরে আমেরিকার বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে উনি পড়িয়েছেন।
🍁উল্লেখ্য 1986 তে উনি, পশ্চিমবঙ্গের সীমানায় ঝাড়খণ্ডে ও বিহারের দলিত অশিক্ষিত মানুষদের পড়াতে শুরু করলেন। মা-বাবা, শিবানী ও পরেশ চক্রবর্তী নামে ফাউন্ডেশন করে দলিতদের সেবা করতে শুরু করলেন।