Close Menu

    সাবস্ক্রাইব

    সর্বশেষ খবরের সাথে আপডেট থাকুন।

    জনপ্রিয় সংবাদ

    শেয়ারবাজার ধস থামছেই না: একদিনেই উড়ে গেল ১০ হাজার কোটি টাকা, সর্বস্বান্ত বিনিয়োগকারীরা

    May 9, 2025

    গ্যাস সংকটে বিপর্যস্ত শিল্পখাত, ৭০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ ঝুঁকিতে

    May 9, 2025

    কারাগারে ও পুলিশ হেফাজতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী হত্যার সঠিক তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে

    May 9, 2025
    Facebook Instagram WhatsApp TikTok
    Facebook Instagram YouTube TikTok
    JoyBangla – Your Gateway to Bangladesh
    Subscribe
    • হোম পেইজ
    • বিষয়
      • দেশ (Bangladesh)
      • আন্তজাতিক (International)
      • জাতীয় (National)
      • রাজনীতি (Politics)
      • অথনীতি (Economy)
      • খেলা (Sports)
      • বিনোদন (Entertainment)
      • লাইফ স্টাইল (Lifestyle)
      • শিক্ষাঙ্গন (Education)
      • টেক (Technology)
      • ধম (Religion)
      • পরবাস (Diaspora)
      • সাক্ষাৎকার (Interview)
      • শিল্প- সাহিত্য (Art & Culture)
      • সম্পাদকীয় (Editorial)
    • আমাদের সম্পর্কে
    • যোগাযোগ করুন
    JoyBangla – Your Gateway to Bangladesh
    Home » ১৯৭১: পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী থেকে পালিয়ে এসেছিলেন যারা
    National

    ১৯৭১: পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী থেকে পালিয়ে এসেছিলেন যারা

    JoyBangla EditorBy JoyBangla EditorMarch 19, 2025No Comments10 Mins Read
    Facebook WhatsApp Copy Link
    Share
    Facebook WhatsApp Copy Link

    ।। সালেক খোকন।।

    [পশ্চিম পাকিস্তানে ওই সময় সামরিক বাহিনীর অফিসারদের মনোভাব ও পূর্ব পাকিস্তানের গণহত্যায় তাদের প্রস্তুতিটা কেমন ছিল? কীভাবে পালিয়ে এসেছিলেন বাঙালি অফিসারা? ইতিহাসের অংশ গুরুত্বপূর্ণ ওইসব ঘটনাই জানার চেষ্টা করা হয়েছে জীবন বাজি রেখে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসা কয়েকজন বাঙালি অফিসারের বয়ানে।]

    মুক্তিযুদ্ধ তখন শুরু হয়ে গেছে। পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে নিযুক্ত অনেক বাঙালি অফিসারই ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানে। পরে তারা পাকিস্তান থেকে পালিয়ে কিংবা কৌশলে চলে এসে অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধে।

    জীবন বাজি রেখে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসেছিলেন যারা তাদের চোখে একাত্তরকে দেখার ইচ্ছে থেকেই বিভিন্ন সময়ে মুখোমুখি হই কয়েকজন বাঙালি অফিসারের। পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও রেখেছিলেন এই যোদ্ধারা।

    পশ্চিম পাকিস্তানে ওই সময় পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর অফিসারদের মনোভাব ও পূর্ব পাকিস্তানের গণহত্যায় তাদের প্রস্তুতিটা কেমন ছিল? কীভাবে পালিয়ে এসেছিলেন বাঙালি অফিসারা? ইতিহাসের অংশ গুরুত্বপূর্ণ ওইসব ঘটনা জানাতেই এ লেখার অবতারণা।

    করাচিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ (এসএসজি)-এর একজন এলিট কমান্ডো ছিলেন মাহফুজ আলম বেগ। মুক্তিযুদ্ধে প্রথমে নয় নম্বর সেক্টরের অপারেশনাল কমান্ডার। পরে তাকে শমশেরনগর সাব সেক্টরের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

    ওই সময়ের কথা তিনি বললেন যেভাবে, “করাচিতে বাঙালিদের একটি গ্রুপ ছিল আমাদের। কামাল সাহেব ছিলেন, পরে তিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি হন। ছিলেন সুলতান সাহেবও। উনিও আমেরিকার ট্রেনিংপ্রাপ্ত কমান্ডো। একাত্তরে ক্যাপ্টেন সুলতান নামে নাইন সেক্টরের ইনডাকশন ক্যাম্পের কমান্ডার ছিলেন। আর নূর মোহাম্মদ ক্যাপ্টেন বাবুল নামে ট্রুপস নিয়ে ফরিদপুরে যুদ্ধ করেছেন। আমরা তখন করাচিতে একত্রে ভাষাদিবস, নববর্ষসহ নানা অনুষ্ঠান পালন করতাম।

    আমাদের মধ্যে কিছু ইন্টেলিজেন্সের লোকজন ছিল। তাদের মুখেই শুনতাম পূর্ব পাকিস্তানে কিছু একটা ঘটবে। তখন চিন্তা হতো দেশকে নিয়ে। আন্ডার ওয়াটার ফিশিং করার ঝোঁক ছিল আমার। একদিন করাচি নেভাল পোর্টে ফিশিং করতে গিয়ে দেখি পূর্ব পাকিস্তানে আসার জাহাজে হেভি আর্মস অ্যামুনেশন লোড করা হচ্ছে। তখনই বুঝে যাই ওরা খারাপ কিছু ঘটাবে। কমান্ডো হয়ে তো বসে থাকতে পারি না!”

    একাত্তরের ফেব্রুয়ারি মাস। কয়েক দিনের ছুটিতে দেশে আসেন বেগ। তখন সুলতান সাহেব ও নূর মোহাম্মদসহ কয়েকজনের সঙ্গে মিটিং হয় তার। পরিকল্পনা হয় দেশে খারাপ কিছু ঘটার আগে তারাই করাচিতে তাকে মেসেজ পাঠাবেন। তখন ফিরে এসে তাদের সঙ্গে যুক্ত হবেন।

    তিনি বলেন, “হঠাৎ একদিন কমান্ডিং অফিসার টি এ খান একটি টেলিগ্রাম হাতে ছুটে আসেন। টেলিগ্রামে লেখা, ‘মাদার সিরিয়াস কাম শার্প’। বুঝে গেলাম এটি নূর মোহাম্মদ ভাই পাঠিয়েছেন। ‘মাদার’ মানে মাতৃভূমি। আর ‘সিরিয়াস’ লিখলে বুঝতে হবে যেভাবেই হোক ফিরে যেতে হবে।

    টি এ খান ছুটি দিতে চাইলেন না। কিন্তু আমি নিজেকে সংযত রাখলাম। পালিয়ে যাবো এটা বুঝতে দিলাম না তাকে। কারণ ওরা নানাভাবে আমাদের সন্দেহ করত।

    ফরমাল ছুটি না নিয়েই পালানোর পরিকল্পনা আঁটছি। টাকার প্রয়োজনে শখের মোটরসাইকেলটাও বিক্রি করি নয়শত টাকায়। ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল অলি। দেশ নিয়ে সেও চিন্তিত। পরিকল্পনার কথা শুনে তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকেও সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করল। কিন্তু প্লেনের টিকিট তো নাই। অলরেডি পাকিস্তান থেকে লোকজন আসা বন্ধ।

    কী করি? তখন মনে পড়ে পাকিস্তানি লেফটেন্যান্ট ইমতিয়াজের কথা। চেরিয়ট ট্রেনিংয়ে আমি ছিলাম তার ট্রেনার। ওই সময় সে প্রায় ৬০ ফিট পানির নিচে চলে যায়। ফলে আনকনশাস অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রাণে বাঁচিয়েছিলাম। সেই থেকেই পারিবারিকভাবে একটা বিশ্বস্ত সম্পর্ক ছিল তার সঙ্গে। পাঞ্জাবি হলেও তার কাছেই সাহায্য চাইলাম। সেও সবকিছু গোপন রেখেছিল। পাকিস্তান এয়ারলাইন্সে চাকরি করতেন তার এক আত্মীয়। তার মাধ্যমে দুটো টিকিট জোগাড় করে দেন ইমতিয়াজ। রাত দুটোর ফ্লাইটে পাকিস্তান থেকে রওনা হয়ে ৪ মার্চ ১৯৭১ তারিখ ভোরে পৌঁছি ঢাকায়।”

    মুক্তিযুদ্ধকালীন সুন্দরবন সাব-সেক্টর কমান্ডার মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে মাহফুজ আলম বেগ, ছবি: ব্যক্তিগত অ্যালবাম থেকে তোলা

    মুক্তিযুদ্ধকালীন সুন্দরবন সাব-সেক্টর কমান্ডার মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে মাহফুজ আলম বেগ, ছবি: ব্যক্তিগত অ্যালবাম থেকে তোলা

    আরেক মুক্তিযোদ্ধা লে. কর্নেল এস আই এম নূরুন্নবী খান (বীরবিক্রম)। মুক্তিযুদ্ধে থার্ড বেঙ্গল রেজিমেন্টের কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন। জীবদ্দশায় কথা হয় তার সঙ্গে। একাত্তরে তিনি ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট। জানুয়ারিতে বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে চলে যান পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে, কোয়েটা স্কুল অব ইনফ্যান্ট্রি অ্যান্ড ট্যাকটিকসে। ২৫ মার্চ পর্যন্ত চলে ওই ট্রেনিং।

    পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক প্রস্তুতি ও জেনারেলদের মনোভাব প্রসঙ্গে একটি অজানা ঘটনার কথা তুলে ধরেন তিনি। তার ভাষায়, “কোয়েটায় তখন বিভিন্ন কোর্সে প্রায় ১২–১৪শ আর্মি অফিসার অবস্থান করছিল। সেনাবাহিনীর কমান্ডোদের কমান্ডার ছিলেন মেজর জেনারেল মিঠ্ঠা খান। একদিন উনি কনফারেন্স রুমে সবাইকে ডাকলেন। বক্তৃতার একপর্যায়ে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রয়োজনে এক মিলিয়ন মানুষকে হত্যা করা হতে পারে বলে উল্লেখ করে এর জন্য অফিসারদের মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন। আর্মি ল্যাঙ্গুয়েজে এটাকে বলে ‘মিশন’ দেওয়া।

    কথাগুলো শুনে ঠিক থাকতে পারি না। দাঁড়িয়ে বলি, ‘স্যার, আমি কি জানতে পারি পাকিস্তানের কোন পার্টে এই কিলিং করার প্রয়োজন হতে পারে? প্রশ্ন শুনে জেনারেলের মাথা যায় গরম হয়ে। উত্তর না দিয়ে উনি আমাকে প্রশ্ন করে যেতে থাকেন, ‘আর ইউ ফ্রম ইস্ট পাকিস্তান? বলি, ‘ইয়েস’। ‘আর ইউ এ বেঙ্গলি’? বলি, ‘ইয়েস স্যার’। ‘আর ইউ এ আওয়ামী লীগার’? আমি বলি ‘সরি স্যার। দিস ইজ অ্যান আর্মি ইনস্টিটিউট। হাউ ক্যান আই বি এ আওয়ামী লীগার।’

    উনি উত্তেজিত হয়ে যান। বলেন, ‘ইউ অফিসার শাটআপ অ্যান্ড সিটডাউন। তখন পাশে বসা সহকর্মীরা হাত ধরে আমাকে বসিয়ে দেয়। ওইদিনই বুঝেছিলাম ওরা ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। বরং আর্মি ক্র্যাকডাউন ঘটাবে।”

    পশ্চিম পাকিস্তানদের সামরিক প্রস্তুতি কেমন ছিল? নূরুন্নবী যা দেখেছেন, “কোয়েটায় ছিল সিক্সটিন রিজার্ভ ডিভিশন। একটা আর্মির লাস্ট রিসোর্স হলো রিজার্ভ ডিভিশন। কিন্তু দেখলাম কয়েকদিন পরপরই রিজার্ভ থেকে কয়েক ইউনিট ইস্ট পাকিস্তানে পাঠানো হচ্ছে। এমন কী ঘটছে সেখানে রিজার্ভ থেকে সেনা পাঠাতে হবে! আমরা গোপনে এসব নিয়ে আলোচনায় বসতাম। একসময় পাকিস্তান থেকে পালানোর পরিকল্পনা আঁটি।

    ২৭ মার্চ সকালের দিকে যাই আর্মি ট্রানজিট ক্যাম্পে। সেকেন্ড কমান্ডো ব্যাটালিয়ানকে অপারেশনের জন্য তখন ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। এক পাশে ফলিং করিয়ে তাদের ব্রিফ করছেন এক অফিসার। উর্দুতে বলছিলেন, ‘হিন্দুদের দিয়ে পাকিস্তানকে ধ্বংস করার কাজে নেমেছে ইন্ডিয়া। বাঙালি মালাউনদের মারার জন্য আমার যাচ্ছি। দেশমাতৃকার জন্য এটা তোমাদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ। ওখানে আমরা শুধু মাটি চাই। মানুষের প্রয়োজন নেই। বাংলায় কথা বলার মতো মানুষ আমরা রাখব না।’

    ট্রানজিট ক্যাম্পে সাদেক নেওয়াজ নামে এক বাঙালি সুবেদারকে পাই। আমার ইচ্ছার কথা শুনে উনি বলেন, ‘সর্বনাশ স্যার। ঢাকা যাবেন না। সেখানে সব মাইরা ফেলছে। দুই ডিভিশন তো নিজ হাতে পাঠাইছি। ওরা তো মানুষ রাখব না স্যার’।

    বললাম, ‘বাঁচার জন্য না, কিছু করার জন্য যাচ্ছি।’

    শুনেই মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। অতঃপর একটা চিরকুটে নাম, আর্মি নম্বর আর ডেস্টিনেশন লিখে দিলেন। তখন ওটাই ছিল বিমানের টিকিট। দেশে নামতেই তেজগাঁও এয়ারপোর্টকে মনে হলো যুদ্ধক্ষেত্র। উঠি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে, অর্ডিন্যান্স মেসে। দেখলাম কচুক্ষেত এলাকায় লাশ পড়ে আছে। ক্যান্টনমেন্টের জায়গায় জায়গায় আর্মি ট্রুপস। চলছে ব্রিফিংও।”

    একাত্তরে কিলো ফ্লাইট নামক দুঃসাহসিক এক অভিযানের এক অগ্রসেনানী মুক্তিযোদ্ধা ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট শামসুল আলম (বীর উত্তম)। একাত্তরের মে মাস পর্যন্ত ছিলেন রাওয়ালপিন্ডিতে।

    ৭ মার্চের পর পশ্চিম পাকিস্তানে কী ঘটছিল? শামসুল আলম তা বললেন এভাবে, “বঙ্গবন্ধুর ডাকে পূর্ব পাকিস্তানে তখন নন-কোঅপারেশন মুভমেন্ট চলছে। হঠাৎ একদিন আমাদের ডেকে বলা হলো, নন-কোঅপারেশন মুভমেন্টের কারণে পিআইএ পুরোপুরি অপারেট করতে পারছে না। প্যাসেঞ্জারদের যেতে-আসতে সমস্যা হচ্ছে। তোমরাও একটু সার্পোট দাও, প্যাসেঞ্জার নিয়ে যাও।

    ইস্ট পাকিস্তানে যাওয়ার কথা শুনে খুশি হয়ে গেলাম। প্রথম যেদিন ঢাকায় ল্যান্ড করলাম সেদিন বিমানের লোড মাস্টার এক ছেলে এসে বলল, ‘স্যার, আপনি কি জানেন আমরা কাদের নিয়ে এলাম?

    বললাম, ‘না, তুমি তো জানো। তুমি তুলেছ।’

    সে বলে স্যার, ‘এরা একজনও সিভিলিয়ান প্যাসেঞ্জার না, সব আর্মির সোলজার।’

    শুনেই একটা ধাক্কা খেলাম। যতগুলো এয়ারক্রাফট নিয়ে আসছি সবগুলো ভর্তি ছিল সোলজার! শিপে করে নেভিও আনছে অনেক। তখনই বুঝে যাই সব ধোঁকাবাজি। ওরা পাওয়ার দেবে না। বরং খারাপ কিছু ঘটাবে। আমি লাস্ট ফ্লাইট নিয়ে আসি ১৮ মার্চ। এরপরই ফিরে যাই রাওয়ালপিন্ডিতে।”

    পালিয়ে আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “২৫ মার্চের পর পশ্চিম পাকিস্তানে থাকা বাঙালি বৈমানিক সবার ফ্লাইট বাতিল করে গ্রাউন্ডেড করে রাখা হয়।

    মে মাসে ছুটির আবেদন করি করাচি যাওয়ার। সাত দিনের ছুটিও মঞ্জুর হয়। দুটো টিকিট কাটলাম। রাওয়ালপিন্ডি টু করাচি, করাচি টু রাওয়ালপিন্ডি। করাচি গিয়ে ঢাকায় যাওয়ার টিকিটও খুঁজছি। বহু কষ্টে এক বন্ধু একটি টিকিট কিনে আনে।

    যেদিন রাওয়ালপিন্ডিতে ফিরে যাওয়ার কথা ওই দিনই এয়ারপোর্ট থেকে ঢাকার বিমানে চড়ে বসি। মূলত এটাই ছিল আমার প্ল্যান। বর্ডার দিয়ে চোরের মতো না গিয়ে রাজার মতো দেশে চলে যাব। একাত্তরের জুন মাসের ৩ তারিখ বিকাল ৪টা ৫৫ মিনিটে পিএআই’র ফ্লাইটে ল্যান্ড করি ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে।”

    ঢাকায় এসেই গ্রেফতার হন শামসুল আলম। অতঃপর তার ওপর চলে নিদারুণ ও অমানবিক নির্যাতন। পরে ছাড়া পেয়ে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে।

    ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ইকবাল রশীদ একাত্তরে ছিলেন পাকিস্তান এয়ারফোর্সের পাইলট অফিসার। পোস্টিং ছিল পিএ বেইজ বাদিনে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ছয় নম্বর সেক্টরের চিলাহাটি সাবসেক্টরের কমান্ডার ছিলেন তিনি।

    পাকিস্তানে থেকেই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শোনেন ইকবাল রশিদ। তার ভাষায়, “এক আর্মি বন্ধু ছুটিতে গিয়েছিল দেশে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের রেকডিং করা একটা ক্যাসেট সংগ্রহ করে সে। ক্যাসেটের ভেতরের টেপটা পেন্সিলে রোল করে লুকিয়ে নিয়ে আসে এখানে। ওটা সেট করে সবাই মিলে শুনলাম। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশগুলো আমাদের প্রবলভাবে আন্দোলিত করে। তখনই বুঝে যাই, এটাই স্বাধীনতার ঘোষণা। যুদ্ধ অনিবার্য। এরপর আর কোনো নির্দেশনারও প্রয়োজন পড়েনি।”

    এরপর কীভাবে তিনি দেশে ফিরলেন? তিনি বললেন যেভাবে, “২৫ মার্চের পর ওরা সকল বাঙালি অফিসারকে বিভিন্ন জায়গা থেকে এনে করাচিতে ‘কোরাঙ্গি ক্রিক’ নামক জায়গায় রাখে। সেখানে আমি ছাড়াও ফকরুল আজম (এয়ার চিফ হয়েছিলেন), ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মিজান, উইং কমান্ডার রউফ, শামসুল ইসলাম, মুজাহিদ প্রমুখ ছিলেন। ওখান থেকে সবাইকে পরে একটি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। শুনেছি ওই ক্যাম্পে অফিসাররা অনেক কষ্ট করেছেন। সেপ্টেম্বরে গ্রুপ ক্যাপ্টেন সাঈদ আহমেদের বিশেষ সহযোগিতায় ছুটি পেয়ে দেশে ফিরি।”

    এয়ারফোর্সের আরেক মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত স্কোয়াড্রন লিডার লিয়াকত আলী খান (বীর উত্তম)। সত্তরের নির্বাচনের পরের একটি ঘটনার কথা তিনি তুলে ধরেন যেভাবে, “জাঙ্গল সারভাইভার কোর্স করছি পাকিস্তানের মারিতে, নাথিয়াকালী নামক জায়গায়। কোর্স শেষে একটা সেলিব্রেশন পার্টি হয়। পার্টি শেষ হওয়ার আগেই চলে যাই রুমে।

    এক রুমে ছিলাম তিনজন। আমি ছাড়া বাকি দুইজন পাঞ্জাবি— খুরশিদ ও তাহের। ওরা রাতে খুব ড্রিঙ্ক করে ফেরে। রুমে এসেই হৈ চৈ করতে থাকে। বঙ্গবন্ধুকে গালাগাল করে বলে, ‘বেটা হিন্দু কা বাচ্চ’।

    প্রথম সহ্য করতে থাকলাম। বললাম, ‘বাছ কারো ভাই, বাছ করো’।

    ওরা থামল না। বলে, ‘তু শালা বাঙ্গাল। মুজিবকা বাচ্চা’। আর সহ্য করতে পারলাম না। রুমে একটা লাঠি পাই। সেটা দিয়েই ওদের পেটাতে থাকি। এমনটা করব ওরাও ভাবতে পারেনি।

    পূর্ব পাকিস্তান তখন উত্তপ্ত। বঙ্গবন্ধুকে গালি দেওয়ার প্রতিবাদ করায় বিমানবাহিনীতে শাস্তি দেওয়া হয়েছে— এটি জানাজানি হয়ে গেলে পলিটিক্যাল ইস্যু তৈরি হবে। মূলত এটা চিন্তা করেই আমাকে ওরা শাস্তি দেওয়া থেকে বিরত থাকে। এরপরই ফ্লাইং অফিসার হয়ে যাই। পোস্টিং হয় নাইটিন স্কোয়াড্রনে।’

    মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত স্কোয়াড্রন লিডার লিয়াকত আলী খান (বীর উত্তম)

    মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত স্কোয়াড্রন লিডার লিয়াকত আলী খান (বীর উত্তম)

    ২৫ মার্চে ওখানে কি ঘটল? তিনি বলেন, “বাঙালিদের ডেকে ওরা বলল, ‘পুর্ব পাকিস্তানে একটু ঝামেলা হচ্ছে তোমরা আপাতত ফ্লাইং থেকে বাইরে থাক’। কয়েকদিন পরই বলল, ‘তোমরা বাইরে যেও না। মেসেই থাকবে সবাই’। বেসিক্যালি হাউজ অ্যারেস্টের মতো করে রাখে। এভাবে মাসখানেক কেটে গেল। দেশে ফিরতে চাইলাম। কিন্তু কোনো বাঙালিকেই ছুটি দিচ্ছিল না তখন।

    আমাদের বেইজ কমান্ডার ছিলেন এয়ার কমোডর চৌধুরী রব নেওয়াজ। রিসালপুরে তার অধীনেই কাজ করেছি। তার ছেলে পারভেজ চৌধুরী ছিল আমার কোর্সমেট। আব্বাকে চিঠি লিখে জানালাম কৌশলে মায়ের অসুস্থতার কথা লিখে যেন টেলিগ্রাম করেন। তিনি তাই করলেন। টেলিগ্রাম হাতে পেয়েই চলে যাই রব নেওয়াজের বাড়িতে।

    সব শুনে উনি বললেন, ‘উপরের নির্দেশ, পূর্ব পাকিস্তানি কাউকেই ছুটি দেয়া যাবে না। আমি তো কিছু করতে পারব না।’

    হাল ছাড়ি না। শেষে একদিন কান্নাকাটি শুরু করি। তখন তিনি এয়ার সেক্রেটারিকে ফোন করে আমার মায়ের অসুস্থতার কথা জানান এবং ছুটি শেষে ফিরে আসব এই গ্যারান্টি তিনি নিজেই তাকে দেন।

    মূলত তার সহযোগিতাতেই এক সপ্তাহের ছুটি মেলে। মে মাসের তিন তারিখে একটা ট্রান্সপোর্ট এয়ারক্রাফটে চলে আসি ঢাকায়। ওই এয়ারক্রাফটে সিভিল পোশাকে সবাই ছিল পাকিস্তানি সেনা। তখনই বুঝে যাই পূর্ব পাকিস্তানে ওরা খুব রক্তক্ষয়ী কিছু ঘটাচ্ছে।”

    এ বীর মুক্তিযোদ্ধারা পৌরাণিক কোনো চরিত্র নয়, বরং তারা বাঙালি বীর। তাদের রক্ত, ঘাম, ত্যাগে সৃষ্ট বাংলাদেশেই আমরা দাঁড়িয়ে। আজকের সবকিছুই আগামীর ইতিহাসের অংশ হবে তা নয়, কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অনাদিকাল পর্যন্ত আমাদের আলোড়িত করবে। তাই পাকিস্তান সামরিক বাহিনী থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া এই মুক্তিযোদ্ধারাও থাকবেন ইতিহাসের অংশ হয়ে।

    picks
    Share. Facebook WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপরীক্ষায় ফেল, পাশ না করালে মামলা করবেন ছাত্র
    Next Article সংখ্যালঘু নির্যাতন ও মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের সতর্কবার্তা
    JoyBangla Editor

    Related Posts

    শেয়ারবাজার ধস থামছেই না: একদিনেই উড়ে গেল ১০ হাজার কোটি টাকা, সর্বস্বান্ত বিনিয়োগকারীরা

    May 9, 2025

    গ্যাস সংকটে বিপর্যস্ত শিল্পখাত, ৭০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ ঝুঁকিতে

    May 9, 2025

    কারাগারে ও পুলিশ হেফাজতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী হত্যার সঠিক তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে

    May 9, 2025

    জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলা যদি অপরাধ হয়, তাহলে আমি সেই অপরাধে অপরাধী হতে চাই’ -আইভী

    May 9, 2025
    Leave A Reply Cancel Reply

    সম্পাদকের পছন্দ

    শেয়ারবাজার ধস থামছেই না: একদিনেই উড়ে গেল ১০ হাজার কোটি টাকা, সর্বস্বান্ত বিনিয়োগকারীরা

    May 9, 2025

    গ্যাস সংকটে বিপর্যস্ত শিল্পখাত, ৭০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ ঝুঁকিতে

    May 9, 2025

    কারাগারে ও পুলিশ হেফাজতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী হত্যার সঠিক তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে

    May 9, 2025

    জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলা যদি অপরাধ হয়, তাহলে আমি সেই অপরাধে অপরাধী হতে চাই’ -আইভী

    May 9, 2025
    • Facebook
    • Twitter
    • Instagram
    • TikTok
    মিস করবেন না
    Economics

    শেয়ারবাজার ধস থামছেই না: একদিনেই উড়ে গেল ১০ হাজার কোটি টাকা, সর্বস্বান্ত বিনিয়োগকারীরা

    By JoyBangla EditorMay 9, 20250

    দেশের শেয়ারবাজারে টানা দরপতনের ধারা আরও এক ধাপে গভীর হলো। বুধবার একদিনেই বাজার থেকে উধাও…

    গ্যাস সংকটে বিপর্যস্ত শিল্পখাত, ৭০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ ঝুঁকিতে

    May 9, 2025

    কারাগারে ও পুলিশ হেফাজতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী হত্যার সঠিক তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে

    May 9, 2025

    জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলা যদি অপরাধ হয়, তাহলে আমি সেই অপরাধে অপরাধী হতে চাই’ -আইভী

    May 9, 2025

    সাবস্ক্রাইব

    সর্বশেষ খবরের সাথে আপডেট থাকুন।

    About Us
    About Us

    মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও লালন করে দেশ ও বিদেশের খবর পাঠকের কাছে দুত পৌছে দিতে জয় বাংলা অঙ্গিকার বদ্ধ। তাৎক্ষণিক সংবাদ শিরোনাম ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পেতে জয় বাংলা অনলাইন এর সঙ্গে থাকুন পতিদিন।

    Email Us: info@joybangla.co.uk

    Our Picks

    শেয়ারবাজার ধস থামছেই না: একদিনেই উড়ে গেল ১০ হাজার কোটি টাকা, সর্বস্বান্ত বিনিয়োগকারীরা

    May 9, 2025

    গ্যাস সংকটে বিপর্যস্ত শিল্পখাত, ৭০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ ঝুঁকিতে

    May 9, 2025

    কারাগারে ও পুলিশ হেফাজতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী হত্যার সঠিক তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে

    May 9, 2025

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.