।। হামিদ মোহাম্মদ।।
তুলসির পরের ধমক পড়েছে হাসনাত আবদুল্লাহর ঘাড়ে। উত্তরপাড়ার মহাজন নাকি এ ধমক দিয়েছেন। হাসনাত আবদুল্লাহ আমাদের ত্যাড়া ছেলে। ত্যাড়ামি করে স্ট্যাটাস দিয়েছে, হাউমাউ করে বলেছে, কাল না-হয় পরশু সে গুম বা মরে যেতে পারে অথবা কেউ মেরে ফেলতে পারে।
আমার আগের লেখার আশংকা ছিল পরের ধমকেরই। মানে আওয়ামীলীগকে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়ার ধমক। তা সত্যি হলো ২৪ ঘন্টার মাথায়।
আওয়ামীলীগকে রাজনীতির আসরে আসতে সুযোগ দিতে হবে, না দিলে খবর আছে। প্রতিবাদ করে আমাদের ত্যাড়া বালক রাগ-গোস্সা করে উত্তরপাড়া থেকে বেরিয়ে এসেছেন। বালকসূলভ কথাবার্তা বলছেন বেরিয়ে আসার পর। রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়ে মোকাবিলা না করে জোরজবরদস্তি দিয়ে মোকাবিলা করা পরিণাম ভালো হয় না, সেটা না ভেবে গোস্সা করেছেন তিনি। মানুষকে চেতানোর জন্য কথা বলা এক,বুদ্ধিবৃত্তিক কথা বলা আরেক। হাসনাত আবদুল্লাহ গায়ের জোরে যে কথাটি ‘আওয়ামীলীগ নাই করে দেয়া’র প্রত্যয় ব্যক্ত করছেন,সেটা যে বালখিল্যতা, তা জানার জন্য বড় বিশেষজ্ঞ হওয়া লাগে না।এটা রাজপথে ‘শ্লোগান’ হিসাবে বলা বা ব্যবহার করা যায় বটে। বাস্তবে মাথা দিয়ে খেলতে হয়। এই খেলায় চেতে গেলে হেরে যাওয়ার আশংকা বেড়ে যায়।
উত্তরপাড়ার মহাজন বা উত্তরপাড়ার দপ্তর রাজনীতির কথা বলছেন তাকে ডেকে নিয়ে, রাজনীতিসুলভ উত্তর দেয়ার পরিবর্তে ঐ দপ্তরকে খোলামাঠে প্রকাশ্য করে নেয়ার মতো বক্তব্য সঠিক হয়নি।এতে অবশ্যই পক্ষ–বিপক্ষ তৈরী হয়েছে। অনেকেই বাহবা দিচ্ছেন হানসাতকে, অনেকে আবার উত্তরপাড়ার দপ্তরের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রশংসা করছেন।
আমরা দেখছি, তুলসির কথার প্রতিবাদ করে আমাদের প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর একটি স্যাটাস দেয়। সেটা আবার ফরাসী দূতাবাসের ওয়েবসাইটে আপলোডে করে চাকরি হারিয়েছেন তিন কর্মকর্তা। অন্যদিকে, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত এবং বাংলাদেশ মন কষাকষি এ নিয়ে। কোথাকার পানি কোথায় গড়ায়, সেটা দেখার সময় যখন সামনে, তখনিই আমাদের হাসনাত আবদুল্লাহর কান্নাকাটি।
সুত্র একই, সেই আওয়ামীলীগকে নিয়ে ধমক দুটিই।বর্হিরাষ্ট্র থেকে ধমক আর আভ্যন্তরীন মহল থেকে ধমক, প্রসঙ্গ এক। আমার তো মনে হয় উত্তপাড়ার মহাজনও বিদেশী বন্ধুদের নিকট থেকে ধমক খেয়েই হাসনাত আবদুল্লাহর স্মরণাপন্ন হয়েছেন। কেননা, তার লালনপালন করা ‘সাতমাইয়া’ সন্তান আবদুল্লাহকে তো বলতে হয়, ধমকটা যে তার ওপর পড়েছে,যেটা ‘বিলাতি’ ধমক। বিলাতি বলতে আমরা বড় কোনো বেগুন বা টমোটো বা লাউকে বলতে অভ্যস্ত, যে বড় মানেই ‘বিলাতি’। এটা আমাদের উপনিবেশবাদী চিন্তা। সেই উপনিবেশিক ধমক আমাদের সঙ্গ ছাড়ে না। সেই গানের কলি- /‘নদীর ধারে সর্ষে ফুল/’বন্ধু খেলো জাতি-কুল/ বন্ধু আমায় ছাড়ে না/. . .ছেড়ে ছেড়ে দে/ ঝেড়ে বাঁধি চুল’।
উত্তরপাড়ার মহাজন থেকে শুরু করে, হাসানাত আবদুল্লাহ পর্যন্ত সকলেরই গতরে ধূলো প্যাঁক-কাদা লেগে গেছে ‘নদীর ধারের সর্ষে খেতের’ প্রেমে।
এই ধূলো-প্যাঁক-কাদা লাগিয়েছেন গত জুলাই-আগাস্টে দ্বৈত মহড়ায়। পুঁত-পবিত্র উত্তরপাড়ায় সেদিন নাকি জাতিসংঘের ‘জোসনা’ ঝরেছিল, পড়েছিল ‘হাসনাত আবদুল্লাহদের উঠোনে। এখন দেখা যাক, উত্তরপাড়ার ঘর যদি পুড়ে, আবদুল্লাহদের উঠোন তাতায় কিনা?আওয়ামীলীগ এসে জোসনা মাখে কিনা, কার উঠোনে!