।। মিজানুর হক খান।।
আজ ২৬শে মার্চ, মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় গণহত্যা দিবস। লেখার শুরুতেই শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করছি সেই সকল শহীদদের যাদের ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ কালরাত্রিতে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা যাদেরকে নির্বিচারে হত্যা করেছিলো এবং একই সাথে স্মরণ করছি মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ ও বীরাঙ্গনাদের। শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি জাতির মুক্তির মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি, যাকে ছাড়া বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ কল্পনা করা অসম্ভব।
এই লেখাটি প্রকাশিত হবার প্রাক্কালে গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে অনেক কিছুই ঘটে গিয়েছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশে হিজবুত তাহরীর, জামায়াত-ই-ইসলামী, এবি পার্টি, ও অধুনা গঠিত এন.সি.পিসহ অন্যান্য ডানপন্থী দলগুলোর সমন্বয়ে গঠিত জঙ্গীগোষ্ঠীর বিতর্কিত ও সহিংস কর্মকান্ডে সমগ্র দেশ আজ পর্যুদস্ত। দেশে আবার ফিরে এসেছে ১৯৭১ সালের হায়েনারা, পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর দোসর রাজাকার, আলবদর ও আলশামসের প্রেত্মাতারা মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপক্ষতা-কে মুছে দিয়ে জোর করে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে অতি ডানপন্থী ধর্মাশ্রয়ী আদর্শকে। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বাড়িকে ধ্বংস করে দেয়া। পাঠককে মনে করিয়ে দিতে চাই যে, বঙ্গবন্ধুর বাড়ি এপর্যন্ত দুইবার আক্রমনের শিকার হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট আমরা হারিয়েছি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারকে। শত চেষ্টা করেও জাতির পিতা, বঙ্গমাতা, ছোট্ট রাসেল, শেখ কামাল ও শেখ জামাল কাউকেই আমরা ফিরে পাবো না। তবু এতদিন বাড়িটি ছিলো। বাড়িটির সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠবার সময় মনে হত এই সিঁড়িতেই পড়ে ছিলো আমার পিতার রক্তাক্ত মৃতদেহ, চোখের সামনে ফুটে উঠতো ইতিহাসের কত ঘটনা, কত চরিত্র! কিন্তু অর্বাচীন নব্য রাজাকারের দল সেই বাড়িটিকেও ধ্বংস করে দিয়েছে, ওদের ভয় বঙ্গবন্ধুর সেই ভরাট কন্ঠ ৩২ নম্বরের বাড়িটি থেকেই আবার স্বাধীনতা ঘোষণা করবে, বীর বাঙালি আবার গর্জে উঠবে একাত্তরের পরাজিত শক্তির বিরুদ্ধে। পুন:প্রতিষ্ঠা করবে মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে।
এই প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখেই আজকের এই লেখা এবং লেখাটির দুইটি অংশ রয়েছে। প্রথম অংশে ২৫শে মার্চের কালরাত্রির বর্ণনা থাকবে এবং একই সাথে থাকবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুখে স্বাধীনতার ঘোষণার বর্ণনা। প্রবন্ধটির দ্বিতীয় অংশে বর্তমান প্রেক্ষাপটে মহান স্বাধীনতা দিবসের গুরুত্ব, বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার স্বীকৃতির প্রয়োজনীয়তা এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের মাঝে স্বাধীনতা দিবসের সঠিক ইতিহাস কিভাবে ছড়িয়ে দেয়া যায় – সেই সংক্রান্ত আলোচনা।
১.
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাঙালি জাতির জন্য বিভীষিকাময় একটি রাত। যে রাতে বাংলাদেশকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছিল পাক হানাদার বাহিনী। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তন্দ্রাচ্ছন্ন নিরপরাধ বাঙালির ওপর অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে দীর্ঘদিনের রক্তপিপাসায় কাতর হয়ে যে নারকীয় বর্বরোচিত নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল পাকবাহিনী সে রাত ইতিহাসে কালরাত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। রাতের নিস্তব্ধতাকে কাজে লাগিয়ে একদল পিশাচ মেতে উঠেছিল সেদিন বাঙালি হত্যার মহাযজ্ঞে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এ অপারেশনের নাম দেয় অপারেশন সার্চলাইট। (বিভাস গুহ, ২০২২)
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ শেষ রাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস পিলখানা, রাজারবাগ পুলিশ ফাঁড়ি, পুরানো ঢাকার শাখারীবাজার, তাঁতীবাজার ও ঢাকেশ্বরী মন্দির ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল, শহীদুল হক হল, ফজলুল হক হল, ইকবাল হল ও জগন্নাথ হল পাকিস্তানি হানাদারদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। হানাদাররা হলের রুমে রুমে তল্লাশি চালিয়ে নির্বিচারে ছাত্র-ছাত্রী-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী হত্যার পৈশাচিক উল্লাসে মেতে ওঠে। ইকবাল হলে ওরা ১১ ছাত্রকে লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে গুলি করে৷ এরপর রোকেয়া হলে আগুন ধরিয়ে দিলে ছাত্রীরা হল থেকে দৌড়ে বের হয়ে আসে৷ তাদের তখন মেশিনগান দিয়ে অবিরাম গুলি করা হয়৷ অনেককে হত্যা করা হয় বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে৷ কামানের গোলা ছুঁড়ে ধ্বংস করা হয় শহীদুল হক হল, হত্যা করা হয় ৬ জন নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্রদের। (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেইজ থেকে, ২০২৪)
ওই রাতে এবং পরের দিন ২৬ মার্চ ভোরে ৬৬ জনের অধিক মানুষকে হত্যা করে পাকিস্তনিরা জগন্নাথ হলের উত্তর বাড়ির সামনের মাটিতে পুঁতে রাখে। সেই ভয়াল রাতে জগন্নাথ হল পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়। সেদিন যারা শহিদ হয়েছিলেন, সেই গণকবরের নামফলকে ৬৬ জনের নাম উল্লেখ আছে। বুয়েটের শিক্ষক ড. নূরুল উল্লাহর মুভি ক্যামেরায় এই ভয়াল দৃশ্যধারণ করা হয়েছিলো। (বি.বার্তা২৪, ২০২৩) ২৫শে মার্চ রাতে জগন্নাথ হলে ঠিক কতজন শহীদ হয়েছেন তা আজো অজানা। তবে ধারণা করা হয় জগন্নাথ হল মাঠে প্রায় দুই শতাধিক ছাত্র, কর্মচারী, শিক্ষক ও সাধারণ মানুষকে নিষ্ঠুরভাবে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করেছিল হানাদার বাহিনী। (বাংলা ডেইলি স্টার, ২০২৩) জগন্নাথ হল ও পুরানো ঢাকার হিন্দু অধ্যূষিত এলাকাগুলো আক্রমনের মূল লক্ষবস্তু ছিলো কারণ পাকিস্তানের সামরিক জান্তা সবসময়ই হিন্দুদের ‘ভারতের সমর্থক’ বা ‘ভারতের দালাল’ বলে দাবি করে আসছিলো। এই রাতেই ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব, ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯ জন শিক্ষককে হত্যা করা হয়। (আসিফুর রহমান সাগর, ২০২৩)
বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই পরিস্থিতিতে কি করতে হবে তার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রস্তুতি নেবার ঘোষণাতো তিনি ৭ মার্চ রেসকোর্সে ময়দানে দিয়েই রেখেছিলেন। সমগ্র জাতি ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে উন্মুখ হয়ে বসেছিলো বঙ্গবন্ধুর ডাকের অপেক্ষায়। গ্রেপ্তারের আগেই, ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ইংরেজিতে লেখা সেই ঘোষণা পত্রে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘This may be my last message, from today Bangladesh is Independent. I call upon the people of Bangladesh wherever you might be and with whatever you have, to resist the army of occupation to the last. Your fight must go on until the last soldier of the Pakistan occupation army is expelled from the soil of Bangladesh and final victory is achieved’. (তোফায়েল আহমেদ, ২০২৩)
এর বাংলা অনুবাদ দাঁড়ায় এমন: ‘এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশের জনগণ, তোমরা যে যেখানেই আছ এবং যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শেষ পর্যন্ত দখলদার সৈন্য বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য আমি তোমাদের আহ্বান জানাচ্ছি। পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর শেষ সৈনিকটিকে বাংলাদেশের মাটি থেকে বিতাড়িত করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।’ (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ২০২৪)
স্বাধীনতার ঘোষণার গুরুত্ব সম্পর্কে পাকিস্তানের তৎকালীন পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক বাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজীর জনসংযোগ কর্মকর্তা মেজর সিদ্দিক সালিক তার ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ বইয়ে লিখেছেন, “যখন প্রথম গুলিটি ছোড়া হল, ঠিক সেই মুহূর্তে পাকিস্তান রেডিওর সরকারি তরঙ্গের কাছাকাছি একটি তরঙ্গ থেকে ক্ষীণস্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের কণ্ঠস্বর ভেসে এল। ওই কণ্ঠের বাণী মনে হল আগেই রেকর্ড করে রাখা হয়েছিল। তাতে শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ হিসেবে ঘোষণা করেছেন।” (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ২০২৪) সিদ্দিক সালিকের এই বয়ান থেকেই বোঝা যায় যে, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাকে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিলো এবং বঙ্গবন্ধুর এই দৃঢ় অবস্থান তাদের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিলো। বঙ্গবন্ধু যে এই পরিস্থিতির জন্য নিজেকে এবং সমগ্র দেশকে প্রস্তুত রেখেছিলেন এটা তারা বুঝতে পারেনি।
বাকি ইতিহাস আমাদের সকলেরই জানা। স্বাধীনতা ঘোষণার পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আটক করা হয় এবং মুক্তিযুদ্ধের বাকি সময়টা তাকে পাকিস্তানে বন্দী করে রাখা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ককে বন্দী করে রাখলেও তাঁর চেতনাকে তো আর আটকা রাখা যায় না! সমগ্র বাংলাদেশ ততক্ষনে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির আকাংখায় দীক্ষিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো মহান মুক্তিযুদ্ধে।
২.
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছর অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে পাকিস্তানপন্থী অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক ইউনুস সরকার আজ ক্ষমতায় বসেছে। বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ আজ বুঝে গিয়েছে যে জঙ্গী মদদপুষ্ট চরম ডানপন্থী রাজনৈতিক পক্ষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য ও অপপ্রচারের মাধ্যমে তাদেরকে বিভ্রান্ত করেছে। এই মূহূর্তে ২৬শে মার্চ ও জাতীয় গণহত্যা দিবস আমাদের কাছে নতুন করে গুরুত্ববহ হয়ে উঠেছে।
প্রথমত: একটু বিশ্লেষণ করলেই দেখা যাবে, ৫ আগস্ট ২০২৪-এর পর থেকে ডানপন্থী রাজনৈতিক পক্ষ ও তাদের অনুসারী অর্বাচীন সুবিধালোভী যুবকেরা (আমি আর তাদের ছাত্র বলতে রাজি নই), বাংলাদেশের ইতিহাসকে বিকৃত করে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের অবদানকে চিরতরে মুছে ফেলার জন্য বিভিন্ন ন্যারেটিভ উপস্থাপন করতে চেয়েছিলো। কিন্তু তারা পারেনি। ক্ষমতা দখলের কিছুদিনের মধ্যে তাদের স্বীকার করে নিতে হয়েছে যে, মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ব্যতিত অন্য কারো ডাকে বীর বাঙালি স্বাধীনতার জন্য অস্ত্র ধরতো না এবং আওয়ামী লীগই ছিলো মুক্তির পতাকা বহনকারী প্রধান দল, যাদের ডাকে সমগ্র বাঙালি হাতের কাছে যে যা পেয়েছে তাই নিয়ে নেমে এসেছিলো মুক্তিযুদ্ধে। তাই মহান স্বাধীনতা দিবসকে কেন্দ্র করে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরবার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে যুক্ত করতে হবে ইতিহাসের সঠিক ন্যারেটিভের সাথে। শুধুমাত্র তাহলেই সামনের দিনগুলোতে ডানপন্থী দলগুলোর বিরুদ্ধে আমরা আর্দশিক লড়াইয়ে জয়ী হতে পারবো।
দ্বিতীয়ত: ২৬শে মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যা বাংলাদেশেই হয়েছে। প্রায় ৩০ লক্ষ নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করা হয়েছিলো এবং প্রায় ২ লক্ষাধিক বীরাঙ্গানাকে দিতে হয়েছিলো সম্ভ্রম। ৫ আগস্ট ২০২৪-এর আগ পর্যন্ত আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রদত্ত রায় অনুযায়ী মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হিন্দুদেরকে ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে, আওয়ামী লীগের সমর্থকদের রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে ও নারীদের তাদের লৈঙ্গিক পরিচয়ের কারণে গণহত্যার শিকার হতে হয়েছিলো। এই গণহত্যার আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতি অদ্যাবধি মেলেনি। মেলেনি বলেই জামায়াত-ই-ইসলামীর মত অতি ডানপন্থী উগ্রবাদী দলকে আর্ন্তজাতিক মহলে মডারেট মুসলিম রাজনৈতিক দল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বের ‘মোড়ল’ স্থানীয় দেশগলোকে কোনোভাবেই বিশ্বাস করানো যাচ্ছে না যে, জামায়াত-ই-ইসলামী এবং এর ছাত্র সংগঠন শিবির, যার নাম ১৯৭১ সালে ছিলো ছাত্রসংঘ, বাংলাদেশে গণহত্যার জন্য দায়ী। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশগুলো চৌধুরী মঈনউদ্দিনের মত গণহত্যাকারী অপরাধীদের রক্ষা করে, স্থান দেয় এবং সম্মানিত করে। সুতরাং, বাংলাদেশের গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ের জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে, আমরা যারা প্রবাসে থেকে জাতির পিতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে বুকে ধারণ করি তাদেরকে একসাথে কাজ করতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমরা দেশের বাইরে যে যেখানে আছি, সেখানকার সরকারের কাছে ও নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বের কাছে বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস ও স্বাধীনতা বিরোধিদের সঠিক চরিত্র তুলে ধরতে হবে। আসুন আমরা প্রতিজ্ঞা নেই – মহান মক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যার আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতি আদায় না করা পর্যন্ত আমরা এই আন্দোলন চালিয়ে যাব। বুকলেট, লিফলেট, চলচিত্র, শিল্পকর্ম, গান ও কবিতার মাধ্যমে আমরা বিদেশের মাটিতে মুক্তিযুদ্ধের সময় ঘটে যাওয়া গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ে একসাথে কাজ করতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার কোনো বিকল্প নেই।
৩.
বীর বাঙালি ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দোসর রাজাকার, আলবদর, ও আলশামসদের কখনো ক্ষমা করেনি, বাংলাদেশে তাদের রাজনীতিকে ঘৃনাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রতিটি নির্বাচন তার প্রমান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যেসব খুনীরা আমার পিতাকে হত্যা করেছে, তাদেরকেও জাতি হিসেবে আমরা ক্ষমা করিনি এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাদের কোনো গ্রহনযোগ্যতা নেই। কিন্তু ৫ আগস্ট ২০২৪-এর পর আমরা দেখতে পাচ্ছি ৭১-এর পরাজিত শত্রু ও ৭৫-এর খুনী বাহিনী আজ একত্রিত হয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে নতুন করে লিখতে চাইছে। বাংলাদেশকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মত ধর্মভিত্তিক ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাইছে। গত ১৫ বছরে দেশ নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় ও সূদুরপ্রসারী বিচক্ষণ নেতৃত্বে নারী অধিকার থেকে শুরু করে আর্থ-সামজিক যে উত্তরণ আমরা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেখেছি তা অতুলনীয়। অথচ গত ৫ আগস্ট থেকে অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক ইউনুস সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ চলছে বিপরীত দিকে। আসুন আজ মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে চিন্তা ও চেতনায় ধারণ করি এবং রুখে দাঁড়াই স্বাধীনতাবিরোধী খুনি অতি ডানপন্থী ধর্মান্ধ উগ্র রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে।
লেখক পরিচিতি: সভাপতি, জার্মান আওয়ামী লীগ