মহান স্বাধীনতা দিবসে স্মৃতিস্মারক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিমঞ্চে স্থাপিত ম্যুরাল জুলাই চেতনার পরিপন্থি আখ্যা দিয়ে ঢেকে দিয়েছে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন। এর আগে গত ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসেও একইভাবে এমন ন্যাক্কারজনক কাণ্ড ঘটিয়েছিল জেলা প্রশাসন। এ নিয়ে জেলাজুড়ে সাধারণ মানুষ এবং বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
প্রতিবাদ জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠনও।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার সাংবাদিকদের জানান, ‘অনেকের’ আপত্তির কারণে এবং জুলাইয়ের চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় ম্যুরালটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
আজ ২৭শে মার্চ, বৃহস্পতিবার টিআইবি এরিয়া কো-অর্ডিনেটর মো. মোরশেদ আলম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের কাজের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ২৬শে মার্চ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিমঞ্চের দেয়ালে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয় জেলা প্রশাসন। এর আগে গত ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসেও একই রকম ঘটনা ঘটায় জেলা প্রশাসন। দ্বিতীয়বারের মতো এ ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন।
দীর্ঘ ওই ম্যুরালে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ, মুজিবনগর সরকার গঠন, চরমপত্র পাঠ, উদিত সূর্য, ৭১-এর গণহত্যা, মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানী, বিজয়ে উল্লাসে মুক্তিযোদ্ধারা, পতাকা হাতে হাতে বিজয়ে উচ্ছ্বসিত জনতা, ৭ বীরশ্রেষ্ঠ ও পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে।
জানা গেছে, ২৬শে মার্চ বুধবার সকালে সর্বস্তরের জনতা মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে গেলে কাপড় দিয়ে ম্যুরাল ঢেকে রাখার বিষয়টি চোখে পড়ে। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ ও ফুল দিতে যাওয়া বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা। অনেকেই পরে লালমনিরহাট রেলওয়ে শহিদ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান।
এদিকে, সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) লালমনিরহাট শাখার সহসভাপতি ও লালমনিরহাট উন্নয়ন আন্দোলন পরিষদের আহ্বায়ক সুপেন্দ্রনাথ দত্ত বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ ও অবদানে আমরা এ দেশ পেয়েছি। তাদের ইতিহাস ও স্মৃতিচিহ্ন ঢেকে দেওয়ার অর্থ হচ্ছে এ অবদান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অস্বীকার করা।”
ক্ষোভ প্রকাশ করে জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুফী মোহাম্মদ বলেন, “স্মৃতিস্মারকটি চলমান সময়ের জন্য অনুপযুক্ত হলে ভেঙে দেওয়া হোক। সারা বছর ম্যুরালটি সবার জন্য উন্মুক্ত রেখে বিশেষ বিশেষ দিনে কাপড় দিয়ে ঢেকে সার্কাস না করাই ভালো।”
সনাকের জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন (অব.) আজিজুল ইসলাম বীরপ্রতীক বলেন, “ওই ম্যুরালে বায়ান্ন থেকে ৭১ পর্যন্ত ধারাবাহিক ঘটনাবলির সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে। কাপড় দিয়ে তা ঢেকে রাখার ঘটনা তাকে ব্যথিত করেছে। এটি মেনে নেওয়া যায় না।”