জেনারেল টিক্কা খান-এর মতে, তিনি ২৬ মার্চ গণহত্যার কোনো আদেশ দেননি। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “যদি তাই হয়, তাহলে আপনি শেখ মুজিবুর রহমানকে ধানমন্ডির বাসা থেকে কেন গ্রেপ্তার করলেন?”
জেনারেল টিক্কা খান বললেন, “আমার সমন্বয় কর্মকর্তা (Co-ordination Officer) আমাকে একটি তিন-ব্যান্ডের রেডিও এনে শোনার জন্য বলেছিলেন, যেখানে ঘোষণা করা হয়েছিল যে শেখ মুজিব সাহেব স্বাধীনতার আহ্বান জানিয়েছেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি শেখ সাহেবকে স্বাধীনতা ঘোষণা করতে শুনেছি, কারণ আমি তাঁর কণ্ঠ খুব ভালোভাবে চিনতাম। সেই ঘোষণাই আমাকে, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ হিসেবে, তাঁকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য করেছিল। অন্য কোনো বিকল্প ছিল না।”
প্রশ্ন: “যদি শেখ মুজিব তাজউদ্দীন সাহেবের সঙ্গে ভারত চলে যেতেন, তাহলে আপনি কী করতেন, স্যার?”
জেনারেল টিক্কা খান: “আমি ভালো করেই জানতাম, তাঁর মতো একজন নেতা দেশের মানুষকে ফেলে কখনো চলে যাবেন না। আমি ঢাকার প্রতিটি ঘর ও রাস্তা তন্ন তন্ন করে খুঁজে শেখ মুজিবকে বের করতাম। তাজউদ্দীন বা অন্য নেতাদের গ্রেপ্তারের কোনো ইচ্ছা আমার ছিল না। সে কারণেই তাঁরা এত সহজে ঢাকা থেকে চলে যেতে পেরেছিলেন।”
কিন্তু, টিক্কা খান জোর দিয়ে বলেছিলেন, যদি সেদিন রাতে শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করতে ব্যর্থ হতেন, তবে তিনি এবং তার বাহিনী ঢাকাসহ বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে প্রাণঘাতী আঘাত করতেন
…
সাক্ষাৎকার শেষ হওয়ার পর, আমরা জেনারেলকে ধন্যবাদ জানালাম। যখন আমরা গভর্নরের বাসভবনের বিলাসবহুল ড্রইং রুম থেকে বের হচ্ছিলাম, তখন জেনারেল আমাদের থামিয়ে বললেন, “আপনারা যাওয়ার আগে আমি আপনাদের জানাতে চাই, শেখ মুজিব ২৫ মার্চ মধ্যরাতে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার আগে আমি একটি গুলিও চালাইনি। আমি যা করেছি, তা আমার উপর অর্পিত আইনগত বাধ্যবাধকতার ভিত্তিতে করেছি। গভর্নর হিসেবে আইনগত ক্ষমতা প্রয়োগ করেছি, যখন শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। আপনি একজন সরকারি কর্মকর্তা। যদি আপনি ঢাকায় গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন, তবে আপনিও আমার মতো একই কাজ করতেন।”
“Bangladesh Wins Freedom”
মুসা সাদিক-এর বই থেকে
ছবি: ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তারের পর করাচিতে।
( সোর্স – অনলাইন)