মাইকেল রুবিন একজন প্রখ্যাত আমেরিকান লেখক, বিশ্লেষক এবং মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। তিনি ওয়াশিংটন-ভিত্তিক আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের একজন সিনিয়র ফেলো এবং প্রায়শই আন্তর্জাতিক সংঘাত ও রাষ্ট্রীয় নীতি নিয়ে লেখালেখি করেন। তার সাম্প্রতিক নিবন্ধ “Will There Be a Coup in Bangladesh?” বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেছে।
গত ৫ আগস্ট, ২০২৪-এ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন, যখন সরকারবিরোধী বিক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করে এবং সহিংসতায় রূপ নেয়। বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের শাসনের অবসান ঘটে। এরপর বিক্ষোভকারীদের নেতারা নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন। ৮০ বছর বয়সী ইউনূস পশ্চিমা কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তিনি বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব। গ্রামীণ ব্যাংকে দুর্নীতির তদন্তের পর থেকে তিনি শেখ হাসিনা ও তার আওয়ামী লীগের প্রতি গভীর ক্ষোভ পোষণ করে আসছেন।
মাইকেল রুবিন তার নিবন্ধে ইউনূসকে রুয়ান্ডার পল রুসেসাবাগিনার সঙ্গে তুলনা করেছেন, যিনি খ্যাতির মোহে পড়ে রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্য সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ইউনূস দাবি করেন, বিক্ষোভগুলো স্বতঃস্ফূর্ত ছিল, কিন্তু রুবিনের মতে এ দাবি সন্দেহজনক। তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার ও ১৯৭১-এর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য সংরক্ষণের বিরোধিতা করে কিছু ছাত্র ও নাগরিক সমাজের সদস্য বিক্ষোভে অংশ নিলেও, বাহ্যিক শক্তির সমর্থনে অনেকে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ, কারণ দেশটি ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে এবং জামায়াতে ইসলামীর মতো চরমপন্থী গোষ্ঠীর বিরোধিতা করে, যারা ১৯৭১-এর গণহত্যায় জড়িত ছিল।
রুবিনের মতে, ইউনূস হয়তো জামায়াতে ইসলামীর হাতে একজন “উপযোগী মূর্খ” হয়ে উঠেছেন, অথবা তিনি স্বেচ্ছায় এই গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র ধ্বংসের চেষ্টা করছেন। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে ইউনূস আওয়ামী লীগের নেতা ফজলে করিম চৌধুরী, সাংবাদিক ফারজানা রূপা ও শাকিল আহমেদসহ ৯০০-এর বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছেন। এদের অনেকের বিরুদ্ধে মিথ্যা হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইউনূসের জড়িত থাকার প্রমাণ বাড়ছে বলে আইনজীবীরা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মামলার কথা ভাবছেন।
নিবন্ধে মিশর ও তুরস্কের উদাহরণ টেনে রুবিন বলেন, মিশরে জনগণ মোহাম্মদ মুরসির ধর্মীয় শাসনের বিরুদ্ধে আবার রাস্তায় নেমেছিল এবং সেনাবাহিনী তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে। তুরস্কে ১৯৯৭ সালে সেনাবাহিনী ইসলামপন্থী নেজমেত্তিন এরবাকানকে পদত্যাগে বাধ্য করে, কিন্তু পরবর্তীতে রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান ক্ষমতায় এসে দেশটির ধর্মনিরপেক্ষতা নষ্ট করেন। বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী ও পাকিস্তানের নির্দেশে আল-কায়েদার সমর্থকদের মুক্তি দেওয়া হচ্ছে এবং নারী, উদারপন্থী ও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চলছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী কী করবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তারা কি মিশরের মতো পদক্ষেপ নেবে, নাকি তুরস্কের মতো নীরব থাকবে?
গত সপ্তাহে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জরুরি বৈঠক করে এবং সামরিক অভ্যুত্থানের গুঞ্জন তীব্র হয়েছে। রুবিন মনে করেন, সেনাবাহিনী যদি সাংবিধানিক পথে দেশকে ফিরিয়ে আনে, তবে যুক্তরাষ্ট্র নীরব থাকবে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দূরবর্তী এই ঘটনায় আগ্রহী নন, এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এটাকে ইসলামাবাদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতি-অভ্যুত্থান হিসেবে দেখতে পারেন। যুদ্ধাপরাধী ও আল-কায়েদার সমর্থকদের কারাগারে ফিরিয়ে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা করা গেলে ওয়াশিংটন সমর্থন দেবে। এখন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ—তিনি কি গণহত্যাকারীদের জয়ী হতে দেবেন, নাকি দেশকে উদ্ধার করবেন?