।। জয় বাংলা রিপোর্ট।।
ঈদযাত্রায় সড়ক ও রেলপথে লোকসমাগম নেই কেন?এর সহজ উত্তর মানুষ নিরাপদ নয়। মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না কোথায় কি ঘটে-এই শঙ্কায়! উপরন্তু মানুষের হাতে টাকা নেই। শ্রমিকরা বেতন ভাতা পায় নাই। চলাচলে যদি নিরাপত্তা মানুষের না-থাকে,হাতে টাকাকড়িও না-থাকে,তাহলে মানুষ গ্রামের বাড়িতে যাবে কেন। ঈদ আনন্দ মাটি তো এই দুই কারণেই।
গত ৮মাসে মানুষ নিরাপদে রাস্তায় কিংবা ঘরেও নেই। মবজাষ্টিজ দ্বারা কে কোথায় কখন আক্রান্ত হয়, তার নিশ্চয়তা কে দেবে?এরপর যদি হাতে টাকা না থাকে,বাড়ি যাবে কিভাবে?
পোশাক শ্রমিকরা বেতন ভাতা পাননি। তারা বিক্ষোভ করছেন শ্রমঅধিদপ্তরের সামনে।তাদের কণ্ঠে ‘বেতন-বোনাস কিছু পাইনি, কীভাবে সন্তানের মুখে হাসি ফোটাব’। আবার পোশাকশ্রমিকরা বলছেন, ‘বাড়ি যাব কীভাবে, টাকা ছাড়া তো গাড়িতেও ওঠায় না’। এগুলো তাদের আহাজারি।
১২২টি পোশাক কারখানার পোশাকশ্রমিকরা বেতন ভাতা পাননি বলে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। ১২২ টি প্রতিষ্ঠানে যদি ১হাজার করে কর্মচারি থাকেন, তবে মোট ১লক্ষ ২২ হাজার। কিন্তু হিসেবমতে আরো বেশি হওয়ার সম্ভাবনা। তাহলে তো কমপক্ষে ১লক্ষ ২২ হাজার লোক বাড়ি যেতে পারেনি। এরা সবাই গ্রামের লোক।স্বজনদের সাথে ঈদে মিলিত হওয়া ও ঈদানন্দ উপভোগ করা হয়ে ওঠেনি। তাহলে ঈদযাত্রায় সড়ক ও রেলে যাত্রী কই? এছাড়া শত শত কারখানার শ্রমিক কয়েক মাস আগেই চাকরি হারিয়ে বাড়ি চলে গেছে। ঢাকার চাকরিস্থলে নেই। যারা প্রতিবছর ঈদে বাড়িমুখো থাকতো।কয়েক লক্ষাধিক তো হবেই এ সংখ্যা।
উপদেষ্টা রেজোওয়ানা হাসানই কিছুদিন আগে বলেছেন, ‘ঢাকায় আর মানুষ বাড়তে দেয়া যায় না।’ এই মায়াকান্নার ভেতর তো ঢাকা থেকে লোক তাড়নোর গন্ধ বিদ্যমান। মানুষকে বেতনভাতা না দিয়ে, চাকরিচ্যুত করে, খুব মজা করে বলা হচ্ছে, এবারে সড়কে বা রেলে মানুষের চাপ নেই। যাত্রীরা খুব স্বস্তিতে ঈদযাত্রা করছেন। কিন্তু এর ভেতরের কষ্টের খবর কি কেউ নিয়েছেন?মূল চিত্র কি, সেটার জন্য নেই কারোর মাথা ব্যথা।
ড. ইউনুস সরকারের শাসনকাল কতো সুন্দর, স্বস্তিদায়ক এই কথাই একশ্রেণীর মুখে শোভা পাচ্ছে। কিন্তু ঈদযাত্রায় মানুষ ঢাকা ছাড়বে কেন? বাড়িঘর কার কাছে রেখে যাবে? চোর না ডাকাতের হাতে রেখে যাবে। র্যাব-পুলিশের পরিচয়ে ডাকাতি, নতুন সমন্বয়করা যাচ্ছেন বাড়ি বাড়ি নানা পরিচয়ে নানা দাবী দাওয়া নিয়ে। হুমকি-ধামকি তো সঙ্গে আছে। তাহলে কোন ভরসায় একটি পরিবার তার কষ্টে অর্জিত প্রাণের সম্পদ কার জিম্মায় রেখে বাড়ি যাবে ভাই।
একইভাবে ঈদবাজারের হালচাল। বাজারে ভীড় থাকলেও বরাবরের সেই স্বতস্ফুর্ত ভীড় বা কেনাকাটা নেই। একে তো হাতে অর্থকড়ি নেই, উপরন্তু নিরাপত্তার অভাব, কে কখন নিষিদ্ধ অমুক, কে আবার বৈষম্যবিরোধী হয়ে যায়, এই আতঙ্ক কি কম?
পথেঘাটে আতঙ্ক, সড়কে আতঙ্ক, রেলে আতঙ্ক, বাজারে আতঙ্ক। এতো আতঙ্কের মাঝে ঢাকা এবং ঢাকা শহর থেকে মফস্বল যাত্রার ছবি খুব স্বস্তিদায়ক, লোকজন নেই। সর্বোপরি আর্থিক অবস্থার আতঙ্ক মানুষকে ঘরে বন্দী করে রেখেছে এবারের ঈদ। এই অবস্থায় ভুতের মুখে রাম নামের মতো শোনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ‘ঈদে রাজধানীতে নিরাপত্তা নিয়ে কোনো হুমকি নেই’-এমন কথাটিকে।