স্বাধীনতা দিবসে অদ্ভুত এক কাণ্ড ঘটালো লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসন। এদিন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিমঞ্চে স্থাপিত ম্যুরাল কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার সাংবাদিকদের জানান, জুলাই আন্দোলনকারীদের আপত্তির কারণে ও জুলাই বিপ্লবের চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় ম্যুরালটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। এটাও জানা যাচ্ছে, এর আগে গত ১৬ই ডিসেম্বরও একই ঘটনা ঘটেছিল।
এমন ঘটনা সামনে আসায় বিস্ময় এবং হতাশা ব্যক্ত করেছেন বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। প্রশ্ন উঠেছে, জেলা প্রশাসক কী করে এমন অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিলেন। ম্যুরালের সঙ্গে কীভাবে জুলাইয়ের চেতনা সাংঘর্ষিক হয়! ইতিহাস কি এভাবে কেউ মুছে দিতে পারে? কোনো জনপদের মানুষের সংগ্রামের, লড়াইয়ের ইতিহাস! লালমনিরহাট শহরের কলেজ রোডে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিমঞ্চটি অবস্থিত। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ, মুজিবনগর সরকার গঠন, চরমপত্র পাঠ, উদিত সূর্য, ৭১-এর গণহত্যা, মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক এমএজি ওসমানী, মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়োল্লাস, পতাকা হাতে জনতা, সাত বীর শ্রেষ্ঠ ও পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণের ছবি এতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন স্থানীয় বিশিষ্টজনরা। টিআইবি’র এরিয়া কো-অর্ডিনেটর মোরশেদ আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ২৬শে মার্চ সকালে আমরা মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধে যাই শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানোর জন্য। এ সময় মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধের পাশে স্মৃতিমঞ্চটি কাপড়ে ঢেকে রাখা ছিল। আমরা স্তম্ভিত হয়ে পড়ি। আমরা মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ না করে স্টেশন রোডে রেলওয়ে শহীদ স্মৃতিসৌধে গিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেই।
লালমনিরহাট জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুফী মোহাম্মদ বলেন, সারা বছরই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিমঞ্চের ম্যুরাল উন্মুক্ত রাখা হয়। কিন্তু বিশেষ দিনে ঢেকে রাখা হচ্ছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
লালমনিরহাট সনাকের সহ-সভাপতি ও লালমনিরহাট জেলা উন্নয়ন আন্দোলন পরিষদের আহ্বায়ক সুপেন্দ্রনাথ দত্ত ও ডা. আশিক ইকবাল মিলন বলেন যে, মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ ও অবদানে আমরা এদেশ পেয়েছি, তাদের ইতিহাস ও স্মৃতি স্মারক চিহ্ন (কাপড় দিয়ে) ঢেকে দেয়ার অর্থ হচ্ছে তাদের অবদান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অস্বীকার করা।
সচেতন নাগরিক কমিটি লালমনিরহাট জেলা ইউনিটের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন (অব.) আজিজুল ইসলাম বলেন, ম্যুরালে বায়ান্ন থেকে একাত্তর পর্যন্ত ধারাবাহিক ঘটনাগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়েছে। কাপড় দিয়ে তা ঢেকে রাখার ঘটনা আমাকে খুবই ব্যথিত করেছে। এটি মেনে নেয়া যায় না। আমাদের ইতিহাস ও স্মৃতিচিহ্ন ঢেকে দেয়ার অর্থ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অস্বীকার করা।