।। মাসুদুল হাসান রনি।।
মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী পাক হানাদারদের দোসর জামায়াত ইসলামীর তৎকালীন ছাত্র সংগঠনের নাম ছিল ‘ইসলামী ছাত্র সংঘ’। ১৯৭৭ সালে এরা ইসলামী ছাত্রশিবির নামে আত্মপ্রকাশ করে। বর্বরোচিত সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালানোর জন্য সর্বস্তরে নিন্দিত জামায়াতে ইসলামীর এই ছাত্র সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার তিন বছরের মাথায় জবাইয়ের মাধ্যমে হত্যার রাজনীতি শুরু করে চট্টগ্রাম থেকে। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে সারাদেশে।
ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে হামলা-সহিংসতা-সংঘর্ষ নতুন কিছু নয়। তবে এক্ষেত্রে অপরাপর ছাত্র সংগঠনগুলোর সাথে শিবিরের মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। শিবির সরাসরি হত্যার মিশনে নামে। তাছাড়া এরা যাকে আঘাত করে তাকে চিরতরে পঙ্গু-অচল করে দেয়। এর মাধ্যমে এরা সংশ্লিষ্ট কর্মীটিকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার এবং অন্যদের মধ্যে আতঙ্ক ত্রাস সৃষ্টি করে । এজন্য শিবিরের নৃশংসতার সাথে অন্য কারও তুলনা হয় না। হাতুড়ি, রড, ইট, মুগুর দিয়ে হাড় গুঁড়ো করে দেয়া, রিকশার স্পোক কানের ভেতর ঢুকিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মগজ বের করে আনা, হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয়া, চোখ উপড়ে ফেলা, মেরুদন্ড ভেঙ্গে ফেলা, কব্জি কেটে নেয়া, কিরিচ, ছোরা, কুঁড়াল ব্যবহার করে হত্যা করার মতো নৃশংসতা এদেশের ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে কেবল শিবিরের নামের সাথেই যুক্ত। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে ‘৭১ সালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডসহ রাজাকার, আলবদর আল সামস গঠন করে নির্মম ও নৃশংস হত্যাকান্ডের সূচনা করে জামায়াত ও ছাত্রসংঘ। জামায়াতের সেই নির্মম ও নৃশংস হত্যাকান্ডের রাজনীতিরই উত্তরাধিকার হিসাবে গ্রহণ করেছে তাদের ছাত্র সংগঠন শিবির।
বিগত আমলে প্রকাশিত গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে জানা গেছে, ১৯৮১ সাল থেকে গত ৪৫ বছর ধরে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাঙ্গনে আধিপত্য বিস্তারের জন্য অন্য ছাত্র সংগঠনগুলো দমনে রগকাটার সহিংস সন্ত্রাসী রাজনীতি করে আসছে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন শিবির।
শিবিরের রগকাটা ও নৃশংস হত্যাকান্ডের কিছু ইতিহাস তুলে ধরছি।
১.
১৯৮১ সালের মার্চ মাস।
প্রতিষ্ঠার মাত্র তিন বছরের মাথায় শিবির ক্যাডাররা চট্টগ্রাম সিটি কলেজের নির্বাচিত এজিএস ছাত্রলীগ নেতা তবারক হোসেনকে কলেজ ক্যাম্পাসেই কিরিচ দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। কিরিচের এলোপাতাড়ি কোপে মুমূর্ষু তবারক যখন পানি পানি করে কাতরাচ্ছিল তখন এক শিবিরকর্মী তার মুখে প্রস্রাব করে দেয়।
২.
১৯৮২ সালের ১১ মার্চ।
রাজশাহী বিশ্বদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিবির প্রথম প্রকাশ্য কর্মসূচি ঘোষণা করে ১৯৮২ সালের ১১ মার্চ। ক্যাম্পাসের বাবলা চত্বরে শিবিরের কর্মীরা তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রমৈত্রী, জাসদ ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নসহ সব ছাত্র সংগঠনের ওপর হামলা করে। শিবিরের সঙ্গে ওই দিন সংঘর্ষে ছাত্রলীগের নেতা মীর মোশতাক এলাহী মৃত্যুবরণ করেন। কয়েকশত শিক্ষার্থী আহত হয়।
৩.
১৯৮২ সালের মার্চ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ৩ বাস বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে এসে শিবির ক্যাডাররা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রদের উপর হামলা চালায়। এই সহিংস ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
৪.
১৯৮৪ সালের ২৮ মে।
চট্টগ্রাম কলেজের বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের
সোহরাওয়ার্দী ছাত্রাবাস শাখার কোষাধ্যক্ষ ছাত্রনেতা শাহদাত হোসেনকে ছাত্রশিবিরের সন্ত্রাসীরা নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যা করে। শাহাদাৎ তখন তার হলের ১৫ নম্বর কক্ষে ঘুমিয়ে ছিল। তৎকালীন চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্র শিবির সভাপতি সৈয়দ জাকিরের নেতৃত্বে শাহদাত হোসেনকে জবাই করা হয়।
৫.
১৯৮৬ সাল।
চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় ছাত্রসমাজের নেতা আবদুল হামিদের ডান হাতের কবজি কেটে নেয় ইসলামী ছাত্র শিবির এবং ঐ কর্তিত হাত বর্ষার ফলায় গেঁথে তারা উল্লাস প্রকাশ করে।
৬.
১৯৮৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর।
শিক্ষা দিবসে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট এর কেন্দ্রীয় নেতা ডাকসু সদস্য মাসুদ রানার উপস্থিতিতে মিছিলে হামলা চালিয়ে শাখা সভাপতিসহ ছয়জন কর্মীকে আহত করা হয়।
৭.
১৯৮৮ সালের ৩১ শে মে।
বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ শাখার তৎকালীন সভাপতি জামিল আকতার রতনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। প্রকাশ্য দিনের আলোতে ৩৪/৩৫ জন শিক্ষকের সামনে কুপিয়ে, রগ কেটে হত্যা করে ছাত্র শিবিরের কর্মীরা।
৮.
১৯৮৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর।
সিলেটে তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা ও জাসদ ছাত্রলীগের তিন তুখোড় কর্মী মুনির ই কিবরিয়া, তপন জ্যোতি দেব এবং এনামুল হক জুয়েলকে নির্মমভাবে হত্যা করে প্রগতিবিরোধীরা। সেই হত্যাকাণ্ডের ৩৭ বছর পূর্ণ হলেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে জামাত-শিবিরের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত সেই হত্যাকারীরা।
৯.
১৯৮৮ সাল।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জাসদ নেতা জালালকে তার নিজ বাড়ির সামনে কুপিয়ে হত্যা করে শিবির ক্যাডাররা। হত্যা শেষে শিবির ক্যাডাররা তাঁর খণ্ডিত মাথা তাঁর বাড়ির প্রধান দরজার সামনে পুরো দিন ঝুলিয়ে রাখে।
১০.
১৯৮৮ সাল।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত শিবির ক্যাডারদের হামলায় আমির আলী হল ছাত্র সংসদের জিএস ও জাসদ ছাত্রলীগ নেতা প্রিন্সসহ ২০-২৫ জন মারাত্মক আহত হয়।
১১.
১৯৮৮ সাল।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভোর সাড়ে চারটার দিকে এস এম হলে বহিরাগত শিবির ক্যাডাররা হামলা চালায়। জাসদ ছাত্রলীগের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি ও সিনেট সদস্য আইয়ূব আলী খান, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ও সিনেট সদস্য আহসানুল কবির বাদল এবং হল সংসদের ভিপি নওশাদের হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়।
১২.
১৯৮৮ সালের আগস্ট।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মোঃ ইউনুসের বাসভবনে ছাত্র শিবির বোমা হামলা করে। এতে অধ্যাপক ইউনুস বেঁচে গেলেও তার বাড়ির কর্মচারী আহত হয়।
১৩.
১৯৮৯ সালের রমজান মাস।
ছাত্র ইউনিয়নের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গাজী গোলাম মোস্তফাকে বিশ্ববিদ্যালয় পার্শ্ববতী চকপাড়ায় ইফতারের দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গিয়ে হাতের রগ কেটে দেয় শিবির ক্যাডাররা।
১৪.
১৯৮৯ সালের নভেম্বর।
রাজশাহী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের সামনে সন্ধ্যায় জাসদ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর শিবিরের বোমা হামলায় বাবু, রফিকসহ ১০ জন আহত হয়।
১৫.
১৯৮৯ সাল।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নেতা হাবিবুর রহমান কবিরকে কুপিয়ে হত্যা করে ইসলামি ছাত্রশিবির।
ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে কবিরের লাশ সামনে রেখে জাকসুর নেতৃত্বে ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ ব্যানারে ক্রিয়াশীল সব সংগঠন মিলে ছাত্রশিবিরের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে।
১৬.
১৯৯০ সালের ২২ ডিসেম্বর।
ছাত্রমৈত্রীর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহসভাপতি ফারুকুজ্জামান ফারুককে শিবিরের ক্যাডাররা জবেহ করে হত্যা করে।
১৭.
১৯৯২ সালের ১৭ মার্চ।
পবিত্র রমজান মাসে চট্টগ্রামের কুখ্যাত সিরাজুস সালেহীন বাহিনীসহ কয়েক হাজার সশস্ত্র বহিরাগত শিবির সন্ত্রাসী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেলা ১১টার সময় অতর্কিত হামলা চালালে জাসদ ছাত্রলীগ নেতা ইয়াসীর আরাফাত পিটু নিহত হয় এবং জাসদ ছাত্রলীগের আইভি, নির্মল, লেমন, রুশো, জাফু, ফারুক এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের রাজেশসহ দেড়শাতাধিক ছাত্র-ছাত্রী আহত হয়। এদের অধিকাংশেরই হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়া হয় এবং রাজেশের কব্জি কেটে ফেলা হয়। এই হামলার সময় শিবির ক্যাডাররা এস এম হল, আনোয়ার হল এবং লতিফ হল আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। ব্যাপক আকারে গান পাউডারের ব্যবহার করায় হলের জানালার কাঁচগুলো গলে গিয়েছিল। লতিফ হলের অনেক কক্ষ এখনো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। এই হামলার তীব্রতা এতই ছিল যে, বেলা ১১টায় শুরু হওয়া হামলা রাত ৩টায় বিডিআর নামানোর আগ পর্যন্ত বন্ধ হয়নি।
১৮.
১৯৯২ সালের মে।
শিবিরের মহিলা শাখা ইসলামী ছাত্রী সংস্থা রাজশাহী কলেজ শাখার নেত্রী মুনীরা বোমা বহন করার সময় বিস্ফোরণে মারা যায় এবং তার সহযাত্রী-সহকমী আপন খালা এবং ঐ রিক্সাওয়ালা আহত হয়।
১৯.
১৯৯২ সালের ১৯ জুন।
শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনে হরতাল কর্মসূচী সফল করার লক্ষ্যে জাসদের মিছিল চলাকালে শিবিরের সশস্ত্র হামলায় সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে জাসদ নেতা মুকিম মারাত্মক আহত হন এবং ২৪ জুন তিনি মারা যান।
২০.
১৯৯২ সালের আগস্ট।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পার্শ্ববর্তী নতুন বুথপাড়ায় শিবির ক্যাডার মোজাম্মেলের বাড়িতে বোমা বানানোর সময় শিবির ক্যাডার আজিবরসহ অজ্ঞাতনামা অন্তত আরও তিন জন নিহত হয়। বিস্ফোরণে পুরো ঘর মাটির সাথে মিশে যায় এবং টিনের চাল কয়েক শ’ গজ দূরে গাছের ডালে ঝুলতে দেখা যায়। পরবর্তীতে পুলিশ একটি ডোবা থেকে অনেক খন্ডিত হাত-পা উদ্ধার করে। যদিও শিবির আজিবর ছাড়া আর কারও মৃত্যুর কথা স্বীকার করেনি। পুলিশ বাদী হয়ে মতিহার থানায় শিবির ক্যাডার মোজাম্মেলকে প্রধান আসামি করে বিস্ফোরক ও হত্যা মামলা দায়ের করে। প্রায় ৫ বছর পলাতক থাকার পর মামলা ম্যানেজ করে মোজাম্মেল এলাকায় ফিরে আসে এবং জামাতের রাজনীতিতে পুনরায় সক্রিয় হয়।
২১.
১৯৯৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালালে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নেতা বিশ্বজিৎ, সাধারণ ছাত্র নতুন এবং ছাত্র ইউনিয়নের তপনসহ ৫ জন ছাত্র নিহত হয়।
২২.
১৯৯৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর।
বহিরাগত সশস্ত্র শিবির কর্মীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শেরেবাংলা হলে হামলা চালিয়ে ছাত্রমৈত্রী নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয় টিমের মেধাবী ক্রিকেটার জুবায়েদ চৌধুরী রিমুকে হাত-পায়ের রগ কেটে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে।
২৩.
১৯৯৪ সাল।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে আসার পথে তৃতীয় বিজ্ঞান ভবনের সামনের রাস্তায় ছাত্রমৈত্রী নেতা প্রদ্যুৎ রুদ্র চৈতীর হাতের কব্জি কেটে নেয় শিবির কর্মীরা।
২৪.
১৯৯৫ সালে ১৩ ফেব্রুয়ারি।
শিবির কমীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পার্শ্ববতী চৌদ্দপাই নামক স্থানে রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী সকাল-সন্ধ্যা বাসে হামলা চালিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী নেতা দেবাশীষ ভট্টাচার্য রূপমকে বাসের মধ্যে যাত্রীদের সামনে কুপিয়ে হত্যা করে। হত্যার আগে বর্বর শিবির ক্যাডাররা তার হাত ও পায়ের রগ কেটে নেয়।
২৫.
১৯৯৫ সালের জুলাই।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ওপর সশস্ত্র শিবির কর্মীরা হামলা করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছাত্রনেতা ফরহাদের হাতের কব্জি কেটে নেয়। এ হামলায় প্রায় ২৫ জন ছাত্রদল নেতা-কর্মীর হাত-পায়ের রগ কেটে নেয় শিবির ক্যাডাররা।
২৬.
১৯৯৭ সাল।
চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট দখল করার জন্য শিবির ক্যাডাররা ছাত্র সংসদের ভিপি মোহাম্মদ জমির ও কলেজ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ফরিদউদ্দিন আহমদকে গুলি করার পর পায়ের রগ কেটে হত্যা করে।
২৭.
১৯৯৭ সাল।
বঙ্গবন্ধু পরিষদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল খালেকসহ প্রায় বিশ জন শিক্ষকের বাসায় বোমা হামলা ও অগ্নি সংযোগ করে ছাত্র শিবির।
২৮.
১৯৯৭ সাল।
গভীর রাতে রাবি ক্যাম্পাসে বহিরাগত শিবির সন্ত্রাসীদের হামলায় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা আহত হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম পুলিশ ক্যাম্পেও বোমা হামলা করে শিবির।
২৯.
১৯৯৮ সাল।
শিক্ষক সমিতির মিটিং থেকে ফেরার পথে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে অধ্যাপক মোঃ ইউনুসের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় ছাত্র শিবির। ছাত্র-কর্মচারীদের প্রতিরোধে অধ্যাপক ইউনুস প্রাণে বেঁচে গেলেও মারাত্মক আহত হন তিনি।
৩০.
১৯৯৮ সালের ২২ আগস্ট।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী সঞ্জয় তলাপাত্রকে হত্যা করে শিবির ক্যাডাররা।
৩১.
১৯৯৯ সাল।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. এনামুল হকের ছেলে ও ছাত্রদল নেতা মোহাম্মদ মুছাকে শিবিরকমীরা নৃশংসভাবে হত্যা করে।
৩২.
১৯৯৯ সাল।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত ’৭১ এর গণকবরে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য স্থাপিত ভিত্তি প্রস্তর রাতের আঁধারে ছাত্রশিবির ভাঙতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মচারী বাধা দেন। ফলে শিবির ক্যাডাররা ভিত্তিপ্রস্তর ভেঙ্গে ফেলে তাকে কুপিয়ে আহত করে।
৩৩.
২০০০ সাল।
চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে শিবির ক্যাডাররা মাইক্রোবাসের মধ্যে থাকা ৮ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে প্রকাশ্য দিবালোকে ব্রাশফায়ারে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
৩৪.
২০০১ সালের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ,
রাবি অধ্যাপক সনৎ কুমার সাহাকে ছাত্রশিবির কর্মীরা হাত-পা বেঁধে জবাই করার চেষ্টা করে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা টের পাওয়ার ফলে তাদের হস্তক্ষেপে তিনি প্রাণে বেঁচে যান।
৩৫.
২০০২ সাল।
রাবি সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট নেতা সুশান্ত সিনহাকে প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে দেয় শিবির কর্মীরা।
৩৬.
২০০৪ সাল।
অধ্যাপক মোঃ ইউনুসকে ফজরের নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় কুপিয়ে হত্যা করে শিবির, যদিও এই হত্যা মামলায় জেএমবির দুইজন সদস্যকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। তারপরও এলাকাবাসী অনেকেরই মতামত হচ্ছে ছাত্রশিবিরের ক্যাডাররাই তাকে হত্যা করেছে।
উল্লেখ্য, ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালে দুই দফায় ছাত্রশিবির তাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল।
৩৭.
২০০৪ সালের ২৫ জুলাই।
শিবির ক্যাডার রবি ও রোকনের নেতৃত্বে প্রায় ১৫ থেকে ২০ জনের একটি দল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক সুশান্ত সিনহার ওপর হামলা চালায়। ইট দিয়ে জখম করার পামাপাশি তার মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা চালায় শিবির ক্যাডাররা।
৩৮.
২০০৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর।
বরিশালের বাবুগঞ্জের আগরপুর ইউনিয়নের ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি শামীম আহমেদকে শিবির ক্যাডাররা হত্যা করে।
৩৯.
২০০৫ সালের ১০ ডিসেম্বর।
সন্ধ্যায় জুবেরী ভবনের সামনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি এস এম চন্দনের ওপর হামলা চালিয়ে তার রগ কেটে নেয়ার চেষ্টা চালায় শিবির ক্যাডাররা।
৪০.
২০০৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জামায়াতপন্থী শিক্ষক মহিউদ্দিন এবং রাবি ছাত্রশিবির সভাপতি মাহবুব আলম সালেহীনসহ আরও দুইজন শিবির ক্যাডার মিলে একযোগে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে রাবির ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবু তাহেরকে হত্যা করে।
৪১.
২০০৬ সালের ২১ আগস্ট।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘সেকুলারিজম ও শিক্ষা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য দেয়ার অপরাধে অধ্যাপক হাসান আজিজুল হককে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে শিবির। প্রকাশ্য সমাবেশে তারা অধ্যাপক হাসান আজিজুল হকের গলা কেটে বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দেয়ার ঘোষণা দেয়।
৪২.
২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হোসেনকে হত্যা করে ম্যানহোলের মধ্যে ফেলে রাখে শিবিরের ক্যাডাররা।
৪৩.
১৯৯২ সালের ১৭ মার্চ।
শিবির ক্যাডারদের ছোড়া গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান জাসদ ছাত্রলীগের কর্মী ইয়াসির আরাফাত ওরফে পিটু।
৪৪.
২০০৪ সালের ৩০ অক্টোবর: জামাতের বর্তমান রাজশাহী মহানগরের আমীর আতাউর রহমান এবং প্রক্টর নূরুল আফসারের উপস্থিতিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের মিছিলে হামলা চালিয়ে শিবির ক্যাডাররা প্রায় অর্ধশতাধিক ছাত্রীকে রক্তাক্ত করে।
৪৫.
২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল।
ছাত্র শিবির ও হিযবুত তাহরিরের সশস্ত্র কর্মীদের কার্যক্রমে বাধা দেওয়ায় বুয়েট ছাত্র আরিফ রায়হান দ্বীপের ওপর হামলা চালানো হয়। বুয়েট ক্যাম্পাসে দুর্বৃত্তরা তাঁকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। তিন মাসের মাথায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্কয়ার হাসপাতালে মারা যান দ্বীপ। দ্বীপকে খুনের অপরাধে মেজবাহ নামের বুয়েটের এক ছাত্রকে গ্রেফতারের পর দ্বীপের ওপর হামলায় ছাত্র শিবিরের জড়িত থাকার বিষয়টি সামনে আসে।
৪৬.
২০১৩ সালের ২১ আগস্ট।
শোক দিবসের আলোচনা শেষে আমীর আলী হল থেকে মাদার বখশ্ হলে ফেরার সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ আল তুহিনের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিবির। তুহিনের পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়, হাতের আঙুল কেটে নেওয়া হয়।
৪৭.
২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হলের সামনে ছাত্রলীগ নেতা টগর ও মাসুদের উপর হামলা করে শিবির ক্যাডারেরা। কয়েক মাস চিকিৎসা নিয়ে টগর সুস্থ্য হলেও, এক পা হারিয়ে পঙ্গুত্ববরণ করে মাসুদ।
৪৮.
২০১৩ সালের ৮ অক্টোবর।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম সাদ্দামের হাত এবং পায়ের রগ কেটে দেয় শিবির ক্যাডাররা। এসময় সে ফুসফুসে মারাত্মক আঘাত পায়।
৪৯.
২০১৩ সালের ১৪ নভেম্বর।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের শাহ্ মখদুম (এসএম) হলের সভাপতি খলিলুর রহমান মামুন ছাত্রশিবির হাতে নিজ জেলা গাইবান্ধাতে নিহত হন।
৫০.
২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর।
শিবির ক্যাডাররা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের এক কর্মচারী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সেলিম রেজা খান সেলুর রগ কেটে দেয়।
৫১.
২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের বিক্ষোভ মিছিলে ককটেল হামলা করে শিবির ক্যাডাররা। এতে হাতবোমার স্প্রিন্টারের আঘাতে আহত হয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্মসম্পাদক মাহবুবুর রহমান, ক্রীড়া সম্পাদক কাজী লিংকন ও উপপ্রচার সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম শুভ্র। আরো আহত হয় সকালের খবরের আলোকচিত্রী আজহার উদ্দিন ও এটিএন নিউজের ক্যামেরাম্যান রুবেল হোসেন।
৫২.
২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মেহেরচুন্ডি এলাকায় শিবির ক্যাডাররা মতিহার থানার ছাত্রলীগের যুগ্মআহবায়ক ডিউকের দুই হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়।
৫৩.
২০১৪ সালের ১৬ নভেম্বর।
ছাত্র শিবিরের নেতৃত্বে দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন চৌদ্দপাই এলাকায় নিজের বাসার একটু সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম শফিউল ইসলাম লিলনকে। পরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মুহাম্মদ এন্তাজুল হক বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে মতিহার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
৫৪.
২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল।
ছাত্র শিবিরের নেতৃত্বে সকালে রাজশাহী নগরীর শালবাগান এলাকায় নিজের বাড়ি থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করা হয় ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে। পরের বছরের ৬ নভেম্বর ছাত্র শিবিরের ৮ জনকে আসামি করে আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হলো আজ মঙ্গলবার। এতে দুইজনের ফাঁসি ও তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
৫৫.
২০২০ সালের ১ মার্চ: ১ মার্চ রোববার রাতে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আমানুল্যাপুর ইউনিয়নের নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর সড়কের পলোয়ানের পুল বাজারের একটি চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলেন ছাত্রলীগ কর্মীরা। রাত ৮টার দিকে একদল শিবির কর্মী এলোপাতাড়ি গুলি করে এবং কুপিয়ে ছাত্রলীগের কর্মীদের আহত করে। এ সময় রাকিব হোসেন ও হাবিব নামে ২ জন গুলিবিদ্ধ হন। আহত হন রনি, মনু ও রায়হান। পরের দিন সোমবার (২ মার্চ) দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। নিহত রাকিব হোসেন আমানুল্যাহপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের শিপন পাটোয়ারী বাড়ির সফি উল্যার ছেলে। তিনি আমানুল্যাপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
৫৬.
২০২৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী।
সিলেটের এমসি কলেজ (মুরারিচাঁদ) আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়ার এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে যায় ছাত্রশিবির।
আহত মিজানুর রহমান রিয়াদ এমসি কলেজের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। ২০ ফেব্রুয়ারী রাত ১২টার দিকে কলেজ ছাত্রাবাসে এ ঘটনা ঘটে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার পায়ের রগ কাটারও চেষ্টা করা হয়েছিল বলে জানান আহত রিয়াদ। একপর্যায়ে তাকে টেনে হিঁচড়ে রুমের বাইরে ফেলে রেখে চলে যায় হামলাকারী শিবিরের নেতাকর্মীরা।
এই তালিকা আরো দীর্ঘ। ছাত্র শিবিরের হামলায় কয়েক কয়েকশত শিক্ষার্থীকে প্রান দিতে হয়েছে। রগ কেটে দেয়া, হাত কেটে নেয়ায় কয়েকশত শিক্ষার্থীকে চিরদিনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে।
জামায়াতের সহযোগী সংগঠন ইসলামি ছাত্র শিবিরের নির্মম ও নৃশংসতার যে ইতিহাস রয়েছে তার বর্ণনা করলে উপন্যাসও হার মেনে যাবে, যা গোয়েন্দা সংস্থার রেকর্ডে রয়েছে।
তথ্যসুত্র : বিভিন্ন সময়ের দৈনিক পত্রিকার সংবাদ ও গুগল
২২.০২.২০২৫
মন্ট্রিয়েল