দায়িত্ব নেয়ার পরই টাকার নকশা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বঙ্গবন্ধুর ছবি বাদ দিয়ে নতুন করে নকশা করা হচ্ছে। সাধারণত পুরোনো, ছেঁড়া, অচল নোট বাজার থেকে তুলে নিয়ে, বিনষ্ট করে একই নকশায় নতুন নোট ছাপতে বছরে সরকারের খরচ হয় সাড়ে চার থেকে পাঁচশ কোটি টাকা। তবে নকশা পরিবর্তনের কারণে এবার সেই খরচ ঠেকতে পারে দেড় হাজার কোটিতে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন, দেশের রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর নতুন টাকার নকশায় পরিবর্তন আনছে সরকার। সব ধরনের নোটেই নকশা পরিবর্তন হবে। এর আগে ডিজাইন অক্ষুণ্ন রেখে শুধু ছাপা হতো। এবার নতুন নোটে থাকবে না জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। বরং যুক্ত হবে ধর্মীয় স্থাপনা, জুলাই আন্দোলনের গ্রাফিতিসহ নানা ছবি।
আবার নতুন নকশার জন্য রয়েছে পারিশ্রমিক। আগের তুলনায় স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে নোটের পরিমাণ। কারণ, বঙ্গবন্ধুর ছবিযুক্ত নোট বাজার থেকে তুলে নেবে সরকার। এর আগে টাকা ছাপতে বছরে পাঁচশ কোটি টাকার মতো খরচ হলেও এবার খরচ পড়বে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা।
তবে ঠিক কত টাকার নতুন নোট ছাপা হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলেননি বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীলরা। নতুন নকশার নোট বাজারে আনতে তাই এবারের ঈদে কোনো নতুন নোট বাজারে ছাড়েনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্র জানায়, ছাপানো নোট এখন আর আগের মতো বেশিদিন টিকছে না। ছয় মাসেই নষ্ট হচ্ছে। অচল নোটগুলো (ছেঁড়া-ফাটা) বাংলাদেশ ব্যাংকে সংরক্ষণের পর তা পুড়িয়ে ফেলা হয়। পুড়িয়ে ফেলা ব্যবহার অযোগ্য নোট ও বাজার সার্কুলেশন বা অর্থের প্রবাহের বিষয়টি দেখে পরে নতুন নোট ছাপানো হয়। এক্ষেত্রেও মার্কেট টুলস ব্যবহার করে পর্যালোচনা করে দেখা হয়। সেখানে উঠে আসে কী পরিমাণ নতুন টাকার দরকার পড়বে। সেভাবেই ছাপিয়ে বাজারের চাহিদার ভিত্তিতে ছাড়া হয়।
বিভাগটির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘এবার সব ধরনের নোটে নকশায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। সরকার ঘনিষ্ঠ একটি পক্ষের দাবি নতুন নকশা। সে আলোকে নোট ছাপানো হচ্ছে। খরচ এখন ফ্যাক্টর নয়। তবে ধাতব কয়েনের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই তিন গুণ পর্যন্ত খরচ বাড়বে এবার।’
সূত্র জানায়, সাধারণত দুই ঈদের সময় ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট ছাড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও নিজেদের কাছে থাকা নতুন নোট বিনিময় করে। তবে বাজারের চাহিদা বিবেচনায় নিয়েও নোট ছাড়া হয় কোনো কোনো সময়। মূলত বাজারে পরিচ্ছন্ন নোট নিশ্চিতে ছেঁড়াফাটা নোট তুলে নিয়ে যথা নিয়মে ধ্বংস করে নতুন নোট প্রতিস্থাপন করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ১০০০ টাকার নোট ছাপাতে ৫ টাকা ও ৫০০ টাকার নোট ছাপানোয় খরচ পড়ে ৪ টাকা ৭০ পয়সা। এছাড়া ২০০ টাকার নোটে ৩ টাকা ২০ পয়সা, ১০০ টাকার নোটে ৪ টাকা এবং ১০, ২০ ও ৫০ টাকার সবগুলো নোটই দেড় টাকা খরচ পড়ে। এছাড়া ৫ টাকা, ২ টাকার নোট ছাপাতে খরচ পড়ে ১ টাকা ৪০ পয়সা। সবচেয়ে বেশি খরচ হয় ধাতব কয়েন তৈরিতে। প্রতিটি কয়েনে সমপরিমাণ টাকা খরচ পড়ে যায়। বিশ্বব্যাপী কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে এই খরচ কিছুটা বেড়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন জানান, টাকা ছাপাতে হলে রিজার্ভ এবং পর্যাপ্ত গোল্ড থাকতে হবে। চাইলেই টাকা ছাপানো যায় না, কিছু বাধ্যবাধকতা আছে। সরকার যদি চায় সহায়তা নিতে, সেক্ষেত্রে সরকারের অনুরোধে একটা বাধ্যবাধকতা চলে আসে। সরকার, সেন্ট্রাল ব্যাংক ও বোর্ডের অনুমোদনের মাধ্যমে টাকা ছাপানো হয়। আবার ফাইন্যান্সিয়াল কারেন্সি ডিপার্টমেন্ট টাকা ছাপায় যেটা নির্ভর করে, রিকয়ারমেন্ট কত আছে কিংবা পুরোনো নোট যখন ইকোনমি এক্সপান্ড করে সে হিসাবে।
টাকা ছাপানোর খরচের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বিডি ডাইজেস্টকে বলেন, ‘এর আগে নকশা অক্ষুণ্ন রেখে টাকা শুধু ছাপা হতো। এবার এখন যারা নকশা করছেন, সেসব চিত্রশিল্পীকে একটা বড় অ্যামাউন্ট দিতে হবে। যা আগে দেওয়া হয়নি। এখন সব মূল্যমানের নোট ছাপতে হবে এটা বলে দিয়েছি। যদিও একসঙ্গে সব নোট বাজারে আসবে না। সবগুলোতেই নতুন নকশা থাকছে- এটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নোটের পরিমাণও বাড়বে। স্বাভাবিকভাবেই খরচ বাড়বে। খরচ কয়েক গুণ হবে।’