বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত এক জটিল অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি বাংলাদেশি পোশাকের ওপর ৩৭ শতাংশ নতুন শুল্কারোপের ঘোষণা দিয়েছে, যা ৯ই এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছে। এর ফলে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক পণ্য আটকে পড়েছে বন্দরে ও জাহাজে। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার ৮০ কোটি টাকা।
বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতিতে তাঁদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে ইতোমধ্যে রপ্তানির জন্য প্রস্তুত পণ্যগুলো নিয়ে। প্রতি মাসে যুক্তরাষ্ট্রে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়, তার অনেকটাই এখন অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “এই পণ্যের উপর কি নতুন শুল্ক কার্যকর হবে, নাকি আগের নিয়মে যাবে?”
২রা এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট যেভাবে শুল্কারোপের ঘোষণা দিয়েছেন, তাতে আগে অর্ডারকৃত এবং বর্তমানে তৈরি হওয়া পণ্যের ভাগ্য নিয়েও তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। বিশেষ করে, যেসব পণ্য শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর পাঠানো হবে, তাদের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত।
উদ্যোক্তারা আশঙ্কা করছেন, শিপমেন্টে বিলম্ব হলে রপ্তানি আয় থেমে যাবে, ফলে ব্যাংক ঋণ পরিশোধে বিঘ্ন ঘটবে এবং নতুন এলসি খুলতেও সমস্যা হবে। যার ফলশ্রুতিতে কারখানা বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে এবং শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে।
বর্তমানে দেশের গার্মেন্ট খাতে প্রায় ৫০ লাখ ১৭ হাজারেরও বেশি শ্রমিক কাজ করছেন, যাদের ৫৫ শতাংশই নারী। রপ্তানিতে ধাক্কা লাগলে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে শ্রমিকদের আয়ে ও কর্মসংস্থানে।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কাজী রুহুল আমিন জানিয়েছেন, পোশাক শিল্পে আয়ের ঘাটতি হলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শ্রমিকরাই। আয় কমে গেলে মালিকরা প্রথমেই বেতন কমানোর পথ বেছে নেন—এই বাস্তবতা অস্বীকার করা যাবে না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে কূটনৈতিকভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। পরিস্থিতি অবহেলা করলে তৈরি পোশাক শিল্প এবং এর সঙ্গে জড়িত কোটি মানুষের জীবিকা চরম হুমকির মুখে পড়বে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ সতর্ক করে বলেছেন, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে শ্রমিকদের আয়ের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের সংকট তৈরি হতে পারে।