‘মিস আর্থ বাংলাদেশ ২০২০’ বিজয়ী মডেল মেঘনা আলমকে নিজ বাসার দরজা ভেঙে ভাটারা থানা পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যায়। প্রথমে পুলিশ স্বীকার না করলেও পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা শুরু হলে পুলিশ দাবি করে তাকে ‘বিশেষ ক্ষমতা আইনে’ আটক করা হয়েছে। পুলিশ তার বিরুদ্ধে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক নষ্টের অভিযোগ করেছে। তবে ‘সুনির্দিষ্ট’ কোন অভিযোগ উল্লেখ করেনি পুলিশ।
মেঘলার বোন তাসিন আফরিন দিয়ানা অভিযোগ, বাসা থেকে মেঘনাকে অপহরণ করা হয়েছে। বোনের বিষয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূতকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধও জানান তিনি। এদিকে নিজ দেশের নাগরিককে নিরাপত্তা না দিয়ে বিনা অপরাধে জেলে নেওয়ায় সমালোচনা শুরু হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে।
সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত তার প্রথম স্ত্রীকে না জানিয়ে মেঘনা আলমের সঙ্গে বাগদান সারেন। পরে মেঘনা বিষয়টি জানতে পেরে রাষ্ট্রদূতের স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং এনগেজমেন্টের আংটি ফিরিয়ে দেন।
লাইভে মেঘনার অভিযোগ অনুযায়ী, এরপর থেকে ওই রাষ্ট্রদূত ব্যক্তিগত ও অভ্যন্তরীণ বিষয়াদি নিয়ে তাকে হয়রানি করছিলেন। এর মধ্যে এক রাতে তার বাসায় ৭-৮ জন ব্যক্তি উপস্থিত হয়ে তাকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ করেন মেঘনা।
গোয়েন্দা সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিষয়টি এরই মধ্যে ভাটারা থানা পুলিশ এবং গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) নজরদারিতে রয়েছে এবং তারা আইনগত কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এ বিষয়ে আইজিপিও অবগত রয়েছেন।
নাগরিকদের নিরাপত্তা না দিয়ে জেলখানায়: ইউনূস-সরকারের সমালোচনায় জনতা
শুভ কামাল নামে একজন লিখেছেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে বাঙ্গালি নারীদের বিদেশী এম্বেসেডরদের দাসীবৃত্তিতে বাধ্য করছে ইউসুফ সরকার। রাজি না হওয়ায় গুম করেছে, সেই গুমের নতুন ভদ্র লাল নাম ‘এডমিনিস্ট্রেটিভ ডিটেনশন’!
কোন মামলা কিংবা ওয়ারেন্ট ছাড়া আটকে রাখা আর গুম একই জিনিস দাবি করে তিনি লিখেছেন, ‘এই এম্বেসেডর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে, তার নিজের বিয়ের কথা গোপন রেখে ফস্টিনস্টি করতে চাইছিলো। বাঙ্গালি নারী মেঘনা এই প্রতারণা ধরে ফেলায় রাষ্ট্রীয়ভাবে তাকে হেনস্থা করা হচ্ছে’!!
জাহিদ হাসান নামের এক সাংবাদিক লিখেছেন, ‘মেঘনা আলম মেয়েটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজ করেন। তিনি উচ্চ শিক্ষিত এবং পেশাদার মডেল। তিনি বেশ বড় কিছু মঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তার ঘটনাটি খুব হালকা করে নেয়ার সুযোগ নেই। জাপানের মতো দেশের বড় প্রতিষ্ঠানের ব্রান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবে কাজ করছেন। ম্যারিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তার পিএইচডি রয়েছে’।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞানের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা লিখেছেন, ‘সৌদি এম্বেসেডরের সাথে বাগদানের আংটি ফিরিয়ে দিয়ে ফে বু এ পোস্ট দিয়েছিলেন, তা থেকে বোঝা যায় তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন। প্রতারিত হওয়ার খবর প্রকাশ অপরাধ! বাংলাদেশের নারীদের বিয়ে সংক্রান্ত প্রতারণার ইতিহাস ভুড়ি ভুড়ি, তাতে আর একটি যোগ হল, এমন কি?! এইজন্যে প্রতিকারের কোন জায়গা নাই’!
এর আগে গত বুধবার সন্ধ্যায় ফেসবুকে মেঘনা আলমের লাইভ চলার মধ্যেই তার অভিযোগ অনুযায়ী বাসার ‘দরজা ভেঙে’ পুলিশ পরিচয়ধারীরা ভেতরে প্রবেশের পরপরই লাইভটি বন্ধ হয়ে যায়। ১২ মিনিটের বেশি সময় ধরে চলা লাইভটি এরপর ডিলিটও হয়ে যায়। এর আগে মেঘনা আলম লাইভে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন। তিনি বাংলাদেশে নিযুক্ত একটি দেশের রাষ্ট্রদূতের নাম উল্লেখ করে দাবি করেন, তিনি হয়রানি করতে পুলিশ পাঠিয়েছেন।
লাইভে মেঘনা জানান, পুলিশ পরিচয়ধারীরা প্রথমে পরিচয় গোপন করে বাসায় প্রবেশের চেষ্টা করে। কিন্তু দরজা না খোলায় একপর্যায়ে তারা নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে তার বাসায় মাদক আছে বলে দাবি করে। এ কথা শুনে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন জানিয়ে লাইভে মেঘনা বলেন, ‘আমি কখনো মাদক নিই না। আমাকে মাদক মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে।’
একপর্যায়ে লাইভে থাকা অবস্থাতেই মেঘনা তার আইনজীবীকে ফোন করেন। পরে আইনজীবীর পরামর্শে তিনি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করেন। সেই কল শেষ হতে না হতেই পুলিশ পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিরা বাসার দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করছে বলে লাইভে জানান মেঘনা। এরপর অন্য একটি কক্ষে গিয়ে তিনি দরজা বন্ধ করে দেন। সেটিও ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে কয়েকজন। তবে দরজা ভেঙে কারা ভেতরে ঢুকেছে, তা লাইভে দেখা যায়নি। ভেতরে ঢুকেই একজন নারী মেঘনার হাত থেকে তার মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেন। এর পরই লাইভটি বন্ধ হয়ে যায়।
পরে বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে মেঘনার বোন তাসিন আফরিন দিয়ানা ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্ট করে বলেন, ‘আমার বোনকে অপহরণ করা হয়েছে। দুই ঘণ্টা ধরে মিসিং।’