বাঙালির সর্বজনীন উৎসব বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে বাণী দিয়েছেন। আজ ১৪ই এপ্রিল, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে এই বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যা বলেছেন:
প্রিয় দেশবাসী, শুভ নববর্ষ। বাংলা পঞ্জিকায় বৈশাখের প্রথম দিনের সূচনার মধ্য দিয়ে নতুন বঙ্গাব্দের যাত্রা শুরু হয়, যা পহেলা বৈশাখ হিসেবে স্বীকৃত। সবাইকে বাংলা নববর্ষের (১৪৩২) শুভেচ্ছা।
পহেলা বৈশাখ বাঙালির সর্বজনীন উৎসব। অতীতের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে নতুন করে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় উদযাপিত হয় নববর্ষ। ভোরের প্রথম আলো রাঙিয়ে দেয় নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে। নববর্ষই বাঙালি জাতিকে একত্র করে তার স্বাতন্ত্র্য জীবনবোধে, স্বকীয় সংস্কৃতিতে। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র সব পরিচয়ের সমষ্টি নিয়ে চিরায়ত সাংস্কৃতিক ঐকতানে আজ সকলকে আহ্বান জানাচ্ছি জীর্ণ আর পুরাতনকে পেছনে ফেলে নতুন বছরে প্রবেশ করতে। পুরোনো বছরের শেষ দুইদিন ও নতুন বছরের প্রথম দিন বাংলাদেশের আদিবাসীরাও বৈচিত্রপূর্ণ উৎসবের মধ্য দিয়ে নবজীবনের, নববর্ষের স্ফূরণ ঘটায়। তাদেরকেও নতুন বছরের শুভেচ্ছা।
প্রিয় দেশবাসী, আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে আছে পহেলা বৈশাখ। আবহমানকাল ধরে প্রবাহমান যে সাংস্কৃতিক ধারা, তা বহুবিচিত্র প্রভাব ও প্রতিবন্ধকতা থাকার পরও দেশের মাটির আপন পরিবেশে লালিত ও পরিপুষ্ট। এ দিনটি বাংলাদেশের সকল নাগরিকের গৌরব ও সমৃদ্ধির উত্তরাধিকার। ধর্ম ও জাতিভেদ থাকা সত্ত্বেও সাংস্কৃতিক জাতিসত্তার স্মারক এই দিনটিকে আড়ম্বরের সঙ্গে উদযাপন করে বাংলাদেশের মানুষেরা। এটাই আমাদের চিরায়ত ঐক্য ও সম্প্রীতির মেলবন্ধন।
প্রিয় বাংলাদেশ, স্বাধীনতার পর নব উদ্যমে নববর্ষ উদযাপন করা হয়। দেশ স্বাধীনের পর বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীকে পরিণত হয় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। কিন্তু ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে বাঙালির সংস্কৃতির ধারাকে ধূলিসাৎ করে পাকিস্তানি ধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। সংস্কৃতির মাঝে সুকৌশলে রাজনৈতিক বিষ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। বিপরীতে বাঙালিও চুপ করে বসে থাকেনি, চালিয়ে গেছে অবিরাম সাংস্কৃতিক সংগ্রাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে প্রতিবছর মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়; ২০১৬ সালের ৩০শে নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদার স্বীকৃতি দিয়ে আমাদের গোরবান্বিত করে। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ সরকারই চাকরিজীবীদের জন্য ঈদ-পূজার উৎসব ভাতার ন্যায় ‘বৈশাখী ভাতা’ চালু করে।
প্রিয় সংগ্রামী জনতা, আজ বাংলাদেশে স্বাধীনতাবিরোধীরা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে। তারা বাঙালির সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দিতে তৎপর। এর আগেও যখনই স্বাধীনতার মূল্যবোধবিরোধী শক্তির প্রতিভূরা রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছিল তখনই তারা বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির উপর আক্রমণ চালিয়েছে। মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধের তৎপরতাসহ এর নামও পরিবর্তন করা হয়েছিল। কিন্তু বাঙালি জাতি তা মেনে নেয়নি। মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করার দুঃসাহস করেছে। বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে যারা এইসব অপতৎপরতা চলাচ্ছে, তারা জাতির শত্রু, সংস্কৃতির শত্রু, দেশের শত্রু। দেশের জনগণ তাদের এই পাঁয়তারা সফল হতে দেবে না।
পহেলা বৈশাখে দেশ ও জাতির মঙ্গলে জনগণের ভেতরে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত দেশপ্রেম জাগ্রত হোক, খুলে যাক সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। স্বাধীনতাবিরোধী, বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিরোধী অপশক্তিকে হটিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। সমাগত বাংলা নববর্ষের এই শুভলগ্নে আমাদের অঙ্গীকার হোক যা কিছু অসুস্থ, অসুন্দর, অপসংস্কৃতি; তা বর্জন করে সুস্থ-সুন্দর সংস্কৃতি ও সৃজনশীল জীবন যাপন করি। বাংলা নববর্ষে এই হোক আমাদের প্রত্যাশা। জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু। আঁধার কেটে ভোর হোক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় সাধারণ মানুষ কমেন্টের ঘরে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান লিখেছেন। একইসাথে তাঁর নেতৃত্বের প্রতি অবিচল আস্থা প্রকাশ করেছেন।