[সৌমিত্র দেব টিটো কবি, সংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিক সহসা মৃত্যুবরণ করেন। এমন কোনো বড় অসুখ ছিল না তাঁর। কয়দিন আগে তিনি মবজাস্টিজের শিকার হন, ৭মার্চ ছুটি বাতিলের প্রতিবাদী হওয়া ফেস্টুন বহনকালে। নির্যাতনে শারীরিকভাবে যতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হন, তার চে বেশি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এরপর ঘটলো তাঁর তিরোধান। তাঁর এ অকালযাত্রা সতীর্থ কবি,সংস্কৃতিকর্মীরা মেনে নিতে পারছেন না। বহুসংখ্যক গুণী,সুধীজন তাঁর পাশে উপযুক্ত সময় দাঁড়াতে না-পারার অক্ষমতা নিয়ে স্যোসাল মিডিয়ায় ক্ষোভ আর যন্ত্রনার কথা লিখছেন। এমনি একজন ।। লুৎফর রহমান রিটন।। রিটনের কলমঝরা আক্ষেপ হৃদয়ছোঁয়া, পাঠকদের জন্য তুলে দেয়া হলো।]
টিটো। সৌমিত্র দেব টিটো। আমার প্রীতিভাজন অনুজপ্রতিম বন্ধু। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীনতা এবং বঙ্গবন্ধু প্রশ্নে আপসহীন এক সহযোদ্ধা।
সদা হাসিমুখ। অত্যন্ত বিনয়ী।
অনুচ্চ কণ্ঠ।
কিন্তু চেতনায় শানিত উজ্জ্বল। আদর্শে অনঢ় অটল।

[সৌমিত্র দেব টিটো কে পেটাচ্ছে ‘মবজাস্টিজ’ সন্ত্রাসীরা,১৯ অক্টাবর ২০২৪,জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে।
গত ১৯ অক্টোবর ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ৭ মার্চ ও ১৫ আগস্টকে বাতিলের প্রতিবাদে ক্রিয়েটিভ রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে সৌমিত্র দেব টিটোর নেতৃত্বে কুতুব হিলালীসহ হাতে গোণা কয়েকজন তরুণ এসে জড়ো হয়েছিলো। তারা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানাচ্ছিলো। এক পর্যায়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হঠাৎ ১৫-২০ জনের একটি ‘সন্ত্রসী দল’ বাঁশ-লাঠি-আখ হাতে ছুটে এসে ওদের ওপর হামলা চালায়।
হামলায় আহত টিটোর সাক্ষাৎকার নেবার চেষ্টা করেন একজন সিটিজেন জার্নালিস্ট। সেই সাক্ষাৎকারের ভিডিও ক্লিপটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছিলো বিদ্যুৎ গতিতে।
কিন্তু আমাদের জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো এবং টিভি চ্যানেলগুলো এই সংবাদটি ছেপে না দিয়ে চেপে গিয়েছিলো!
সেই ভিডিও সাক্ষাৎকারে আকস্মিক হামলায় আহত ও পর্যুদস্ত এজমার পেসেন্ট সৌমিত্র দেব টিটো প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলছিলো–
‘আমি আসছি এখানে, আমি আসছিলাম, আমার কিছু দাবি দাওয়া নিয়ে। সাত মার্চ ঐতিহাসিক সাত মার্চের দিবসটি বাতিল করার অভিযোগে, প্রতিবাদে, আমরা কিছু কথা বলতে এসেছিলাম। বাংলাদেশে বাক স্বাধীনতা নাই। আমাকে তারা অন্যায় ভাবে প্রহার করেছে। আমি একজন কবি। আমি একজন সাংবাদিক। আমি এসেছিলাম সাত মার্চের যে দিবসটি বাতিল করা হয়েছে এর প্রতিবাদ জানাতে। আমাদের বাক স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলতে। তার আমাকে এইভাবে অপদস্ত করেছে। আমাকে প্রাণ নাশের চেষ্টা করেছে। আমি আমার জীবনের নিরপত্তা চাই।’
অত্যন্ত বেদনার বিষয়, হামলায় আহত সৌমিত্র দেব টিটো টাকার অভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাও নিতে পারেনি। আক্রান্ত টিটোর পাশে এসে দাঁড়ায়নি কবিদের কোনো সংগঠন কিংবা সাংবাদিকদের কোনো সংস্থা। খোঁজ নেয়নি আওয়ামী লীগের কোনো নেতাও।
সেদিন আহত হওয়া সৌমিত্র দেব টিটো আজ মারা গেছে।
দশ বারো বছরের একটি পুত্র সন্তান এবং স্ত্রীকে অনটনের অকুল দরিয়ায় একলা একা অরক্ষিত ফেলে রেখে গেছে আমাদের সাহসী বন্ধুটি।
আহারে!
বাক স্বাধীনতার দাবি জানাতে এসে, ৭মার্চকে বাতিল ঘোষণার প্রতিবাদ জানাতে এসে ইউনুসের মব সরকারের লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীদের হাতে আহত কবিকে বলতে গেলে বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মরে যেতে হলো। ধিক!
হাসান মোরশেদ তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছে–‘৫ আগষ্ট পরবর্তী প্রতিবাদ প্রতিরোধের ইতিহাস যদি কোনদিন লেখা হয় এই ঘটনাটি মর্যাদা পাবে।’
পাবে কী!?
বেঁচে থাকতে তো পেলো না!
মরে গিয়ে পেয়ে কী হবে!!
বিদায় টিটো। বিদায় সৌমিত্র দেব।
আমাদের সম্মিলিত অক্ষমতাকে ক্ষমা করে দিও অনুজপ্রতিম বন্ধু আমার…
লুৎফর রহমান রিটন, অটোয়া ১৫ এপ্রিল ২০২৫