দলের কর্মী-সমর্থকদের এবার আঘাতের জবাবে প্রতিঘাতের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, “আপনারা অনেক সহ্য করেছেন, আর নয়। আর আমার হুকুমের অপেক্ষায় থাকবেন না। হুকুম যা দেওয়ার দিয়ে দিলাম। এক গালে চড় মারলে আর এক গাল এগিয়ে দেবেন না। পাল্টা কষিয়ে চড় মারবেন।”
দেশত্যাগের পর থেকে শেখ হাসিনা নিয়মিত দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যোগাযোগ রাখছেন। তাদের সাথে কথোপকথন এবং বিভিন্ন নির্দেশনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুকে পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেল থেকেও সরাসরি সম্প্রচারও করা হচ্ছে।
গত সোমবার রাতে তেমনই একটি ভার্চুয়াল আলোচনা ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে একযোগে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছে। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা ওই আলাপে কর্মী-সমর্থকদের সমস্যার কথা শোনেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
এসময় শেখ হাসিনা কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, এক গালে চড় মারলে আরেক গাল পেতে দেওয়ার সময় শেষ। এখন যারা আমাদের ওপর আঘাত করেছে, তাদের জবাব দিতে হবে, শিক্ষা দিতে হবে। কবে সময় আসবে সেটার জন্য অপেক্ষা করলে হবে না— এখন থেকেই কাজ শুরু করতে হবে।
আলাপের এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা ২০০১ সালের দুঃসহ স্মৃতি তুলে ধরে বলেন, আমরা তখন সহ্য করেছি, ধৈর্য ধরেছি। দেশটাকে উন্নয়ন করেছি। আজ সেই উন্নয়নও নষ্ট করার চেষ্টা চলছে। আমরা আর বসে থাকব না। যার যার অবস্থান থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগে নেতৃত্বের সংকট নেই। দুর্দিনে যারা কাজ করেন, তারাই প্রকৃত নেতা। এখন আর কাউকে হুকুমের অপেক্ষায় বসে থাকলে চলবে না। আমি হুকুম দিয়েছি— এখনই কাজে নামতে হবে।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ২০০৪ সালের ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলা এবং নানা প্রতিকূলতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আল্লাহ বারবার আমাকে বাঁচিয়েছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার মাধ্যমে কিছু করাতে চান, দেশ ও জাতির কল্যাণেই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি, জাতির পিতার হত্যার বিচার করেছি, বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত করেছি। কিন্তু আবারও সেই উন্নয়ন ধ্বংসের চেষ্টা চলছে।
লাইভ অনুষ্ঠানে দেশবাসীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আমি জনগণকে বলব— ধৈর্য্য ধরুন, ঐক্যবদ্ধ থাকুন। যেখানে অন্যায় দেখবেন, সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। এখন বিচার-বিবেচনার সময় নয়, এখন ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের জন্য কাজ করার সময়। বাংলাদেশকে এই দুর্বৃত্ত, খুনি, জঙ্গি, দুর্নীতিবাজ, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। সবাই এক হয়ে কাজ করুন, সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।
সোমবারের সেই লাইভ অনুষ্ঠানে দেওয়া শেখ হাসিনার বক্তব্য আওয়ামী লীগ ছাড়াও রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার ঝড় তুলেছে।
মেটিক্যুলাস ডিজাইনের মাধ্যমে জঙ্গি হামলার পর গত বছরের ৫ই আগস্ট দেশত্যাগের পর থেকে নিয়মিত নেতা-কর্মীদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন, নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা। এখন তিনি প্রায় প্রতি সপ্তাহে আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেল থেকে দেশে থাকা নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দিচ্ছেন, নির্দেশনা দিচ্ছেন, কর্মী-সমর্থকদের কথা শুনছেন। কথা বলছেন দলের শহিদ নেতা-কর্মীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও। শহিদ পুলিশ সদস্যদের পরিবারের সাথেও কথা বলেছেন তিনি।
তবে প্রকাশ্যে এর আগে আঘাতের জবাবে পাল্টা প্রতিঘাতের কথা বলেননি তিনি। যদিও দলের হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রামের ব্রডকাস্টিং চ্যানেলগুলোতে তিনি আরও আগে থেকে প্রস্তুত হওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। নেতা-কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে বলছিলেন, “যার যা আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত হোন। আর যারা হামলা করেছে তাদের চিহ্নিত করে রাখুন। দিন আসছে, মাঠে নেমে ইউনূস বাহিনীকে মোকাবিলা করতে হবে।”
তবে সেই সভাগুলো প্রকাশ্য ভার্চুয়াল সভা নয়। শুধুমাত্র গ্রুপের সদস্যরাই শুধু এই নির্দেশনাগুলো শুনেছেন। তবে এবার মুখ খুললেন আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলের নিয়মিত অনুষ্ঠানে।
এর আগে, গত সপ্তাহে ইউনূস-সরকারের অনুগত বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর উর্ধ্বতন পর্যায় থেকে সরবরাহ করা একটি নির্দেশের প্রেক্ষিতে কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। পুলিশের ঢাকার সদর দপ্তর থেকে সারা দেশের পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার করতে। যার প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা তাঁর কর্মী-সমর্থকদের এর (অন্যায়-অবিচার) শেষ দেখে ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
পুলিশের নির্দেশনায় ‘গোয়েন্দা প্রতিবেদন’-এর বরাতে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ দলের প্রতিটি ইউনিটকে নির্দেশ দিয়েছে, ঢাকায় দুশো-আড়াইশো জনকে জড়ো করতে। শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে এমন পরিকল্পনা করা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে- রেল স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, ফেরিঘাটে নজরদারি বাড়াতে এবং তল্লাশি চালাতে। যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, তাদের মোবাইল ট্র্যাক করে গ্রেপ্তার করতে বলা হয়।
গত বছরের ৫ই আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগ কোণঠাসা হয়ে পড়লেও সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ঝটিকা মিছিল, প্রতিবাদী সভা-সমাবেশের খবর প্রকাশ্যে আসছে। নেতা-কর্মীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের উজ্জীবিত এবং প্রস্তুত বলেও জানান দিচ্ছেন।