ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শান্তিপূর্ণ জমায়েত, প্রতিবাদ এবং রাজনৈতিক ভিন্নমত প্রকাশের সাংবিধানিক অধিকারকে দমন করার এক ভয়াবহ অভিযানে নেমেছে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী কর্তৃক পুলিশকে আওয়ামী লীগের যেকোনো মিছিল ঠেকাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে—এই পদক্ষেপটি দেশের নাজুক গণতন্ত্রের জন্য এক বিপজ্জনক মোড়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার প্রকাশ্য হুমকি— যে কোনো পুলিশ সদস্য যদি আওয়ামী লীগের মিছিল ঠেকাতে ব্যর্থ হন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে— এটি কেবল রাজনৈতিক বহুত্ববাদকে অস্বীকার করে না, বরং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের ইঙ্গিত দেয়। এর মাধ্যমে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে: রাস্তাঘাট শুধু শাসকপক্ষের জন্য, আর যারা বিরোধিতা করবে তারা থাকবে ভয়ের মধ্যে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) আওয়ামী লীগ-সমর্থিত ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর ঝটিকা মিছিলকে “আতঙ্কজনক পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা” হিসেবে অভিহিত করেছে। বাস্তবে চরম দমননীতির মধ্যে এসব সংগঠন কয়েক মিনিটের জন্য প্রতীকী প্রতিবাদ করেই সরে যায়— কারণ তারা জানে, শহরের রাস্তাগুলো আজ এক ভীতিকর স্থানে পরিণত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে। অপরাধীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, অপরাধ করছে। কোনো ঘটনার ছবি-ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশি তৎপরতা দেখা যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদেরকে “ভীতি-জাগানিয়া” আখ্যা দিয়ে আটক করা হয়েছে। এদের ‘অপরাধ’—একটি অন্যায় নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
দেশের এই ক্রান্তিকাল শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের জন্য নয়। এটা আসলে সমগ্র বাংলাদেশের জনগণের। তারা কি শান্তিপূর্ণভাবে সরকারের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করতে পারবে, নাকি তাদের জন্য অপেক্ষমান রয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি, হয়রানি আর কারাগার? অন্তর্বর্তী সরকারের এমন দমন-পীড়নমূলক অবস্থান ভয়ানক এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে: ভিন্নমত মানেই যেন নৈরাজ্য, আর প্রতিবাদ মানেই যেন অপরাধ।
একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মূল দায়িত্ব হলো— সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করে সরে দাঁড়ানো। কিন্তু ইউনূস-সরকার নিজেদের সেই বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে ইতিমধ্যে। কারণ তারা একটি বড় রাজনৈতিক দলকেই কার্যত নিষিদ্ধ করে ফেলেছে। যে দলটির রয়েছে বিপুল জনসমর্থন।
বাংলাদেশের ইতিহাস বলে, জনগণ এই দমন, নির্যাতন, নিপীড়নের সামনে নীরব থাকতে পারে না। প্রতিবাদকে অপরাধ সাব্যস্ত করার অর্থ জনতার কণ্ঠরোধ। আর রাষ্ট্র যদি ঠিক করে দেয়, কে কথা বলবে আর কে চুপ থাকবে, তবে বিলুপ্ত হতে থাকবে দেশের স্বাধীনতা; যার জন্য একদিন এই দেশের মানুষ যুদ্ধ করেছিল, অকাতরে প্রাণ দিয়েছিল।( বিডি ডাইজেস্ট,২০ এপ্রিল। সম্পাদকীয়