দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে বান্দরবানে মিয়ানমারের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মি বাংলাদেশের মাটিতে একটি চরম উদ্বেগজনক পদক্ষেপ নিয়েছে।
তারা ‘আরাখা ওয়াটার ফেস্টিভ্যাল’ নামে একটি উৎসবের আয়োজন করেছে, যেখানে অস্ত্রধারী আরাকান আর্মির সদস্যরা প্রকাশ্যে গান, নাচ, ও বক্তৃতার মাধ্যমে তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছে। উৎসবস্থল আরাকান আর্মির পতাকা ও প্রতীকে সজ্জিত ছিল, যা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এছাড়া তথ্যসুত্রে জানা যায়, আরকান আর্মি প্রধান তিন মার্কিন প্রশাসকের সাথে আলাপ করতে ঢাকায় অবস্থান করছে। আরকান আর্মির যুদ্ধে বাংলাদেশের করিডর দেয়া নিয়েও বিস্তর আলাপ-আলোচনা শোনা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। এই অবস্থায় আরকান আর্মি ২০০ কিলোমিটারেরও বেশি বিস্তৃত বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের দখল নিয়েছে এবং নির্বিঘ্নে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বান্দরবন আসা-যাওয়া করছে নিয়মিত।
এই ঘটনা আরও উদ্বেগজনক হয়েছে যখন জানা গেছে, স্থানীয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর একাংশ এই উৎসবে অংশ নিয়ে আরাকান আর্মির প্রতি সমর্থন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। এটি শুধু রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের অবমাননাই নয়, বরং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি।
বিশেষ করে, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও কোনো হস্তক্ষেপ না করায় প্রশ্ন উঠেছে—এটি কি প্রশাসনিক অক্ষমতা, নাকি রাজনৈতিক নির্দেশনার অভাব?
বিশ্লেষকদের মতে, এই উৎসব কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আরাকান আর্মি সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, ও সামরিকভাবে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এটি আয়োজন করেছে। তারা এই অঞ্চলে একটি ‘ছায়া-রাষ্ট্র’ গঠনের ছক কষছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই ঘটনার পেছনে ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও গুরুত্বপূর্ণ। আরাকান রাজ্যে চীনের ৯ বিলিয়ন ডলারের কিউকপিউ বন্দর প্রকল্প, খনিজ সম্পদ, ও সমুদ্রপথে আধিপত্য নিয়ে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ও ভারতের মধ্যে প্রতিযোগিতা তীব্র। এই পরিস্থিতিতে ড. ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফরে দেওয়া বক্তব্য, ‘এই অঞ্চলের সমুদ্রের একক অভিভাবক বাংলাদেশ’, বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সমালোচকদের মতে, তিনি এই বক্তব্যের মাধ্যমে পরাশক্তিগুলোর কাছে ক্ষমতায় টিকে থাকার বিনিময়ে তাদের আধিপত্য নিশ্চিত করার প্রস্তাব দিয়েছেন।
এই ভূরাজনৈতিক খেলায় বাংলাদেশ পরাশক্তিগুলোর প্রক্সি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এতে দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হতে পারে, যখন লাভবান হবে কেবল বাইরের শক্তিগুলো।
এই ঘটনা বাংলাদেশের জন্য একটি অশনি সংকেত। সরকারের উচিত অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা জোরদার করা, আরাকান আর্মির কার্যক্রমের উপর কঠোর নজরদারি, এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে জাতীয় ঐক্য জোরদার করার উদ্যোগ নেওয়া। একই সঙ্গে, ভূরাজনৈতিক খেলায় নিরপেক্ষ ও স্বাধীন অবস্থান বজায় রেখে দেশের স্বার্থ সুরক্ষিত করতে হবে।
বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা এখন কঠিন পরীক্ষার মুখে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সময়োপযোগী ও দৃঢ় পদক্ষেপ ছাড়া পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক সরকারের অভাব লক্ষনীয়ভাবে প্রকট হচ্ছে।
একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে শক্তভাবে আলোচনা করতে পারে, মতামত, ইচ্ছা অনিচ্ছা ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে দরদাম করতে পারে। কিন্তু সেটা ড. ইউনূসের পুতুল সরকার করতে পারছে না। কারণ তারা গ্রহণযোগ্যতা পেতে যে কোন শর্তে রাজী হয়ে যায়। এমনটাই মনে করছেন আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।