খ্রিস্টান ধর্মের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস মারা গেছেন। ৮৮ বছর বয়সে মারা গেলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের গুরুতর জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। এর আগে ইতালির রোমে একটি হাসপাতালে বেশ কিছুদিন চিকিৎসা চলেছে তার।
ভ্যাটিকানের কাসা সান্তা মার্তা বাসভবনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বলে জানিয়েছে ভ্যাটিকান নিউজ সার্ভিস। খবর বিবিসির।
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত পোপ ফ্রান্সিসকে এ বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে বেশ কয়েকবার তার শারীরিক অবস্থা বেশ গুরুতর পর্যায়ে চলে যায়। ভ্যাটিকান জানায়, শ্বাসপ্রশ্বাস-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে পোপ ফ্রান্সিসকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। কদিন আগে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরেন পোপ।
ভ্যাটিকানের মুখপাত্র কার্ডিনাল ফারেল এক বিবৃতিতে বলেন, তার পুরো জীবন ছিল প্রভু ও তার গির্জার সেবায় নিবেদিত।
মৃত্যুর একদিন আগেও তিনি সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে হাজির হয়ে হাজারো উপাসকের উদ্দেশ্যে “শুভ ইস্টার” বার্তা প্রদান করেছিলেন।
পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে খ্রিস্টান সম্প্রদায়সহ গোটা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মানুষদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
বিশ্ব নেতাদের মধ্যে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ প্রথম দিকেই পোপ ফ্রান্সিসকে শ্রদ্ধা জানান। তিনি পোপকে স্মরণ করে বলেন, “তিনি ছিলেন বিনয়ের প্রতীক, সবসময় দুর্বল ও অসহায় মানুষের পাশে ছিলেন তিনি।”
ভ্যাটিকানের দাপ্তরিক ওয়েবসাইট ‘দি হোলি সি’–এর তথ্যমতে, পোপ ফ্রান্সিসের আগের নাম জর্জ মারিও বারগোগ্লিও। জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর, আর্জেন্টিনার বুয়েনস এইরেসের। বাবা মারিও আর রেগিনা সিভোরি। ইতালীয় অভিবাসী বাবা মারিও ছিলেন রেলওয়ের হিসাবরক্ষক।
কেমিস্ট হিসেবে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর ধর্মের পথে পা বাড়ান জর্জ মারিও। পরবর্তী সময়ে তিনি দর্শন ও ধর্মতত্ত্বে পড়াশোনা করেন। ১৯৬৯ সাল ধর্মযাজক হন। ১৯৯৮ সালে আর্জেন্টিনায় আর্চবিশপ হন তিনি।
বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২০১৩ সালে তৎকালীন পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট পদ ছেড়ে দিলে পোপ নির্বাচিত হন জর্জ মারিও। নতুন নাম নেন ফ্রান্সিস। দক্ষিণ আমেরিকার কোনো দেশ থেকে নির্বাচিত প্রথম পোপ তিনি।
১২ বছর ধরে রোমান ক্যাথলিক চার্চের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে পোপ ফ্রান্সিস বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ২১ বছর বয়সে তার একটি ফুসফুসের কিছু অংশ কেটে ফেলতে হয়েছিল।
ক্যাথলিক গির্জার বেশকিছু সংস্কারের জন্য পোপ ফ্রান্সিস চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ক্যাথলিক খ্রিষ্টান, নন–ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মের মানুষের মধ্যে ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস।
ধর্মযাজকের হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের এবং কানাডার আদিবাসীদের কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চেয়ে তিনি আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন। সমলিঙ্গের যুগলদের আশীর্বাদ করতে রোমান ক্যাথলিক যাজকদের অনুমতি দিয়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস।
পোপ ফ্রান্সিস বলেছিলেন, ক্যাথলিক গির্জার দরজা সবার জন্য খোলা। এমনকি সমকামী, উভকামী ও রূপান্তরকামীদের (এলজিবিটি) গির্জায় আসতে বাধা নেই। তারা গির্জায় এসে প্রার্থনা করতে পারবেন। তবে, তাদের গির্জার নিয়মনীতি মেনে চলতে হবে।
এ বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পেঙ্গুইন র্যানডম হাউস থেকে প্রকাশিত হয়েছে পোপ ফ্রান্সিসের আত্মজীবনী ‘হোপ’।
পোপ ফ্রান্সিস ২০১৭ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। এ সময় তিনি ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ করে সবার পক্ষ থেকে তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন।