গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে ইউনূস-সরকারের বর্তমান সময়ে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহের নানা প্রচারণা সত্ত্বেও ডলার সংকটে আমদানি বিল পরিশোধে ব্যর্থতায় কাতারের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান কাতার এনার্জি মার্কেটিং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশকে ইউরিয়া সার সরবরাহে নতুন কোনো চুক্তিতে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। একই কারণে অন্যান্য বিদেশি কোম্পানিও সার সরবরাহে অনীহা প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনকে (বিসিআইসি) বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছে কাতার এনার্জি। শুধু তাই নয়, বিলম্বে বিল পরিশোধের জন্য অনেক প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত সুদ আরোপের হুঁশিয়ারিও দিয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয় এসব তথ্য ২০শে মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংককে পাঠানো এক চিঠিতে জানায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের খাদ্য নিরাপত্তার অন্যতম ভিত্তি বোরো মৌসুম। এই সময়ে প্রায় ১২-১৩ লাখ টন ইউরিয়ার প্রয়োজন পড়ে। যথাসময়ে সার না এলে কৃষি উৎপাদন বিঘ্নিত হতে পারে। ফলে শিল্প মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে আমদানি বিল দ্রুত পরিশোধে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চেয়েছে।
বিসিআইসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. নুরুজ্জামান জানান, বিল পরিশোধে বিলম্বের কারণে কাতার এনার্জি সরবরাহ চুক্তি থেকে সরে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঘোড়াশাল ও আশুগঞ্জ সার কারখানা চালু আছে এবং বর্তমান মজুদ ও আমদানি পরিস্থিতি যে পর্যায়ে রয়েছে, তাতে চলতি বোরো মওসুমে সারের সংকট হবে না। তবে এরপর সংকট দেখা দিতে পারে। সে কারণে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
বিসিআইসি জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সৌদি আরবের সাবিক, কাতার এনার্জি এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফার্টিগ্লোবের সঙ্গে জি-টু-জি ভিত্তিতে মোট ৯.৬ লাখ টন ইউরিয়া আমদানির চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে কাতার থেকে ২.৭০ লাখ টন সরবরাহের কথা। কিন্তু বিলম্বে বিল পরিশোধের কারণে চুক্তির নবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
সার আমদানির বিল পরিশোধে দেরি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, রাষ্ট্রীয় আমদানির বিল পরিশোধে আগে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার দিত। এতে রিজার্ভে চাপ পড়ে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার দিচ্ছে না। ফলে বিপুল পরিমাণ ডলার জোগাড় করতে দেরি হচ্ছে, যা বিল পরিশোধে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে।
বিসিআইসি জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে জি-টু-জি চুক্তির আওতায় সৌদি আরবের সাবিক থেকে ১৬টি লটে মোট ৪.৮০ লাখ টন, কাতার এনার্জি মার্কেটিং থেকে ৯টি লটে ২.৭০ লাখ টন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফার্টিগ্লোব থেকে ৭টি লটে ২.১০ লাখ টন ইউরিয়া সার আমদানি হচ্ছে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে, সৌদি থেকে আমদানি করা ১৫তম লটের সারের মূল্য বাবদ ১০.৩৫ মিলিয়ন ডলার গত ২৬শে ফেব্রুয়ারির মধ্যে পরিশোধের কথা থাকলেও এখনো তা করা হয়নি।
চিঠিতে কাতার এনার্জি মার্কেটিং জানায়, কাতার থেকে সরবরাহকৃত ৬ষ্ঠ লটের বিল নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ৩ দিন, ৭ম লটের বিল ৭ দিন এবং ৮ম লটের বিল ১৩ দিন দেরিতে পরিশোধ করা হয়েছে। এভাবে ‘অপেশাদার’ প্রক্রিয়ায় দেরিতে বিল পরিশোধের কারণে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে নতুন চুক্তি স্বাক্ষর না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাতার এনার্জি মার্কেটিং। এভাবেই বলেছে তারা চিঠিতে।
এদিকে, শিল্প মন্ত্রণালয় জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফার্টিগ্লোবের ৩য় লটের সারের জাহাজ লোড পোর্টে পৌঁছেছে। এই লটের মূল্য বাবদ ১৪ মিলিয়ন ডলার চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে পরিশোধ করতে হবে। বিলম্ব হলে পরবর্তী লট আমদানিতে সমস্যা দেখা দেবে এবং বিদেশি ব্যাংক বাড়তি সুদ আরোপ করতে পারে। এই অতিরিক্ত আর্থিক ক্ষতি বহন করতে হবে বাংলাদেশকে।