রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী ও যুবলীগ কর্মী রবিউল ইসলামকে গুলি ও কুপিয়ে জখম করেছে গুপ্ত সংগঠন জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা।
গতকাল বুধবার রাত পৌনে ৯টার দিকে নগরের পঞ্চবটী এলাকার খড়বোনার গাড়োয়ানপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
আহত রবিউল ইসলাম ওরফে রবি (৪০) রাজশাহী নগরের বিনোদপুর এলাকার আজিজুল ইসলাম ওরফে হাবলের ছেলে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী। রবিউলের বড় ভাই শহিদুল ইসলাম ৩০ নম্বর ওয়ার্ড (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের সভাপতি।
৫ই আগস্টের পর ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় তিনি কারাগারে আছেন। তার পরিবারের সবাই যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াত-শিবিরের আতঙ্ক-হুমকিতে অবরুদ্ধ জীবন যাপন করছেন। দুই ভাই জামায়াত-শিবিরের দায়েরকৃত একটি ষড়যন্ত্রমূলক মামলার আসামি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নগরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের পঞ্চবটী এলাকার গাড়োয়ানপাড়ায় রবিউল ইসলাম ভাড়া বাসায় থাকেন। বাড়ির সামনে গতকাল বুধবার রাত পৌনে ৯টার দিকে জামায়াত-শিবিরের ৮-৯ জন সন্ত্রাসী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মোটরসাইকেলে করে এসে তাকে এলোপাথারি গুলি ছোড়ে।
গুলি ছোড়ার পাশাপাশি ধারালো অস্ত্র দিয়েও তাকে উপুর্যপরি কোপায় শিবিরের সন্ত্রাসীরা। তারা তার হাত-পায়ে কুপিয়ে ব্যাপকভাবে আহত করে। তার আর্তচিৎকার শুনে কেউ এগিয়ে আসেনি খুনিদের ভয়ে। জামায়াত-শিবিরের খুনিরা চলে গেছে রবিকে গুরুতর আহত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান স্বজন ও এলাকাবাসী।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী রবিউল ইসলামকে গুলি ও কোপানোর সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, রবি বাড়ির পাশে তার মোটরসাইকেল থামিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। প্রথমে কয়েকটি মোটরসাইকেল আসে। এরপর গুলির শব্দ শোনা যায়। একজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে কোপাতে থাকে।
রবিউল এসময় দৌড়াতে গিয়ে পড়ে যান। এরপর তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। শেষে একজন একেবারে কাছ থেকে তার পা লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। উপুর্যপরি কুপিয়ে শিবিরের খুনিরা চলে যায়।
এ সময় আহত রবিউল আর্তচিৎকারে বলতে থাকেন, ‘আমি কী করেছি।’ দুজন নারী ছুটে আসছিলেন; কিন্তু গুলির শব্দে আবার তারা ফিরে যান। পাশ থেকে নারীরা কাঁদছিলেন।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, রবিউলের পায়ে গুলি লেগেছে। তিনি হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষে আছেন। পুলিশ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ১৩ই মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও পার্শ্ববর্তী বিনোদপুর বাজারে জঙ্গি সংগঠন ছাত্রশিবির এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সেক্রেটারি শরিফুজ্জামান নোমানী নিহত হয়। সেই মামলায় আসামি রবিউল ও তার বড় ভাই শহিদুলকে আসামি সাজানো হয়।
গত ৫ই আগস্ট রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর শহিদুল গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। এ ছাড়া তাদের ভাইদের নামে আরও একাধিক মামলা করা হয়েছে। তাদের পরিবার এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। গুপ্ত সংগঠন জামায়াত-শিবিরের খুনিরা প্রতিদিন হুমকি-ধমকি দিচ্ছে তাদের। অবরুদ্ধ জীবন-যাপন করছেন তারা।