কাশ্মীরের পাহেলগাঁওয়ে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার পেছনে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ জড়িত থাকতে পারে, এমন তথ্য গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
পাকিস্তান ও হামাসের শীর্ষ নেতাদের সমন্বয়ে একটি আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্ক কাশ্মীরে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করছে, যা ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও হেফাজতে ইসলামের জঙ্গি নেতা মুফতি হারুন ইজহারের মধ্যে সাক্ষাৎ ২১শে এপ্রিল, ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের হামলার আগেরদিন অনুষ্ঠিত হয়।
এই বৈঠকটি জঙ্গি নেতাদের বিরুদ্ধে করা নাশকতা মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে করা বলে গণমাধ্যমকে জাননো হলেও লস্কর-ই-তৈয়বার হামলার প্রতিক্রিয়ায় কী হতে পারে সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে ভারতীয় গোয়েন্দাদের দাবী।
হামলার দিনই দুঃখপ্রকাশ না করে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল উল্টো একে ‘ভারতীয় কারসাজি’ এবং এই হামলার পেছনে নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ এবং অজিত দোভাল জড়িত দাবি করে ফেসবুকে পোস্ট দেন। এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলে তিনি পরে পোস্টটি ডিলিট করে দেন।
মুফতি হারুন ইজহার, যিনি কাশ্মীর হামলায় জড়িত লস্কর-ই-তৈয়বার বাংলাদেশ শাখার নেতা, ২০১৩ সালে তার বাড়িতে জঙ্গি কার্যক্রমের জন্য বোমা তৈরি করতে গিয়ে তিনজনকে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত হন।
হেফাজতে ইসলামের কমিটির শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সাবেক সম্পাদক মুফতি হারুন ইজহারের পিতা নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী। হারুন চট্টগ্রামের লালখান বাজারের জামিয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার পরিচালক। তার বাবা মুফতি ইজহার মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন জঙ্গিবাদের প্রচার-প্রসারের উদ্দেশ্যে। মুফতি ইজহার এক সময় হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির ছিলেন। তিনি আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের জঙ্গিদের মধ্যে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ছিলেন।
গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে, আশির দশকে মুফতি হারুন আফগানিস্তানে বোমা তৈরির এমন এক নতুন প্রযুক্তি তৈরি করেছিলেন, যা শনাক্ত করা অসম্ভব ছিল। তার হাতে সেসময় অসংখ্য জঙ্গি প্রশিক্ষিত হয়েছিল। সেই মুফতি হারুন এদেশে জঙ্গিদের অন্যতম ওস্তাদ হিসেবে চিহ্নিত। তার পুত্র হারুন ইজহারও তার হাতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তার মাদ্রাসায় ২০১৩ সালে বোমা তৈরির সময় বিকট বিস্ফোরণ ঘটে প্রাণ হারায় ৩ জন। তারা সেখানে পাইপ বোমা তৈরি করছিল বলে পরবর্তীতে গোয়েন্দা তথ্যে উঠে আসে।
হারুন ইজহারকে লস্কর-ই-তৈয়বা (LeT) এর বাংলাদেশ শাখার নেতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তিনি জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) প্রতিষ্ঠাতা সদস্যও। এই ঘটনাটি তার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের একটি উদাহরণ। তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দূতাবাসে হামলার পরিকল্পনা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগ রয়েছে।
ভারতীয় গোয়েন্দাদের মতে, হারুন ইজহার ও আসিফ নজরুলের বৈঠক বাংলাদেশের জঙ্গি নেটওয়ার্কের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ককে আরও জোরালো করেছে। এই বৈঠকটি কাশ্মীর হামলায় বাংলাদেশের অব্যাহত সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত দেয়, বিশেষ করে বাংলাদেশের ইসলামী সংগঠনগুলোর সমর্থন ও জঙ্গি কার্যক্রমের প্রসারে।
ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও তাত্ত্বিক সিরাজুল হোসেন বলেন, “পাহেলগাঁওয়ের ঘটনা যারা ঘটিয়েছে বাংলাদেশে জুলাই সন্ত্রাস তারাই করেছে, দুটোরই উদ্দেশ্য ভারতকে আক্রমণ।”
ভারতীয় গণমাধ্যম নিউজ১৮-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তানের আইএসআই গত বছরের ৭ই অক্টোবর হামাসের শীর্ষ নেতাদের বাংলাদেশে নিয়ে আসে। হামাসের নেতারা এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। অনুষ্ঠানটি ছিল আল মারাকাজুল ইসলামির আয়োজনে, যা জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট মুফতি শহীদুল ইসলামের প্রতিষ্ঠিত।
মুফতি শহীদুল ১৯৯৯ সালে খুলনায় আহমদিয়া মসজিদে বোমা হামলা চালিয়ে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন। পরে তিনি আফগানিস্তানে চলে যান এবং জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হন।
অক্টোবর মাসে হামাসের শীর্ষ দুই নেতা শায়েখ সালেম কুদ্দুসি এবং শায়েখ খালেদ মিশাল ঢাকায় আসেন। তাদের সঙ্গে পাকিস্তান থেকে আসেন জিহাদিস্ট মুফতি তাকি উসমানি এবং মাওলানা ফজলুর রহমান। গোয়েন্দাদের মতে, হামাস নেতাদের বাংলাদেশে আসার উদ্দেশ্য ছিল ভারতকে অস্থিতিশীল করা।
ভারতের গোয়েন্দাদের তথ্যমতে, মুক্তি পাওয়া হামাস নেতারা পরে পাকিস্তান সফর করেন এবং রাওয়ালপিন্ডিতে নায়কোচিত সম্বর্ধনা পান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শীর্ষ জঙ্গি নেতারা, যেমন তালহা সাইফ, মাসুদ আজহার, আজগার খান কাশ্মীরী এবং মাসুদ ইলিয়াস। পরবর্তীতে তারা পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে যান এবং লস্কর-ই-তৈয়বার সঙ্গে বৈঠক করেন।
গোয়েন্দাদের দাবি, হামাস বর্তমানে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, যার সাথে গত বছরের অক্টোবরে ইসরায়েলে চালানো হামলার সম্পর্ক রয়েছে।