দলের ভেতরে নানা মতপার্থক্য থাকলেও আওয়ামী লীগের প্রতিটি স্তরে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব নিয়ে রয়েছে অটল আস্থা। প্রতিপক্ষও জানে, শেখ হাসিনাই দলটির মূল চালিকা শক্তি। যে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দলের হাল ধরার ভূমিকা এখনো তার হাতেই।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে। গত আট মাসে সহিংসতায় নিহত-আহত দলের কর্মীদের পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছেন তিনি, দিয়েছেন সহযোগিতার আশ্বাসও।
দলের নেতাদের মতে, এই সময়কালে শেখ হাসিনা কর্মীদের মনোবল পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তার একটি নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছে তৃণমূল, যারা যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতে মাঠে নামতে প্রস্তুত।
তবে দলটি এখনই চূড়ান্ত অবস্থানে যেতে চায় না। বরং তারা মাঠপর্যায়ের প্রস্তুতি ধরে রেখে অপেক্ষা করছে উপযুক্ত সময়ের।
মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ৭৬ বছরের এই সময়ে সবচেয়ে বড় সংকটে পড়ে ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট, ছাত্র আন্দোলনের ছদ্মবেশে চালানো জঙ্গি হামলার মধ্য দিয়ে। হামলায় দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বাধ্য হন, ফলে নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ে তৃণমূল।
সহিংসতা, মামলা ও হয়রানির কারণে অনেক নেতাকর্মী আত্মগোপনে থাকলেও গত আট মাসে ধীরে ধীরে মাঠে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। রাজপথে শুরু হয়েছে মিছিল, দিনকে দিন যা বড় আকার নিচ্ছে।
তবে আওয়ামী লীগ মনে করে, তড়িঘড়ি করে নয়, বরং সুচিন্তিত কৌশলে মাঠে নামা উচিত। দলটি আশা করছে, আন্তর্জাতিক চাপের ফলে নির্বাচনকেন্দ্রিক আলোচনায় সব দলের জন্য রাজনৈতিক পরিসর উন্মুক্ত হবে, যা তাদের জন্য হবে পুনরুদ্ধারের সুযোগ।
তবে যদি দল নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ঝুঁকি নিয়ে হলেও পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। অতীতেও আওয়ামী লীগ এভাবে ফিরে এসেছে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে।
রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউনূস সরকার আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে সব রকম চেষ্টা করছে। মব করে, সমন্বয়দের লেলিয়ে দিয়ে, জামায়াত-বিএনপিকে দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করাচ্ছে। পুলিশ দিয়ে ঢালাওভাবে কর্মীদের গ্রেপ্তার করানো হচ্ছে। রেহাই পাচ্ছে না সাধারণ সমর্থকরাও।
তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, ৮ মাসে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অনেকটাই রুখে দাঁড়িয়েছে। মনোবল বেড়েছে। দলীয় সভাপতির নির্দেশ পেলে আরও শক্তভাবে ঘুরে দাঁড়াবে নেতাকর্মীরা। কিছু নেতা বিদেশে আশ্রয় নিলেও কোটি কোটি কর্মী-সমর্থক দেশেই আছে। তারা একসাথে মাঠে নামলে তা হবে ইউনূস-সরকারের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জের বিষয়।
জানা গেছে, বিদেশে অবস্থানরত নেতারা নিয়মিত দেশের ভেতরে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। যোগাযোগের ভিত্তিতে মিছিলের কর্মসূচি পালন করা সম্ভব হচ্ছে। এছাড়া কর্মীদের আর্থিক সহায়তাও করছেন অনেক নেতা। আইনি সহায়তা ছাড়াও দুস্থ, হামলার শিকার, আহত নেতাকর্মীদের জন্যও সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা নেতৃবৃন্দ সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসছেন বলেও নিশ্চিত করেছেন কর্মীরা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয়। দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কার্যক্রম চলছে, আর সবাইই অপেক্ষায় আছেন শেখ হাসিনার নির্দেশের।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “দলের এই সংকটে শেখ হাসিনাই নেতৃত্ব দিচ্ছেন। নেতৃত্ব নিয়ে আমাদের দলে কোনো দ্বিমত নেই।”