বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত টেকনাফ স্থলবন্দর ছিল এক সময়ের সম্ভাবনাময় সীমান্তবাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে চলা আমদানি-রপ্তানির পথ ছিল এটি, যা শুধু কক্সবাজার অঞ্চলের অর্থনীতি নয়, দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাও সমৃদ্ধ করত। কিন্তু ২০২৫ সালে এসে এই বন্দর কার্যত মৃতপ্রায়। এখানে নেই কোনো আমদানি, নেই কোনো রপ্তানি, গুদামে পড়ে আছে কোটি টাকার পচনশীল পণ্য, আর বেকার হয়ে পড়েছে শত শত শ্রমিক। আর এই ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য দায়ী একমাত্র মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সেই অবৈধ দখলদার সরকার, যারা দেশ চালানোর বৈধতা হারিয়েছে অনেক আগেই, আর আজ দেশের প্রতিটি খাতকে একের পর এক গলা টিপে হত্যা করছে।
টেকনাফ স্থলবন্দরে আজ ব্যবসায়ীরা পণ্য রপ্তানি করতে পারছেন না। রাখাইন থেকে আসা সব ধরনের বাণিজ্য কার্যক্রম আরাকান আর্মির অনুমতির উপর নির্ভর করছে। রাষ্ট্রের চরম ব্যর্থতা এবং দুর্বল কূটনীতি যে কীভাবে একটি স্বাধীন দেশের ভূখণ্ডের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিতে পারে, তা টেকনাফ বন্দর তার জ্যান্ত উদাহরণ। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকটের মুখে বাংলাদেশ সরকারের উচিত ছিল একটি শক্ত কূটনৈতিক কণ্ঠস্বর তৈরি করা, আন্তর্জাতিক মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা করে সীমান্তবাণিজ্য চালু রাখার উপায় বের করা। কিন্তু ইউনুস সরকারের নতজানু, অদক্ষ, দলকানা প্রশাসন কেবল চুপচাপ বসে আছে। বিদেশনীতি যেন এখন শুধু ধমক খাওয়া আর ঋণ ভিক্ষা করার মাঝেই সীমাবদ্ধ।
এই বন্দর দিয়ে বছরে কয়েকশ কোটি টাকার রাজস্ব আসত, বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহিত হতো। মার্চ মাসেও প্রায় ৮ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছিল, অথচ আজ সেই বন্দর প্রায় শূন্য। ব্যবসায়ীরা পণ্য নিয়ে গুদামে বসে আছেন, আলু, শুঁটকি, বিস্কুট, পানি — সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গুদামে পড়ে আছে কয়েক হাজার বস্তা পণ্য, যার কোনো ভবিষ্যৎ নেই। একটি কাঠবাহী বোট বিজিবির হেফাজতে, তার কোনো মালিক নেই। আর রাখাইন থেকে এখন কোনো নতুন বোট আসারও সম্ভাবনা নেই। সরকার চুপ, নীতি নির্ধারকেরা চুপ, যেন দেশের এই ধ্বংস তাদের কোনো দায় নয়।
শ্রমিকেরা যারা একসময় দৈনিক হাজিরায় জীবিকা চালাতেন, আজ তারা বেকার। স্থলবন্দরে প্রাণ নেই, শ্রমিকদের মুখে হাসি নেই, ব্যবসায়ীদের চোখে শুধু ক্ষতির হিসাব। অথচ এই সরকার, যাদের একটি চুনোপুঁটি গার্মেন্টস উদ্বোধনের সময় হাজার ক্যামেরা নিয়ে ছবি তোলে, যারা প্রতিটি মেগা প্রজেক্টে মেগা প্রচারণা চালায়, তারা আজ টেকনাফ বন্দর ধ্বংস হয়ে গেলেও কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করে না। কারণ তারা জানে, এই সরকারের ক্ষমতা জনগণের ভোট থেকে আসেনি—তাদের ক্ষমতা বন্দুকের ছায়া আর চক্রান্তের চোরা পথ দিয়ে এসেছে। তাই এই দেশে পচে যাওয়া আলু কিংবা গুদামে পড়ে থাকা বিস্কুট তাদের বিবেচনায় পড়ে না।
আরাকান আর্মির দখলের অজুহাতে সরকার নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে পারে না। কারণ একটি স্বাধীন দেশের জন্য আরেকটি দেশের সীমানা সমস্যার বিপরীতে বিকল্প কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক ব্যবস্থা থাকা উচিত। বাস্তবতা হলো, ইউনুস সরকার কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই চলছে। তাদের রাষ্ট্রচালনা মানে শুধু টিকিয়ে রাখা, কিছু গোষ্ঠীকে সুযোগ দেওয়া আর বাকিদের দমন করা। তাদের কাছে সীমান্তবাণিজ্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, কারণ তাতে লুটপাট নেই, লাইসেন্স বাণিজ্য নেই, কমিশনের খেলা নেই। ফলে টেকনাফ মরুক, কক্সবাজারের অর্থনীতি ধ্বংস হোক, বা হাজারো শ্রমিক না খেয়ে থাকুক—এতে সরকারের কিছু যায় আসে না।
এই অবস্থা শুধু টেকনাফ নয়, বরং সমগ্র বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার এক প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে প্রশাসন অকার্যকর, নেতৃত্ব অবৈধ, পরিকল্পনা দূরের কথা—তথ্যপ্রযুক্তি কিংবা বিদ্যুৎ খাতের মতো সীমান্তবাণিজ্যও এখন চরম অনিশ্চয়তার মুখে। এবং এই পুরো অনিশ্চয়তার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন মোহাম্মদ ইউনুস—একজন গণতন্ত্রবিরোধী, জনগণবিমুখ শাসক যিনি রাষ্ট্রকে নিজের মত করে পরিচালনা করছেন একটি দখলদার দলের মদদে।
আজ টেকনাফের বন্দরে বাতাস বইছে এক ধ্বংসের গন্ধ নিয়ে। সেখানে নেই কোনো গর্জন, নেই কোনো ব্যস্ততা, নেই কোনো ভবিষ্যৎ। এই বন্দরের স্তব্ধতা, এই গুদামের পচা আলু, এই শ্রমিকদের শূন্য চোখ—সব মিলে গড়ে উঠছে সেই প্রশ্ন, যেটা গোটা জাতিকে এখন করতে হবে: আর কত দূর যাবে এই দখলদার সরকারের অপশাসনের মিছিল?