।। আযম খান।।
শেখ হাসিনা আমলে বাংলাদেশের জিডিপি গ্রোথ নিয়ে নানা আলোচনা আছে। বিরোধীরা দাবী করেন এই জিডিপি গ্রোথ দেখানো হয়েছে ডাটা ম্যানিপুলেট করে। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ সরকারের নিয়ন্ত্রনের বাইরে একটা সংস্থা। তাদের সংস্থায় কাজ করেন অসম্ভব কোয়ালিটি সম্পন্ন পলিসি মেকার, গবেষক, একাডেমিশিয়ান এবং এনালিস্টরা। দেখা যাক বিশ্বব্যাংকের ডাটা মোতাবেক বাংলাদেশের জিডিপি (ডলারে) ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কত ছিল—
২০০৮ সালঃ শেখ হাসিনা ক্ষমতা নেয়ার এই টার্মের প্রথম বছরে বাংলাদেশের মোট জিডিপি ছিল ৯২ বিলিয়ন ডলার।
২০০৯ সালঃ দ্বিতীয় বছরে মোট জিডিপি বেড়ে দাঁড়ায় ১০২.৪৮ বিলিয়ন ডলার।
২০১০ সালঃ মোট জিডিপি এই বছরে বেড়ে দাঁড়ায় ১১৫.২৮ বিলিয়ন ডলার।
২০১১ সালঃ মোট জিডিপি এসে দাঁড়ায় ১২৮.৬১ বিলিয়ন ডলার।
২০১২ সালঃ এই বছরের একটু কম বাড়ে। এর অন্যতম কারন সে সময়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে দেশব্যাপী জামাত শিবির এবং বিএনপির যৌথ উদ্যোগে ব্যাপক জ্বালাও পোড়াও চলে। তাও মোট জিডিপি বেড়ে দাঁড়ায় ১৩৩.৩০ বিলিয়ন ডলার।
২০১৩ সালঃ এই বছরের এসে যাবতীয় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা স্বত্ত্বেও মোচ জিডিপি হয় ১৫০ বিলিয়ন ডলার। আমার মনে আছে সে সময়ে পুলিসী পাহারায় রপ্তানী পন্যগুলো বন্দরে পৌছে দেয়া হইতো। তার সুফল হচ্ছে এটা। নেহায়েত ব্যাক্তিগত মতামত।
২০১৪ সালঃ জিডিপির পরিমান এসে দাঁড়ায় প্রায় ১৭৩ বিলিয়ন ডলার।
২০১৫ সালঃ বেশ বড় একটা লাফ চলে এই সময়ে। মোট জিডিপি আসে ১৯৫ বিলিয়ন ডলারে।
২০১৬ সালঃ এটা সম্ভবত সব চাইতে বড় লাফ বিশ্বব্যাংকের ডাটায়— ২৬৫.২২ বিলিয়ন ডলার।
২০১৭ সালঃ এই বছরে জিডিপির লাফালাফি কম পুর্বের বছরের তুলনায়। তাও ২৯৩.৭৩ বিলিয়ন ডলার।
২০১৮ সালঃ নির্বাচনের বছর। কম বেশি গ্যান্জাম হইছে দেশে। সেইসাথে এই বছরে কোটা আন্দোলনের ধাক্কাও গেছে। তাও জিডিপি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২১.৩৬ বিলিয়ন ডলার।
২০১৯ সালঃ এই সময়ে জিডিপি এসে দাঁড়িয়েছে ৩৫১.২৩ বিলিয়ন ডলার।
২০২০ সালঃ কোভিডের প্রথম বছর। অর্থনীতি সামান্য ধাক্কা খায়। যে কারনে আগের মতন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে নাই অর্থনীতি। মোট জিডিপি প্রায় ৩৭৪ বিলিয়ন ডলার।
২০২১ সালঃ কোভিডের দ্বিতীয় বছর। এই বছরে এসে অর্থনীতি তার গতিতে ফিরে আসে। বিশেষত রপ্তানী এবং অভ্যন্তরীন কনজাম্পশন। মোট জিডিপি ৪১৬.২৭ বিলিয়ন ডলার।
২০২২ সালঃ জিডিপি বেড়ে দাঁড়ায় ৪৬০ বিলিয়ন ডলারে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু।
২০২৩ সালঃ মোট জিডিপি এসে দাঁড়ায় ৪৩৭.৪২ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সালে এসে টাকায় জিডিপি বাড়লেও ডলারে কমে যায় কারন হচ্ছে টাকা ডলারের বিপরীতে দূর্বল হয়ে পড়ে, বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার চাপ এবং সরকার এলসি খোলায় কড়াকড়ি নীতি আরোপ করায় আমদানী সংকট শুরু হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক উচ্চ সুদের হার গ্রহন করায় ডলারের মান বেড়ে যায় এবং অনান্য মুদ্রাগুলোর দাম ডলারের বিপরীতে পড়ে যায়।
২০২৪ সালঃ এই সময়ের তথ্য বিশ্বব্যাংকের ডাটায় এখনো প্রকাশিত হয় নাই।
সারমর্ম হচ্ছে, শেখ হাসিনার সরকার একটা ৯০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিকে প্রায় পাঁচগুন বৃদ্ধি করেছেন মাত্র ১৫ বছরে। এই সময়ে সর্বোচ্চ জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ২০১৮ সালে ( ৭.৮৮ শতাংশ)। কোভিডের কারনে লীগ সরকারের আমলে সর্বনিম্ন জিডিপি ছিল ২০২০ সালে (৩.৪৫ শতাংশ)।
এখানে একটা জিনিস খুব ইন্টারেস্টিং যে সে সময়ে কোভিড মহামারি রুখতে বহু কলখারখানা, ব্যাবসা সাময়িকভাবে সারা পৃথিবীর মত বাংলাদেশেও বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। তার প্রভাব পড়েছিল অর্থনীতিতে। দুইদিন আগে বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদন দিয়েছে এই সরকারের সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে মাত্র ৩.৩০ শতাংশ। এটা একটা জিনিসের দিকেই ইঙ্গিত করে। সেটা হচ্ছে কি পরিমানে কলকারখানা এই সময়ে বন্ধ হয়েছে এবং অর্থনীতি কোভিড সময়ের লকডাউনের চাইতেও খারাপ পরিস্থিতির দিকে চলে গেছে। বলা চলে, এখন অর্থনীতিতে আল্ট্রা লকডাউন চলছে।
যাই হোক, উপরের তথ্য-উপাত্তগুলো (২০০৮-২০২৩) হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির উত্থান এবং তুলনামূলক সুদিনের গল্প। এই গল্প বাংলাদেশের কেউ লিখে নাই। লেখা হয়েছে বিশ্বব্যাংক দ্বারা।