।। কবির য়াহমদ ।।
গৃহযুদ্ধপীড়িত মিয়ানমারের রাখাইনের জন্যে করিডর দিতে বাংলাদেশ রাজি হয়েছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। গতকাল রোববার (২৭ এপ্রিল) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুযায়ী রাখাইনে মানবিক করিডর দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ নীতিগতভাবে সম্মত। এটি একটি মানবিক প্যাসেজ হবে। কিন্তু আমাদের কিছু শর্তাবলি আছে। আমি এর বিস্তারিততে যাচ্ছি না। যদি শর্তাবলি পালিত হয়, তবে অবশ্যই আমরা সহায়তা করব।’
বাংলাদেশ সীমান্তে অধিকার পরিবর্তন হয়ে গেছে জানিয়ে উপদেষ্টা তৌহিদ বলেন, ‘এখানে একটি নন-স্টেট অ্যাক্টরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে পুরো সীমান্ত। সেখানে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কাজেই আমাদের নিজেদের স্বার্থে কোনো না কোনো ধরনের যোগাযোগ- অর্থাৎ নন-স্টেট অ্যাক্টরের সঙ্গে আমরা আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করতে পারি না। কিন্তু আমরা চাইলেও বিচ্ছিন্ন থাকতে পারব না।’
খেয়াল করে দেখুন, বাংলাদেশ রাখাইনের জন্যে করিডর দেওয়ার কথা জানিয়েছেন উপদেষ্টা। এই এখতিয়ার কি অনির্বাচিত এই সরকারের আছে? এই সরকারের যে বৈশিষ্ট্য তাতে তাদের রুটিন কাজ ছাড়া আর কিছু করার কথা ছিল না, কিন্তু জুলাই-আগস্টের অস্থিরতা সৃষ্ট সরকার পরিবর্তনের ফলে মানুষ ভুলে গেছে সরকারের মূল দায়িত্ব। রাজনৈতিক দলগুলো এমনই এক মোহে যাতে তাদের কাজ সম্পর্কেও সচেতন নয়।
করিডর কী? এটা নিয়ে কোন আলোচনা কি আছে?
করিডর বলতে এখানে বাংলাদেশের নিজস্ব ভূখণ্ডে মিয়ানমারের রাখাইনের জন্যে এমনই একটা অঞ্চলকে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যাতে রাখাইনের সংশ্লিষ্টরা বিনাবাধায়, বিনা চেকিংয়ে চলাফেরাসহ সবকিছু করতে পারে। এটা কি বাংলাদেশের ভূখণ্ডের অধিকার হারানো নয়? বলা হচ্ছে মানবিক সহায়তার কথা, কিন্তু যে জায়গায় আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই বলে স্বীকার করছেন উপদেষ্টা, সেখানে তারা কীভাবে এর নিয়ন্ত্রণ করবেন?
এটা কি ওই অংশে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ-স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হারানো নয়?
বাংলাদেশের ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার অধিকার এই সরকারকে কে দিয়েছে? বাংলাদেশের ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার অধিকার মুহাম্মদ ইউনূসের এই সরকার কেন, কোন সরকারেরই নাই।
উপদেষ্টা তৌহিদ শর্তের কথা বলেছেন, কিন্তু কী শর্ত সেটা উল্লেখ করছেন না। বলছেন, মিয়ানমারের একটা বিরাট জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে আছে, তাদেরকে আমরা ফেরত পাঠাতে চাই। এই ফেরত দেওয়া নিয়ে কি কোন উদ্যোগ আছে? নাই।
কিছুদিন আগে সরকার থেকে বলা হচ্ছিল, লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। বাস্তবতা হলো উলটো আরও লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থা তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে সরকারকে বলেছে, এবং সরকার সে অনুযায়ী কাজ করছে। অর্থাৎ আগের বোঝা আরও বেশি বাড়ানো হচ্ছে। এর আলোচনা হচ্ছে না বলে দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে সরকার সেটা করে যাচ্ছে।
উপদেষ্টা তৌহিদ বলছেন, একটি নন-স্টেট অ্যাক্টরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে পুরো সীমান্ত। ভয়াবহ তথ্য। অর্থাৎ উপদেষ্টা নিজেই স্বীকার করছেন, সীমান্তে এখন আর বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ নেই। নিয়ন্ত্রণ কি দিয়ে দেওয়া হয়েছে? কীসের বিনিময়ে? কেন দেওয়া হলো? কেন প্রতিক্রিয়া নাই দেশের কোন রাজনৈতিক দলের? কেন গণমাধ্যমে নেই আলোচনা?
মুহাম্মদ ইউনূসের এই সরকার যতই গণ-আন্দোলনের সৃষ্ট সরকার দাবি করুক না কেন; গত সাড়ে ৮ মাসে প্রমাণ হয়েছে তারা ডিপ স্টেটের প্রতিনিধি। কেবল শেখ হাসিনার শাসনের অবসানই ছিল না সরকার পরিবর্তনের উদ্দেশ্য।
বাংলাদেশের সীমান্ত অন্যের হাতে তুলে দেওয়া, বাংলাদেশের একটা অংশ করিডর দিয়ে অন্যের হাতে তুলে দেওয়া, সেন্ট মার্টিনসহ পুরো পার্বত্য অঞ্চল অন্যের হাতে কি তুলে দেওয়া হয়ে গেছে? প্রশ্ন উঠবে এখন। সেন্ট মার্টিনে এখন কেউ যেতে পারে না। সাজেক পুড়িয়ে দিয়ে সেখানে মানুষে যাতায়াত বন্ধ, ফলে ওটা কি বাংলাদেশের অংশ হয়ে আছে–এটা নিয়েও প্রশ্ন জাগছে।
মুহাম্মদ ইউনূসের এই সরকারের জনতার প্রতি কমিটমেন্ট নেই। বিদেশি নাগরিকদের দিয়ে পূর্ণ সরকারের পর্ষদ ও বিভিন্ন কমিটি। ফলে যা হচ্ছে, তার বেশিরভাগই যাচ্ছে বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে।
এমন অবস্থায়ও কি মানুষ চুপ থাকবে? এমন অবস্থায় কি চুপ থাকবে রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে বিএনপি?
বাংলাদেশের সীমান্ত ও বিভিন্ন অঞ্চল অন্যদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার দায় কি এড়াতে পারবে বিএনপি? পারবে না, কারণ বিএনপির নির্বিকার ভাব, সরকারকে বেপরোয়া করে তুলেছে, এবং সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।
ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না; ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করবে না। নিশ্চিত থাকেন। জবাবদিহির সময় আসবে যখন, তখন দেশবিরোধী শক্তিসহ দেশের স্বার্থবিরুদ্ধ কার্যকলাপ দেখেও যারা চুপটি করে বসে আছেন, তাদেরও ক্ষমা করবে না।
দেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি থাকবে কি থাকবে না; সংস্কার-সংস্কার এবং সংস্কার না হলে নির্বাচন হবে না; এই লেবেনচুষ আপনাদের মুখে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে’ আপনারা চুষতে আছেন। আর ওদিকে যে কারণে অতিথিদের আগমন, তারা ঠিকই তাদের প্রভুদের স্বার্থ রক্ষার কাজ করে যাচ্ছে।
দেশ বাঁচাতে ঐক্যবদ্ধ হোন। ঐক্য নির্বাচন আর কারো রাজনীতির অধিকার নিয়ে কেবল নয়, ঐক্য দেশের জন্যে।
মানচিত্রে শকুনের চোখ পড়েছে… রুখে দিন!