ঢাকা, ২৮ এপ্রিল ২০২৫: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের ব্যক্তিগত সচিব (পিএস)দের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে আরও একজনকে সরানো হয়েছে। এ নিয়ে এ পর্যন্ত তিনজন উপদেষ্টার পিএসকে তাদের পদ থেকে অপসারণ করা হলো। এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুকে জুলাই আন্দোলনের ছাত্র সমন্বয়ক এবং উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে উঠা দুর্নীতির অভিযোগগুলোর সত্যতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
সর্বশেষ কর্মকর্মর্তার নাম মুহাম্মদ হাসনাত মোর্শেদ ভূঁইয়া। সড়ক, রেল ও বি দ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের পিএস থাকা অবস্থায় নানা আর্থিক অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্বর্গ গড়ে তোলার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে উপদেষ্টার পিএস পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া
হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে এ নিয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে ।
সূত্রের খবর, সর্বশেষ অপসারিত পিএসের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে, তিনি একটি সরকারি প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়মের মাধ্যমে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন। এর আগেও দুজন পিএসের বিরুদ্ধে অনুরূপ অভিযোগ উঠেছিল, যার মধ্যে একটি ঘটনায় সরকারি সম্পদের অপব্যবহার এবং আরেকটিতে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ ছিল। তবে, এই অভিযোগগুলোর বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক তদন্তের ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে দাবি করা হচ্ছে, জুলাই আন্দোলনের ছাত্র সমন্বয়ক এবং কিছু উপদেষ্টা ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। এই অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে সরকারি প্রকল্পে অনিয়ম, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বজনপ্রীতি এবং ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহার। এই পোস্টগুলো জনমনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে যে সুশাসন ও স্বচ্ছতার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা কি ভঙ্গ হচ্ছে?
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে বলে জানা গেছে, তবে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করেনি। এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের একজন মুখপাত্র সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, “যেকোনো ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে। অভিযোগগুলোর বিষয়ে তদন্ত চলছে এবং দোষী প্রমাণিত হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”
জুলাই আন্দোলনের একজন শীর্ষ ছাত্র সমন্বয়ক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। যদি আমাদের মধ্যে কেউ এমন কাজে জড়িয়ে থাকে, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তবে, অভিযোগগুলো যাচাই না করে গুজব ছড়ানো ঠিক নয়।”
এদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই অভিযোগগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের একজন অধ্যাপক বলেন, “জুলাই আন্দোলনের মূল শক্তি ছিল সাধারণ মানুষের আস্থা। এই ধরনের অভিযোগ সেই আস্থা নষ্ট করতে পারে, যদি সরকার দ্রুত এবং স্বচ্ছভাবে এগুলোর সমাধান না করে।”
এই ঘটনা দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। জনগণ এখন অপেক্ষায় আছে, সরকার এই অভিযোগগুলোর বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয় এবং জুলাই আন্দোলনের প্রতিশ্রুত সুশাসনের পথে দেশ কতটা এগিয়ে যায়।