বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণে দেশের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এবং এনএসআই-কে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাখা হয়েছে বলে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে যুদ্ধরত বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মির জন্য লজিস্টিক সাপোর্ট প্রদানের লক্ষ্যে সীমান্তে করিডোর প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। অথচ এই সিদ্ধান্তে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে কোনো ধরনের পরামর্শ বা তথ্য আদান-প্রদান করা হয়নি, যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুতর ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিজিএফআই এবং এনএসআই-এর দুই কর্মকর্তা জানান, গত পরশু পররাষ্ট্র উপদেষ্টা রাখাইনে করিডোর প্রদানের বিষয়ে বাংলাদেশের সম্মতি প্রকাশের আগ পর্যন্ত এই দুই সংস্থার কোনো কর্মকর্তাই সিদ্ধান্তটি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। এমনকি সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়নি।
বিস্ময় প্রকাশ করে এই কর্মকর্তারা বলেন, “দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তদন্ত সংস্থা হিসেবে জাতীয় নিরাপত্তার এতো গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু সম্পর্কে না জানাটা অস্বাভাবিক এবং উদ্বেগজনক।”
সূত্রমতে, এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে ‘যমুনা’ থেকে নেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস এবং তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা মার্কিন নাগরিক খলিলুর রহমান সরাসরি এই সিদ্ধান্ত নেন। এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একক সিদ্ধান্ত দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও কোনো আলোচনা ছাড়াই সম্পন্ন হয়েছে।
প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো জানিয়েছে, এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ করা হয়নি, এমনকি সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপট বা পরিকল্পনা সম্পর্কেও কিছু জানানো হয়নি।
বিশ্লেষকরা এই ঘটনাকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি বিপজ্জনক নজির হিসেবে দেখছেন।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে এফবিআই বা সিআইএ-কে বাদ দিয়ে যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ অকল্পনীয়। একইভাবে, বাংলাদেশের মতো ভূ-রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর একটি দেশে ডিজিএফআই এবং এনএসআই-এর মতো উচ্চ পর্যায়ের সংস্থাগুলোকে অন্ধকারে রেখে এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ জাতীয় নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।
রাখাইনে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর চলমান সংঘাত ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের এই সিদ্ধান্ত আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক দল এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা এই সিদ্ধান্তের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার দাবি জানিয়েছেন।
এই ঘটনা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার সমন্বয়হীনতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বচ্ছতার অভাবের একটি মারাত্মক চিত্র তুলে ধরেছে। জনগণ এবং রাজনৈতিক মহলের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা এবং প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদানের দাবি উঠেছে।