জাতিসংঘের নেতৃত্বে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক সহায়তা চালু তথা (হিউম্যানিটারিয়ান করিডর) এর প্রস্তাবে সায় দিয়েছে ঢাকা। এটি চালু হলে তাতে লজিস্টিক (কারিগরি) সহায়তা দিতে আগ্রহী বাংলাদেশ। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও রোহিঙ্গা সমস্যাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেনটেটিভ খলিলুর রহমান ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির সঙ্গে আলাপে মঙ্গলবার এমনটা জানান। বলেন, রাখাইনে জাতিসংঘের নেতৃত্বে মানবিক সহায়তার উদ্যোগ নেয়া হলে বাংলাদেশ তাতে কারিগরি সহায়তা দিতে আগ্রহী আছে। আমরা বিশ্বাস করি, জাতিসংঘের সহায়তায় মানবিক সহায়তার মাধ্যমে রাখাইনে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হবে, যা শরণার্থীদের ফেরার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করবে।
এদিকে কেন্দ্র তথা মিয়ানমার সরকারকে বাইপাস করে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত আরাকান বা রাখাইনে এমন করিডরে আপত্তি তুলেছে মিয়ানমারের সরকার। বিষয়টি স্বীকার করে সেগুনবাগিচার দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা রাতে গলমাধ্যকে বলেন, আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশের অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ বিষয়ে ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশকে কূটনৈতিক পত্র দিয়ে আপত্তি জানিয়েছে মিয়ানমারের কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত সামরিক সরকার। আরাকান আর্মিকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ অভিহিত করে বাংলাদেশ কেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে নেপি’ড। শেষ পর্যন্ত দেশটির সরকার করিডর প্রশ্নে বিরোধিতা থেকে সরাসরি বাধা বা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
সরকারের বক্তব্য, অবস্থান স্পষ্ট করতে গিয়ে অস্পষ্টতা!
বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও রোহিঙ্গা সমস্যাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেনটেটিভ খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘ এবং সংশ্লিষ্ট অন্য পক্ষগুলোর সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। তবে মানবিক সহায়তার রুটের বিষয়টি এখনো আলোচনার পর্যায়ে আছে, যা নিয়ে নানা পক্ষের মধ্যে ঐকমত্য হওয়া প্রয়োজন।
প্রসঙ্গত, রাখাইনে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মানবিক করিডর চালুর বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ইতিবাচক মনোভাবের বিষয়টি গত রোববার জনসমক্ষে আনেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘এতটুকু আপনাদের বলতে পারি, নীতিগতভাবে আমরা এতে সম্মত। কারণ, এটি একটি হিউম্যানিটেরিয়ান প্যাসেজ (মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ) হবে; কিন্তু আমাদের কিছু শর্ত রয়েছে, সেই বিস্তারিত বিষয়ে যাচ্ছি না। সেই শর্তাবলি যদি পালিত হয়, আমরা অবশ্যই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।’
নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকেরাও চুলচেরা বিশ্লেষণ আর বাংলাদেশের সব অংশীজনকে যুক্ত করার আগে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া সমীচীন নয় বলে মন্তব্য করেছেন। তাদের মতে, জাতিসংঘ, বাংলাদেশ, মিয়ানমারের সামরিক সরকার এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির এ বিষয়ে একমত হতে হবে। এই চার পক্ষের মধ্যে কোনো একটি পক্ষের ভিন্নমত থাকলে এটি আদৌ বাস্তবায়ন করা সম্ভব কি না, সেটি বড় প্রশ্ন।