।। ফারুক যোশী ।।
সম্প্রতি মিয়ানমারকে বাংলাদেশ হয়ে করিডোর দেয়ার সম্ভাবনা নিয়ে যে আলোচনা শুরু হয়েছে, তা নিছক অর্থনৈতিক বা অবকাঠামোগত কোনো পরিকল্পনা নয়—এটি একটি জটিল ভূ-রাজনৈতিক চক্রান্তের অংশ হতে পারে। এমন একটি সিদ্ধান্ত যদি জনগণের অননুমোদিত, অনির্বাচিত প্রশাসনের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়, তবে এর পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে।
মিয়ানমার বর্তমানে এক সামরিক জান্তার দখলে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর ভয়াবহ নিপীড়নের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত একটি সরকারকে করিডোর দেয়ার অর্থ, সেই রাষ্ট্রের কর্মকাণ্ডকে নীরব সমর্থন দেওয়া। বিশেষ করে যদি এই করিডোর চীনের প্রভাবশালী বাণিজ্য ও সামরিক চ্যানেল হয়ে ওঠে, তবে এটি বাংলাদেশকেও এক নতুন সংঘাতের মুখে ঠেলে দিতে পারে।
এই ধরনের করিডোর যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে, এবং দুই প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার সূত্রপাত হতে পারে। সেইসাথে, দেশের ভেতরেও এই সিদ্ধান্ত গণবিরোধী হিসেবে বিবেচিত হবে, যা রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়াতে পারে।
একটি গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেট ছাড়া এমন গুরুতর জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক সিদ্ধান্ত নেয়া নৈতিকতা ও কৌশলগত বিবেচনায় ভুল। রাজনৈতিক দলগুলোর এই প্রস্তাবের বিরোধিতা জাতীয় স্বার্থের পক্ষেই।
জাতীয় আলোচনার মাধ্যমে সংসদীয় অনুমোদন সাপেক্ষে, আন্তর্জাতিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচনের দিকেই এগুনো প্রয়োজন ।
একটা নির্বাচিত সংসদ কিংবা জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমেই বাংলাদেশ আহবান করুক— করিডোর নয়, স্বাধীন সিদ্ধান্তের রাষ্ট্র হয়েই থাকবে দেশ, ভিনদেশের দাবার চাল হয়ে নয় ।
লেখক: সাংবাদিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক।