লন্ডন, ৪ মে: রাজনীতিক বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ মোদাব্বির আলীর স্মরণসভায় অনুষ্ঠিত হয় আজ রোববার ৪ মে পূর্ব লন্ডনের কর্মাশিয়াল রোডের এন্টারপ্রাইজ একাডেমীর হলরুমে।বিকাল ৭টায় অনুষ্ঠিত এ স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন ব্রিটেনের বিভিন্ন শহর থেকে আগত বিপুল সংখ্যক সুধীজন।
স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান গৌস সুলতান। পরিচালনা আবদুল আহাদ চৌধুরী ও জামাল আহেমদে খান।

প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সাবেক প্রবাসকল্যাণ ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী। প্রধান বক্তা ছিলেন সিলেটের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এছাড়া বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন, আওয়ামীলীগ নেতা জালাল উদ্দিন, আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুকসহ আওয়ামীলীগ যুবলীগ নেতৃবৃন্দ। এছাড়া পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন শাহ মুদাব্বির আলীর ভ্রাতা শাহ ফারুক আহমেদ ও প্রয়াতের কন্যা। আরো বক্তব্য রাখেন প্রয়াতের চাচাতো ভাই শাহ শামীম আহমেদ।
সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন মওলানা জিল্লুর রহমান। এরপর একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদ, বঙ্গবন্ধু ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন উপস্থিত সুধীজন।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন এডভোকেট শাহ ফারুক আহমেদ। স্বাগত বক্তব্যের পর প্রয়াত শাহ মোদাব্বির আলীর ওপর নির্মিত একটি প্রামান্য তথ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এতে প্রয়াতের কর্মময় জীবনের নানা ঘটনা উঠে আসে। বর্ণিল জীবনকে তথ্যচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হলে অনেকই আবেগাপ্লুত হয়ে ওঠেন।
শফিকুর রহমান চৌধুরী তাঁর বক্তৃতায় বলেন, শাহ মুদাব্বির আলী আওয়ামীলীগের সংকটকালে দলের কান্ডারি ছিলেন । তাঁর নির্মোহ নেতৃত্ব আমরা দেখেছি, শিখেছি মানুষকে ভালোবাসার মন্ত্র।
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, তিনি বৃহত্তর সিলেট জেলার শীর্ষ নেতা হয়েও কোন সুবিধাভোগ করেননি। শিক্ষকতা,আইনপেশা, রাজনীতি ও সাংবাদিকতায় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। সর্বক্ষেত্রে তিনি ছিলেন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। শফিকুর রহমান চৌধুরী ও আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী দুই জনই বলেন,এই নির্লোভ ব্যক্তির কর্মময় জীবনকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য কোন ট্রাস্ট করতে চাইলে পূর্ণ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি।

বক্তারা স্মৃতিচারণ করে বলেন, শাহ মুদাব্বির আলী ছিলেন একজন নির্মোহ রাজনীতিবিদ, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের নির্ভিক সৈনিক ও নির্লোভ মানুষ। পরিবারের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে শাহ ফারুক আহমেদ বলেন, শাহ মুদাব্বির আলীর প্রতিবাদী কণ্ঠ আমাদের জন্য ছিল অনুপ্রেরণা। তাকে অনুসরণ করেই আমরা রাজনীতির অঙ্গনে আওয়ামী রাজনীতিতে যুক্ত আছি। শাহ শামীম আহমেদ বলেন, শাহ মুদাব্বির আলীর নির্লোভ রাজনীতি আমাদের নির্লোভ রাজনীতির শিক্ষা দিয়েছে। আওয়ামী রাজনীতি করে আমাদের পরিবারের কেউ কোন দিন দুর্নীতি করেনি। তাকে অনুসরণ করেই আমাদের বিশাল ও পুরো পরিবার বিশ্বনাথে একমাত্র আওয়ামী পরিবার। এই পরিবারে বিএনপি বা জামায়াত কেউ করে না। এই কৃতিত্ব শাহ মুদাব্বির আলীর।

উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ সিলেট শহরে তাঁর নিজ বাসভবনে বাংলাদেশ সময় রাত ৮.১৫ঘটিকায় তিনি ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন।
আজীবন রাজনীতিক এডভোকেট শাহ মোদাব্বির আলী বৃহত্তর সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের (১৯৭২-৭৫)৩ বারের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।সিলেট মহকুমা আওয়ামীলীগেরও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৭৫ বাকশাল গঠিত হলে তিনি সিলেট জেলা বাকশালের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সিলেট জেলা বারের একজন সনামধন্য আইনজীবী। শাহ মোদাব্বির আলী মানিক মিয়া নামে তাঁর পরিচিতি ছিল সর্বাধিক।

শাহ মোদব্বির আলী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি রণাঙ্গনের যোদ্ধাছাড়াও মুক্তাঞ্চল থেকে প্রকাশিত ‘জয় বাংলা’ পত্রিকায় সাংবাদিক হিসাবে কাজ করেন। এছাড়া ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর দেশ শত্রমু্ক্ত হলে বিশ্বনাথ উপজেলার প্রথম প্রশাসক নিযুক্ত হন তিনি।
শাহ মোদাব্বির আলী খ্যাতিমান আইনজীবী, রাজনৈতিক ছাড়াও তিনি সমাজসেবী ও পরোপকারী হিসেবে সর্বমহলে পরিচিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, শাহ মোদাব্বির আলীর গ্রামের বাড়ি বিশ্বনাথ উপজেলার বিখ্যাত ধর্মদা গ্রামের ‘পীরবাড়ি’। তাঁর পূর্ব পুরুষ হজরত শাহজালাল র:এর অন্যতম সঙ্গী ৩৬০ আউলিয়ার মধ্যে একজন সৈয়দ আদম খাকি র:।