প্রিয় দেশবাসী,
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মজয়ন্তীতে কবিগুরুর প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করছি। আপনাদের প্রতি রইল আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।
বিশ্বসাহিত্যের এক বিরল প্রতিভার নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এশিয়ার প্রথম নোবেলজয়ী রবীন্দ্রনাথ এখন পর্যন্ত ভারতীয় উপমহাদেশে সাহিত্যে একমাত্র নোবেলজয়ী লেখক। সাহিত্যের প্রায় সর্বশাখায় তো বটেই সংগীত এবং চিত্রকলায়ও তিনি বাঙালির ভাবজগতকে বিশ্বদরবারে অসামান্য ভাষা ও শৈলীতে প্রকাশ করেছেন। সমাজচিন্তক এবং দার্শনিক হিসেবেও প্রাতঃস্মরণীয়। বাঙালির ভাবশক্তির স্বীকৃতি বিশ্বদরবারে তিনি আদায় করেছেন; তাঁরই পথ ধরে তাঁর দ্বারা অনুপ্রাণিত আরেক প্রবাদপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আদায় করেছেন বাঙালির রাজনৈতিক সত্ত্বার স্বীকৃতি। বাঙালির জাতীয় জীবনে অতুলনীয় দুই ঘটনা।
প্রিয় দেশবাসী,
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন অনিঃশেষ প্রেরণার উৎস ও বাতিঘর। পশ্চিম পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল বাঙালির জীবনধারা, রবীন্দ্রনাথ ছিলেন যার প্রাণভোমরা। পাকিস্তান সরকার ১৯৬৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে তাই রবীন্দ্রচর্চাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। আজকের অবৈধ দখলদার সরকারের শত্রুও দেখা যাচ্ছে অভিন্ন এবং তারা পাকিস্তানী ভাবাদর্শের নানাবিধ প্রকাশ দেখিয়ে অঘোষিতভাবে বাঙালির সংস্কৃতি ও জীবনধারাকে তারা প্রতিনিয়ত আক্রমণ করছে। স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৯ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় বলেছিলেন, ‘আমরা মির্জা গালিব, সক্রেটিস, শেকসপিয়ার, অ্যারিস্টটল, দান্তে, লেনিন, মাও সেতুং পড়ি জ্ঞান আহরণের জন্য, আর সরকার আমাদের পাঠে নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথের লেখা, যিনি একজন বাঙালি কবি এবং বাংলা কবিতা লিখে বিশ্বকবি হয়েছেন। আমরা এ ব্যবস্থা মানি না।’ বঙ্গবন্ধু দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা দেন, ‘আমরা রবীন্দ্রনাথের বই পড়বই, আমরা রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইবই এবং রবীন্দ্রসঙ্গীত এ দেশে গীত হবেই।’ রবীন্দ্রনাথের গানকে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে নির্বাচনের করে বঙ্গবন্ধু সেই ঘোষণারই প্রতিফলন ঘটান।
প্রিয় দেশবাসী,
বিপুল সৃষ্টির পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তৎকালীন পূর্ববাংলা তথা আজকের বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেছেন। প্রজাদের জন্য চালু করেন ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা, সমবায়নীতি ও কল্যাণবৃত্তি। প্রতিষ্ঠা করেন দাতব্য চিকিৎসালয়, হেলথ্ কোঅপারেটিভ্ সোসাইটি ও কৃষি ল্যাবরেটরি। বাংলার কৃষিতে নিয়ে আসেন বৈজ্ঞানিক ও আধুনিক পদ্ধতি। গ্রামীণ সমাজের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করার জন্য প্রতিষ্ঠা করেন ‘শ্রীনিকেতন’। প্রকৃত অর্থে ক্ষুদ্র ঋণের তিনিই উদ্ভাবক।
প্রিয় দেশবাসী,
বাংলাদেশের মানচিত্র আজ খাবলে ধরেছে সেই পুরনো শকুন। দেশের শিল্পসাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা আজ নানাভাবে আক্রান্ত। চতুর্দিক থেকে আস্ফালন করছে একাত্তরের পরাজিত শক্তি। সাংস্কৃতিকভাবে আমাদের পঙ্গু করে দিতে আবারও টার্গেটে পরিণত করা হয়েছে রবীন্দ্রনাথকে। সাম্প্রদায়িক চিন্তার রোষানলে ফেলে বাঙালি জাতিকে শিকড় থেকে উৎপাটনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
সংগ্রামী দেশবাসী,
দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে, যখন আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে, যখন দেশবিরোধী অপশক্তি সুপরিকল্পিতভাবে বাঙালি সংস্কৃতিকে নিষ্প্রাণ করে দিচ্ছে, তখন আমাদের রবীন্দ্রচর্চা আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। কেননা রবীন্দ্রনাথ সব ধরনের ঐক্য ও সম্প্রীতির কথা বলেছেন। তিনি বাঙালি সংস্কৃতির সর্বমানবিক চেতনার উন্মেষ ঘটিয়ে আমাদের আত্মশক্তিকে সুদৃঢ় করার কথা বলেছেন।
মুক্তিকামী দেশবাসী,
বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে একাত্তরের বীর বাঙালির মতো আমাদের আরও একবার ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। এই ক্রান্তিকালে একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের মতো আমাদেরও রবীন্দ্রনাথ থেকে শক্তি ও প্রেরণা নিতে হবে। বাঙালির আত্মপরিচয় ও আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে রাহুর কবল থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে মুক্ত করতে হবে।
বিশ্বকবির ১৬৪তম জন্মজয়ন্তীতে আমি আবারও তাঁর স্মৃতি ও সৃষ্টির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু। আঁধার কেটে ভোর হোক।তারিখ: ০৭ মে ২০২৫